কলকাতা : '২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী (PM Modi) হওয়ার পর প্রকৃত স্বাধীনতা পেয়েছে ভারত।' এর আগে এমন মন্তব্যে করে দেশজুড়ে বিতর্কের সূত্রপাত করেছিলেন কঙ্গনা রানাওয়াত (Kangana Ranaut)। ফের একবার তাঁর মন্তব্য নিয়ে শুরু হল চর্চা। এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে অভিনেত্রী ও রাজনীতিক কঙ্গনা বলেছেন, 'আমাকে একটা কথা বলুন, আমরা যখন স্বাধীনতা পেয়েছিলাম, ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু কোথায় গেলেন?' তাঁর এই মন্তব্য নিয়ে এবার সরব হলেন ভারত রাষ্ট্র সমিতির কার্যকরী সভাপতি কে টি রামা রাও। এক্স হ্যান্ডেলে দিলেন খোঁচা।


বরাবরই গেরুয়া শিবিরের ঘনিষ্ট হিসাবে পরিচিত কঙ্গনা। আর এবার একেবারে সরাসরি রাজনীতির ময়দানে। হিমাচলপ্রদেশের মাণ্ডি আসন থেকে তিনি লোকসভা ভোটে লড়ছেন বিজেপির টিকিটে। গত ২৪ মার্চ বিজেপি যে ১১১ জন প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছিল, সেই তালিকায় নাম ছিল অভিনেত্রীর। ইনস্টাগ্রাম পোস্টে পরে কঙ্গনা লেখেন, বিজেপিতে যোগ দিতে পেরে তিনি সম্মানিত। তিনি বলেন, "আমার প্রিয় ভারত ও ভারতবাসীর নিজের দল বিজেপির প্রতি আমার সবসময় নিঃশর্ত সমর্থন ছিল। আর আজ বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব আমাকে আমার জন্মস্থান হিমাচল প্রদেশের মাণ্ডি থেকে লোকসভা ভোটের প্রার্থী ঘোষণা করল।"


প্রার্থী হওয়ার পর তিনি জোরদার প্রচারের ময়দানে নেমে পড়েছেন। এরই মধ্যে এক টিভি সাক্ষাৎকারে নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুকে "ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী" বলায় তা নিয়ে বিতর্ক দানা বেঁধেছে। এ প্রসঙ্গে এক্স হ্যান্ডেলে KTR লিখেছেন, "বিজেপির উত্তরের এক প্রার্থী বলছেন সুভাষ চন্দ্র বসু আমাদের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ! আবার দক্ষিণ থেকে এক বিজেপি নেতা বলছেন মহাত্মা গান্ধী আমাদের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ! এই লোকগুলো কোথা থেকে গ্র্যাজুয়েশন করেছেন ?" কংগ্রেস নেতা সুপ্রিয়া শ্রীনেথও কঙ্গনার মন্তব্য শেয়ার করে লিখেছেন, "ওঁকে (কঙ্গনা রানাওয়াত) হালকাভাবে নেবেন না। বিজেপি নেতাদের তালিকায় উনি সামনে চলে যাবেন।"


 






গতবছর কঙ্গনার মতোই মন্তব্য করেছিলেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা কর্নাটকের বিজেপি বিধায়ক বসনগৌড়া পাটিল ইয়াতনাল (Basangouda Patil Yatnal)। তিনি দাবি করেছিলেন, জওহরলাল নেহরু (Jawaharlal Nehru) দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রীই নন, দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী আসলে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু (Subhas Chandra Bose )। সুভাষচন্দ্রের ভয়েই ইংরেজরা দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয় বলেও দাবি করেন তিনি।


ফ্ল্যাশব্যাকে নেতাজি-প্রসঙ্গ -


এই বিতর্কের মধ্যেই উঠে আসছে রাজ্যসভায় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য। গত ৮ ফেব্রুয়ারি সংসদে বক্তব্য রাখার সময় মোদি বলেছিলেন, "আজাদ হিন্দ ফৌজের প্রথম সরকারের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ছিলেন নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু।"  তাঁর এই বিবৃতির কিছু পরেই বিজেপি নেতা কপিল মিশ্র এক্স হ্যান্ডেলে সেই মন্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা করে লিখেছিলেন, "নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ছিলেন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী।" স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী অবশ্য ছিলেন জওহরলাল নেহরু।


১৯৪৩ সালের ২১ অক্টোবর সিঙ্গাপুরে আজাদ হিন্দ সরকার গঠনের ঘোষণা করেছিলেন নেতাজি। সুভাষ চন্দ্রের গঠন করা সেই অস্থায়ী সরকার ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল। তা সে জাপানের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাওয়া হোক বা পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে ভারতের পক্ষে সমর্থন আদায় করাতে। আন্তর্জাতিক স্তরে কার্যত আলোড়ন ফেলে দিয়েছিল আজাদ হিন্দ ফৌজ।
যে আবেগ ভারতবাসীকে আজও শিহরিত করে।


প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০১৮ সালে আন্দামান ও নিকোবরের তিনটি দ্বীপপুঞ্জের পুনরায় নামকরণ করে নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুকে সম্মান জানান। সেখানকার 'রস দ্বীপের' নামকরণ করা হয়- 'নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু দ্বীপ', 'নীল দ্বীপের' নামকরণ করা হয় 'শহিদ দ্বীপ' ও 'হ্যাভলক আইল্যান্ড' এখন পরিচিত 'স্বরাজ দ্বীপ' নামে। প্রসঙ্গত, ১৯৪৩ সালে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে তেরঙা উত্তোলন করেছিলেন নেতাজি।


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।