ভেটাগুড়ি : পঞ্চায়েত ভোট ঘিরে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে হিংসার ছবি দেখা যাচ্ছে। কমা তো দূর অস্ত, প্রতিদিন যেন তা বেড়েই চলেছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অভিযোগের তির রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে। বিজেপি, সিপিএম কিংবা কংগ্রেস, প্রায় প্রতিটি দলই এনিয়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে। প্রতিবাদও জানিয়েছে। আর এবার কোচবিহারের ভেটাগুড়িতে দেখা গেল তার উলটপুরাণ ! সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে পথে নামল শাসক দল ! বিজেপির বিরুদ্ধে অভিযোগ তৃণমূলের। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছে গেরুয়া শিবির।


পঞ্চায়েত ভোটের মুখে ফের অশান্ত কোচবিহারের দিনহাটা। ভেটাগুড়িতে নিশীথ প্রামাণিকের এলাকায় বিজেপির বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে পথে নামল তৃণমূল। সকাল ৯টা থেকে কোচবিহার-দিনহাটা রাজ্য সড়ক অবরোধ করেন শাসকদলের কর্মীরা। অবরোধ হঠাতে গেলে পুলিশের সঙ্গে বচসা বাধে তৃণমূল কর্মীদের।


তৃণমূলের অভিযোগ, গতকাল একাধিক প্রার্থীর বাড়িতে গিয়ে হুমকি দেয় বিজেপি। গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। এক তৃণমূল কর্মীকে অপহরণও করা হয় বলে অভিযোগ। প্রতিবাদে আজ সকালে পথ অবরোধ করা হয়। এনিয়ে বিজেপির প্রতিক্রিয়া এখনও মেলেনি।


পঞ্চায়েত ভোটের মুখে কোচবিহার জুড়ে শুধুই সন্ত্রাস। কোথাও তৃণমূল নেতাকে লক্ষ্য় করে গুলি, কোথাও তৃণমূল কর্মীর গলায় ধারাল অস্ত্রের কোপ, কোথাও আক্রান্ত সিপিএম নেতা, কোথাও সিপিএম প্রার্থীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকির অভিযোগ। 


সোমবার দিনহাটা ১ নম্বর ব্লকের গীতালদহ ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রার্থী ডলি খাতুনের স্বামী আজিজুল রহমানকে লক্ষ্য় করে চলে গুলি। তৃণমূলের অভিযোগ, বিজেপির মদতে, নির্দল প্রার্থী ও তাঁর সমর্থকরা হামলা চালিয়েছে। ঘটনার জেরে থমথমে, কোণামুক্তা এলাকা।


অন্য়দিকে, সোমবার গুলিকাণ্ডের পর, রাতে, বড় আটিয়াবাড়ি এলাকায়, তৃণমূল কর্মীর গলায় ধারাল অস্ত্রের কোপ মারে দুষ্কৃতীরা। তৃণমূল প্রার্থীর হয়ে প্রচার সেরে, রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ, বাড়ি ফিরছিলেন, তৃণমূল কর্মী বিনয় বর্মণ। তখনই আচমকা হামলা চালানো হয়। অভিযোগ বিজেপির দিকে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় এমজেএন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে আক্রান্ত তৃণমূলকর্মীকে।তৃণমূলের একাংশের অনুমান, তৃণমূল কর্মী নয়, দুষ্কৃতীদের টার্গেট ছিলেন, তৃণমূল প্রার্থীর স্বামী। 


ভেটাগুড়িতে সিপিএম প্রার্থীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ। কোচবিহার জেলা কমিটির সিপিএমের সদস্য শুভ্রালোক দাস বলেন, 'বিভিন্ন জায়গায় আমাদের কর্মীদের মারধর করা হচ্ছে। হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তৃণমূলের পাশাপাশি, বিজেপি সন্ত্রাস করছে। বাড়ি বাড়ি হুমকি দিচ্ছে। উদয়ন-নিশীথ ২ মন্ত্রীই নেপথ্য়ে আছেন।' যদিও দিনহাটা শহরের বিজেপির মণ্ডল সভাপতি অজয় রায় বলেন, 'আমাদের এখানে মন্ত্রী নিশীথের এলাকা। ভিত্তিহীন অভিযোগ।' এদিকে, হাসপাতাল সূত্রে খবর, অস্ত্রোপচার করে, গুলিবিদ্ধ তৃণমূল নেতার পা থেকে গুলি বের করা গেছে। বর্তমানে তিনি সুস্থ আছেন। 


এই আবহে নিজের বিধানসভা কেন্দ্রে দিনহাটা ২ নম্বর ব্লকে ১২টি গ্রাম পঞ্চায়েতকেই বিরোধী শূন্য করার ডাক দিয়েছেন উদয়ন গুহ। বিরোধী শূন্য ব্লক চাই, ফেসবুকে লিখলেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী। ইতিমধ্যেই দিনহাটা ২ নম্বর ব্লকের ১২টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ৪টিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছে তৃণমূল। বাকি ৮টিও যাতে বিনা যুদ্ধেই দখল করা যায়, ১২ জন অঞ্চল সভাপতির কাছে সেই দাবি জানিয়েছেন তৃণমূল বিধায়ক। ফেসবুক পোস্ট নিয়ে বিতর্ক শুরু হতেই উদয়নের সাফাই, নাতি পরীক্ষা দিলে আমি তো ভাল রেজাল্টই চাইব। বিজেপির কটাক্ষ, এভাবে বিরোধী শূন্য করতে করতে একদিন দিনহাটায় তৃণমূলই শূন্য হয়ে যাবে।