কলকাতা : রাত পোহালেই অপেক্ষার অবসান।বাংলার বিধান পরিষ্কার হয়ে যাবে ইভিএম খুললেই। বুথফেরত সমীক্ষাগুলির ইঙ্গিত জোড়াফুল ও পদ্মফুল শিবিরের মধ্যে কড়া টক্করের। শেষপর্যন্ত ‘খেলা হবে’-র পালে হাওয়া ভারী হবে নাকি বিপক্ষ শিবির শেষ হাসি হাসবে সেটা জানতেই মুখিয়ে বঙ্গ-বাসী। ‘খেলা’র ফলাফল প্রকাশ পাওয়ার আগে একবার চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক তারকা ‘খেলোয়াড়’ ও তাদের বাজির দিকে। ক্ষমতার গতিপথের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে থাকবে যাদের অনেক-কিছু।


মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-


ক্ষমতা দখলের ঠিক ১০ বছরের মাথায় সবথেকে কঠিন লড়াইয়ের মুখে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০১১ সালের থেকে এবারের লড়াইয়ে পার্থক্য অনেক। সেবারে তৃণমূল সুপ্রিমো ও তাঁর দলের হারানোর কিছু ছিল না। এবারে রয়েছে। কারণ ক্ষমতা ধরে রাখার চ্যালেঞ্জ তাদের। সঙ্গে রয়েছে নতুন সম্ভাবনার হাতছানিও। টানা তৃতীয়বার মসনদের দখল পেলে গোটা দেশে বিজেপি বিরোধী শক্তির কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতে পারবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। হারলে অবশ্য রাজনৈতিকভাবে তাঁর দলকে আরও ভাঙনের মুখেই পড়তে হবে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। কঠিন মঞ্চে ব্যক্তিগত ক্ষেত্রেও শক্ত লড়াই বেছে নিয়েছেন তিনি। তিন দশকের গড় ভবানীপুর ছেড়ে ‘আবেগের টানে’ নন্দীগ্রাম থেকে লড়ছেন।


নরেন্দ্র মোদি ও অমিত শা-


বঙ্গে পদ্ম ফোটানোর লক্ষ্যে নরেন্দ্র মোদি ও অমিত শা জুটি চেষ্টার কোনও কসুর রাখেননি। রাজ্যের প্রায় সব প্রান্তেই সভা, রোড শো করেছেন তারা। বাংলা দখল করতে পারলে আগামী লোকসভার আগে ফের একবার নিজেদের প্রমাণ করতে পারবে মোদি-শা জুটি। তবে হারানোর আশঙ্কা তাদের সামনেও, বঙ্গদখলে ব্যর্থ হলে মোদি-শা’র ক্যারিশমায় ক্রমাগত ভোট জয়ের ধারায় বড়সড় ধাক্কা লাগতে পারে সেক্ষেত্রে।


শুভেন্দু অধিকারী-


রাজ্য রাজনীতিতে নিজের অবস্থান এগিয়ে নিয়ে যেতে শুভেন্দু অধিকারীর কাছে নন্দীগ্রামের লড়াই কার্যত অল অর নাথিং ব্যাটল। নন্দীগ্রামে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তিনি হারিয়ে দিলে নিঃসন্দেহে হয়ে উঠবেন বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী। তবে যদি হেরে যান সেক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে। বিজেপি বাংলার ক্ষমতা দখল করতে পারে কি না সেটাও সমান গুরুত্ব বহন করবে প্রাক্তন এই তৃণমূল নেতার ভবিষ্যৎ ভাগ্য নির্ধারণে।


অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়-


ভোটের প্রচারপর্বের শুরু থেকে বিজেপি শিবির তৃণমূলের এই সাংসদের বিরুদ্ধে ক্রমাগত দুর্নীতির অভিযোগে সরব হয়েছে। অন্যদিকে তেমনই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশাপাশি ঘাসফুল শিবিরের অন্যতম তারকা প্রচারক হয়ে গোটা রাজ্যে ঘুরে বেড়িয়েছেন তিনি। তৃণমূল ক্ষমতা ধরে রাখলে রাজনৈতিক নেতা হিসেবে নিজের অবস্থান একধাক্কায় অনেকটা পাকাপোক্ত করে ফেলতে পারবেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। অন্যদিকে আশঙ্কা, হেরে গেলে একাধিক কেন্দ্রীয় সংস্থার তদন্তের রক্তচক্ষু।


দিলীপ ঘোষ-


রাজ্য বিজেপির সভাপতি হয়েও ভোটে লড়েননি। তবে গেরুয়া শিবিরের হয়ে ময়দানে ছিলেন সবার আগে। গত বিধানসভাতেও বঙ্গে বিজেপি-র কার্যত কোনও চিহ্নই ছিল না, সেখান থেকে গেরুয়া শিবিরকে চ্যালেঞ্জারের ভূমিকায় নিয়ে যাওয়ার অন্যতম কারিগর দিলীপ ঘোষ। তাই ভোটের ফলাফল যাই হোক না কেন রাজ্যস্তরের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে ইতিমধ্যে নিজেকে প্রতিষ্টিত করে ফেলেছেন তিনি। গেরুয়া শিবির ক্ষমতায় এলে আবার খুলে যেতে পারে মুখ্যমন্ত্রীত্বের মসনদে বসার সম্ভাবনা।


সুব্রত মুখোপাধ্যায়-


রাজ্যের মন্ত্রী। তৃণমূল সরকারের অন্যতম হেভিওয়েট প্রার্থী। নিজের গড় বালিগঞ্জে দাঁড়িয়েছেন। রাজনৈতিক বিচারে শক্ত লড়াই এবার। তবে ব্যক্তিগত ও দলগত জয়ে বাড়তে পারে দায়িত্ব।


রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়-


শুভেন্দু অধিকারীর মতোই নজর থাকবে তাঁর উপর। ডোমজুড়ে বিদায়ী বিধায়ক তথা প্রাক্তন বনমন্ত্রীর কাছেও সামনে প্রবল সম্ভাবনা। কেন্দ্রীয় স্তরের বিজেপি নেতাদের বিশ্বস্ত হয়ে ওঠা রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বড় কোনও পদ পেতে পারেন গেরুয়া শিবির ক্ষমতায় এলে।


বাবুল সুপ্রিয়-


একাধিক সাংসদ এবারের বিধানসভা যুদ্ধে নামিয়েছে বিজেপি। যাদের মধ্যে সবথেকে বেশি নজর থাকবে বাবুল সুপ্রিয়র দিকে। টালিগঞ্জে শক্ত পরীক্ষার সামনে তিনি। তিনি নিজে ও রাজ্যে তাঁর দল জিতলে বাবুল পেতে পারেন গুরুত্বপূর্ণ পদ। রাজ্যে প্রথমবার দুই সাংসদ পাওয়ার সময় বাবুল সুপ্রিয়কে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী করেছিলেন নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহরা।


২৯৪ আসনের বাংলার বিধানসভায় আট দফায় ভোট হয়েছে ২৯২ আসনে। সব পক্ষই দাবি করেছে ‘খেলা’-র ফলাফল হবে তাদের পক্ষেই। শেষপর্যন্ত শেষ হাসি কাদের হয়, সেই লাখ টাকার প্রশ্নের উত্তর মিলবে আর কয়েক ঘণ্টা পরই।