কৃষ্ণেন্দু অধিকারী ও সোমনাথ দাস, কলকাতা : 'সৌজন্য' বিতর্ক থামার যেন কোনও লক্ষণই নেই। প্রথমে 'ক্লোজড চ্যাপ্টার' বললেও, পরে সেই প্রসঙ্গেই নাম না করে ঘাটালের বর্তমান প্রার্থী ও দলের বিদায়ী সাংসদ দেবকেই তীব্র কটাক্ষ ছুড়ে দিলেন কুণাল ঘোষ। 'আমরাও সৌজন্যের বৃষ্টিপাত দেখিয়ে দেব', বলে দেবকে নিশানা করলেন তৃণমূল নেতা। এই ইস্যুতে প্রতিক্রিয়া দিলেন দেবও।
এর আগে দেবের মুখে মিঠুন চক্রবর্তীর প্রশংসা, তারপর তা নিয়ে দেবকে কুণাল ঘোষের আক্রমণ নিয়ে যে টানাপোড়েন তৈরি হয়েছিল, তাকে প্রথমে 'ক্লোজড চ্যাপ্টার' বলেও, পরে নাম না করে সেই দেবকেই তীব্র কটাক্ষ করতে ছাড়লেন না কুণাল ঘোষ।
এবিপি আনন্দের অনুষ্ঠানে এসেই দেব বুঝিয়ে দেন তিনি মিঠুন চক্রবর্তীকে 'গদ্দার' বলে আক্রমণের বিরুদ্ধে। এরপরই দেবের অবস্থান নিয়ে সরব হন কুণাল ঘোষ। তিনি বলেছিলেন, "আমি দেখেছি সাংসদ-অভিনেতা-নায়ক দেব একটি মন্তব্য করেছে যে মিঠুন চক্রবর্তী তাঁর বাবার মতো, আরও কিছু মন্তব্য রয়েছে। এবং আরও মন্তব্য যে গদ্দার শব্দ তিনি সমর্থন করেন না। আর দেব, তিনি অভিনেতা, তাঁদের যদি ইন্ডাস্ট্রির স্বার্থে, এই ধরনের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করার, ব্যক্তিগত সৌজন্য, উদারতা এগুলো দেখানোর রাইট থাকে, তাহলে বাকি যাঁরা রয়েছি, তাঁরা সবাই মিলে ব্যক্তিগত সৌজন্য উদারতা আমরা আরম্ভ করে দিই সেগুলো। সেখান থেকে তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের বিরোধিতা করে ঘুরে ঘুরে কুৎসা করছেন। আর তাঁর সঙ্গে দেবরা সিনেমার নাম করে গিয়ে গলাগলি করবেন এটা হতে পারে না কখনও। আমি এর তীব্র বিরোধিতা করছি। দেব ভাল ছেলে, কিন্তু ওঁর একার সৌজন্য... এই সৌজন্যের কপিরাইটটা দেবের নেই।"
এর উত্তরে 'সৌজন্যে'র সুরেই দেব বলেছিলেন, "আমার মনে হয় প্রতিটা মানুষ তাঁর মতো করে রাজনীতি করেন, কুণালদা তাঁর মতো করে রাজনীতি করছেন, এটা কুণালদারও দোষ নয়। আমার মনে হয় না কুণালদা কিছু ভুল করবে সেটা ঠিক করার মতো আমার ক্ষমতা আছে?"
বুধবারও ফের এই প্রসঙ্গে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি কুণাল ঘোষ। তিনি বলেন, "মিঠুন চক্রবর্তীকে দেব বাবার মতো বলেছেন। মিঠুন চক্রবর্তী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে ব্যক্তিগত আক্রমণ করছেন। তবে হ্যাঁ, দেব আমাকে ফোন করেছিলেন। তিনি বলেছেন, ব্যক্তিগত সৌজন্য ইত্যাদি ভোটের সময় তিনি ...এই ধরনের বিবৃতি আর দেবেন না। ফলে, আমি বলছি চ্যাপ্টার ক্লোজড। কিন্তু বারবার এই ধরনের ঘটনাগুলো দেখা যায়। তাতে মনে হয়, তৃণমূলের তিন-চারজন যাঁরা সিনেমা করেন তাঁরা হচ্ছেন বিরাট উদার। আর বাকিরা আমরা সংকীর্ণ-মনা। যাঁরা সিনেমা করেন তাঁরাই হচ্ছেন উদার। তাঁরা অভিনয় করবেন। প্রিমিয়ারে ডাকবেন। ফটোশ্যুটে গলা জড়াবেন। কিডনি দান করবেন। কেউ পরিচালক হয়ে অভিনেতা হিসাবে নেবেন। আর বাকিরা সব আমরা সংকীর্ণমনা। তো আমরাও সৌজন্যের বৃষ্টিপাত দেখিয়ে দেব। আর নাহলে দল সকলকে একসঙ্গে থামাক।"
এদিনই কুণাল ঘোষকে রাজ্য় সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে সরিয়ে দেয় তৃণমূল। দেব বলেন, "আমার মনে হয়, আমার যা করার আমি করেছি। ওঁর যা বলার উনি বলেছেন। আজকে যা হয়েছে সেটা দুঃখজনক। আমার একটাই কথা, সৌজন্য অ্যাক্টিং করে হয় না। সেটা ভিতর থেকে আসা উচিত। সৌজন্য ও গদ্দারির মধ্যে পার্থক্যটা বুঝতে হবে। আমি এটা বলছি না, আমি গদ্দার বা উনি গদ্দার। এটাই বলছি, যেভাবে রাজনীতি চলছে, সেখানে আমার মনে হয় একটা মিনিমাম সেল্ফ রেসপেক্ট, একটা মিউচুয়াল রেসপেক্ট সবার প্রতি থাকা উচিত।"
সব মিলিয়ে এ নিয়ে বিতর্ক থামার এখনই কোনও লক্ষণ নেই।