উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়, কলকাতা: আজ ডায়মন্ড হারবার, ব্যারাকপুর-সহ বেশ কয়েকটি আসনে প্রার্থিতালিকা ঘোষণা করেছেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু। জানা গিয়েছে, ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রে এবার সিপিএমের প্রতীকে লড়তে চলেছেন অভিনেতা তথা রাজনীতিবিদ দেবদূত ঘোষ। তাঁর সঙ্গে এক্সক্লুসিভ আলাপচারিতায় এবিপি আনন্দ...


প্রশ্ন: মারপিট করতে পারেন?
উত্তর: মারপিট করার প্রয়োজন পড়বে কেন? প্রশাসন এবং নির্বাচন কমিশন এতটাই নির্লিপ্ত থাকবে যে মারপিটের দিকে যেতেই হবে?


প্রশ্ন: ব্যারাকপুর মানে কিন্তু তার সঙ্গে মারপিটের দীর্ঘদিনের ইতিহাস জড়িত রয়েছে। শুধু অর্জুন সিং বলে নয়, যখন তড়িৎ তোপদার জিততেন তখনও 'বাহুবলি' বলা হত। অর্জুন সিংয়ের সময়ে বার বার মারপিটের কথা উঠে এসেছে। আপনারাই বলেছেন। ফলে ওখানে গেলে একটু মারপিট করতেই হবে...
উত্তর: এটুকু বলতে পারি, আমি ভীত-সন্ত্রস্ত নই। ভিতু মানুষ নই। মানুষের কষ্টের কথা সংসদে পৌঁছে দিতে চাই। আমাদের দলীয় ইস্তেহারে সাধারণ মানুষের সুবিধার জন্য যা যা ঘোষণা করা হয়েছে, বিশেষত এটি যেহেতু শিল্পাঞ্চল এবং যে ২১টি চটকল চালু রয়েছে, সেখানে মানুষ মজুরি ঠিকমতো পাচ্ছেন না, বা যেগুলি বন্ধ হয়ে গিয়েছে তা থেকে শ্রমিকদের যে 'বেনিফিট' পাওয়ার কথা ছিল, তা পাচ্ছেন না, শিল্পের জমিতে যাতে শিল্প হয়--এরকম অনেক বিষয় রয়েছে যেটি মানুষ বুঝতে পারবেন যে মারপিটের থেকে পেটের দিকে...আসল তো হল পেট। খাবারের জোগান না হলে, বিদ্যুতের বিল আমরা এখানে ইউনিট প্রতি ৭টাকা দিচ্ছি আর কেরলে ৩টাকা দিতে হবে, যেহেতু নির্বাচনী বন্ডে ওই সংস্থা অনেক টাকা দিয়েছে...তার পর ওষুধের কথা বলব...। আসলে, এখানকার ৭টা বিধানসভা এলাকার মানুষ মোটেও মারপিট চান না। তাঁরা চান, কাজ ও শান্তির জীবনযাপন।


প্রশ্ন: কিন্তু আপনি মনে করেন, মানুষ ভোট দেওয়ার আগে সত্যি দুর্নীতি, ওষুধের দাম ইত্যাদির মতো বিষয়গুলি নিয়ে ভাবেন?
উত্তর: আমি বিশ্বাস করি, ভাবেন। কিন্তু মানুষ বড় অসহায়, দ্বিধাবিভক্ত, বিচলিত। আমরা এর মধ্যেই তাঁদের বাড়ি বাড়ি যাব। আমাদের প্রচার পদ্ধতি আপনারা জানেন। তাতে তাঁরা কনফিডেন্স পাবেন। এবং গত কয়েকটি ভোটে যেটা দেখা যাচ্ছে, মানুষ নিজের ভোট নিজে দিতে পারছেন না। সেটা পঞ্চায়েত হোক বা পুরনির্বাচন বা বিধানসভা ভোটের সময় দেখলাম। তবে এবার যদি মানুষ ভোট দিতে পারেন, তা হলে ব্যারাকপুরে আমরা অবাক করার মতো ফল দেখতে পারি।


প্রশ্ন:কিন্তু যাঁদের সঙ্গে লড়াই, তাঁরা ওখানকারই ভূমিপূত্র। পার্থ ভৌমিক ওখানকারই এক কেন্দ্রের বিধায়ক, অর্জুন সিং সাংসদ ছিলেন। এই যে দুজন ভূমিপুত্র, আর আপনি যে বাইরে থেকে যাবেন, এই অঞ্চল চেনা-বোঝাতেই তো সময় চলে যাবে?
উত্তর: এটা একটা ভুল ধারণা রয়েছে। আমাদের পার্টিতে কি শুধু আমি লড়ছি? আমিই প্রার্থী? আমাদের যে কমরেড দেওয়াল লিখছেন,যিনি বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটের স্লিপটা দেবেন, যিনি মিছিলের আয়োজন করবেন---আমি তো শুধু বক্তৃতা দেব। সাধারণত মিছিলের পিছনেই হাঁটতে ভালোবাসি, কিন্তু তাঁরাই আমাকে সামনে এগিয়ে দেবেন। আমি তো শুধু জনসংযোগ করব, মানুষের দুঃখ-কষ্টের কথা শুনব। আমাদের কিন্তু পার্টি লড়াই করে। ব্যক্তি এখানে কোনও ফ্যাক্টর নয়। যাঁদের কাছে ব্যক্তি ফ্যাক্টর, তাঁরা ভাববেন।


 


প্রশ্ন:অর্জুন সিং জিতলেন বিজেপির হয়ে, তার পর তৃণমূলে গেলেন, তার পর আবার ফিরে এলেন বিজেপিতে। এই যে রাজনীতি, তার মোকাবিলা করবেন কী করে?
উত্তর:
মানুষ নিশ্চয়ই বুঝতে পারবেন, মূল্যবোধের রাজনীতি কাকে বলে। আমরা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের থেকে এটি শিখেছি। অনেক অপপ্রচার হয়েছে তাঁর সম্পর্কে। ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসছে সেটি। মানুষ জানতে পারছেন, নন্দীগ্রামে কী হয়েছে, সিঙ্গুরে কী রাজনীতি হয়েছে। এই কথাগুলিই মানুষকে বার বার বোঝাব, আমরা সৎপথে উন্নতি করার চেষ্টা করব। মানুষের টাকা দিয়ে পেট ভরাব না। সেই জন্যই জীবন্ত উদাহরণ হিসেবে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের কথা উঠল। না হলে হরেকৃষ্ণ কোঙার, যাঁর দেখানো পথে বাম রাজনীতি, জমিবণ্টন কী ভাবে হবে---তিনি তো সেলুলার জেল খাটা কয়েদি। প্রচারে, হালকাচ্ছলে তাঁদের ক্ষীয়মান দেখানো হয়। দুর্বল দেখানো হয়। চিরদিন মানুষকে বোকা বানানো যায় না...তাঁরা ঠিকই বোঝেন কে তাঁদের কাছের লোক,,,কে তাঁদের কথা সংসদে পৌঁছে দিতে চান। আপনি যদি একটু অ্যাটেনডেন্স শিটটা খোলেন, সংসদে বা এখানে যাঁরা আমাদের বিরোধী রয়েছেন, তাঁদের উপস্থিতি, বিতর্কে তাঁদের অংশগ্রহণ, প্রশ্ন করছেন কিনা, সিএএ নিয়ে প্রশ্ন করেছেন কিনা, তা হলে দেখবেন তাঁদের উপস্থিতি নগণ্য। আর তার পরে নরেন্দ্র মোদি এতদিন একপেশে একটা সংখ্যাগরিষ্ঠতার সরকার চালাচ্ছেন। সেথানে মানুষ নিশ্চয়ই তাঁকে চ্যালেঞ্জ করবেন। মানুষের প্রাত্যহিক জীবন বড় কষ্টে...


         


প্রশ্ন: ধরুন, আপনারা যদি ভোটে জেতেন, তা হলে তো সরকারে আসবেন না। সেই সাংগঠনিক শক্তি নেই। ফলে কতটুকু মানুষের উপকার করতে পারবেন?
উত্তর:
গাছ যেদিন পোঁতা হয়, সেদিনই তো ফলের আশা করে না। ধীরে ধীরে শক্তি সঞ্চয় করে সরকারও গঠন করব। এবং আমার মনে হয়, আমরা যখন কেন্দ্রীয় সরকারকে বাইরে থেকে সমর্থন দিয়েছিলাম তখনই বোধ হয় সাধারণ মানুষের চাহিদাগুলি, যেমন ১০০ দিনের কাজের মজুরি যেটা এই রাজ্যের মানুষ ২০০ টাকা করে পাচ্ছেন অথচ ৩০০ টাকা করে পাওয়ার কথা, এই বার দাবি করেছি ৬০০ টাকা হওয়া উচিত, শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি ২৫ হাজার টাকা হওয়া উচিত, ৬০ বছরের বেশি বয়সিদের পেনশন তাঁদের কী ভাবে মাসিক ৬ হাজার টাকা করা যায়, এগুলির মতো বিষয় আমরা দেখব। তবে স্বাস্থ্য, শিক্ষার মতো বিষয় এই রাজ্যেই আগেই নিখরচায় করে দেখেছিলাম। এটা যদি ভারতের সর্বত্র করা যায়, তা হলে সাধারণ মানুষ একটু শ্বাস নিতে পারবেন। নাহলে, প্রত্যেকদিনের বেঁচে থাকা বিশেষত, নাটক করার জন্য ওই অঞ্চলে নিয়মিত শো করতে যাই। সেখানে গিয়ে যা দেখেছি, সেটা অত্যন্ত দুঃখের। সেটা হল, ১৮-২০ বছর থেকে ৪০ বছর বয়সি কোনও দর্শক নেই। চায়ের দোকানে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, ছবিটা কী। তখন জানলাম, ওই অঞ্চলের ছেলেমেয়েরা ভাগ্যের অন্বেষণে ভিন রাজ্য বা ভিন দেশে চলে গিয়েছে। এই তো পশ্চিমবঙ্গের সার্বিক অবস্থা। এটা কি ব্যারাকপুরের অবস্থা? এটো তো গোটা পশ্চিমবঙ্গের অবস্থা...পরিযায়ী শ্রমিকদের কী পরিণতি হয়েছে। হাঁটতে হাঁটতে ট্রেন লাইনেই ঘুমিয়ে পড়েন তাঁরা।


প্রশ্ন:এই যে কথা, তথ্য ব্যারাকপুরের মানুষ পর্যন্ত পৌঁছবে তো?
উত্তর: 
আমাদের যা সংগঠন রয়েছে, তা কোনও দলের নেই। দুটি বড় দলের ব্রিগেড দেখলাম। আর আমাদের ডিওয়াইএফআই, অর্থাৎ মূলত ছাত্র-যুবরা মিলে যে ব্রিগেডের আয়োজন করেছিল তার ছবিটা দেখলেই বোঝা যায় মানুষ আমাদের সঙ্গে রয়েছেন। আমি বলছি, দীর্ঘদিন হল পশ্চিমবঙ্গের মানুষ নিজের ভোট নিজে দিতে পারেননি। এবার দিতে পারলে ফল উল্টে যাবে।


প্রশ্ন: আপনি আশাবাদী?
উত্তর:
আপনি ভীষণ ভাবে আশাবাদী। নিরাশা নিয়ে বেঁচে থেকে কী লাভ? এভাবে মানুষের জন্য কাজ করা যায় না।


আরও পড়ুন:'ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী নেতাজি', কঙ্গনার মন্তব্যে শুরু বিতর্ক