আমদাবাদ: বিধায়ক হয়েও দলীয় কার্যালয়ের বাইরে বসে থাকতেন প্লাস্টিকের চেয়ারে। নাম ধরে চেনেন দলের প্রত্যেক কর্মীকে। সরকারি হিসেবে প্রবীণের দলে চলে গেলেও, রাজনৈতিক জীবনে বিতর্কে তেমন জড়াননি কখনও। গুজরাতে তাই ভূপেন্দ্র পটেলের (Bupendra Patel) উপরই আস্থা  নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi) এবং অমিত শাহের (Amit Shah)। বিধানসভা নির্বাচনে (Gujarat Assembly Elections 2022) এখনও বাকি থাকলেও, ফলাফল পক্ষে গেলে ভূপেন্দ্রকেই ফের মুখ্যমন্ত্রী করার ঘোষণা করে দিলেন অমিত শাহ


সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলে গুজরাতে ফের ভূপেন্দ্রই মুখ্যমন্ত্রী, জানালেন শাহ


বিজয় রুপাণি দায়িত্ব ছাড়ার পর, গত বছর সেপ্টেম্বরে গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী হন ভূপেন্দ্র। তার পর এক বছরও পেরোয়নি। তাঁর আমলে মারকাটারি কিছু করে দেখিয়েছে এমনও নয়। কিন্তু গুজরাতে ভূপেন্দ্রর সরকার আদতে মোদি-শাহের রবার স্ট্যাম্পে চলে বলে মত রাজনীতিকদের। তাঁদের দাবি, যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেন মোদি-শাহই। ভূপেন্দ্রর কর্তৃত্ব জাহির করার অভীপ্সা নেই। বরং যা নির্দেশ আসে, বিনা বাক্যব্যয়ে তা সম্পাদন করেন। তাতেই ভূপেন্দ্রকে মোদি-শাহের নেক নজরে রয়েছেন বলে একমত বিজেপি নেতৃত্বও।


সেই কাটাছেঁড়ার মধ্যেই মঙ্গলবার শাহ জানিয়ে দিলেন, গুজরাতে বিজেপি ফের সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলে, মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে অধিষ্ঠিত থাকবেন ভূপেন্দ্রই। একটি অনুষ্ঠানে শাহ বলেন, “গুজরাতে বিজেপি সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলে, ভূপেন্দ্র পটেলই পরবর্তী মূখ্যমন্ত্রী হবেন।”


নয়ের দশক থেকে পৌরসভা স্তরের রাজনীতিতে মোটামুটি সক্রিয় ছিলেন ভূপেন্দ্র। কিন্তু প্রথম বার বিধায়ক হন অনেক দেরিতেই, ২০১৭ সালে। ঘাডলোদিয়া থেকে কংগ্রেসের শশীকান্ত পটেলকে পরাজিত করেন ১ লক্ষ ১৭ হাজার ভোটের ব্যবধানে। কিন্তু ভূপেন্দ্র মুখ্যমন্ত্রী হতে পারেন, তখনও পর্যন্ত কেউ কল্পনা করতে পারেননি। এমনকি তাঁর নিজের পরিবারের সদস্যরাও নন।


আরও পড়ুন: World Population: ৪৮ বছরেই দ্বিগুণ ! ৮০০ কোটি ছাড়াল পৃথিবীর জনসংখ্যা, পরের বছরই চিনকে টপকাতে পারে ভারত


রুপাণি পদ ছাড়লে ২০২১-এর ১২ অক্টোবর দলীয় বৈঠকে ডাক পেয়েছিলেন ভূপেন্দ্রও। সেই মতো বাড়ি থেকে বেরনোর সময় ছেলে সম্পত্তি কেনাবেচার ব্যবসায়ী অনুজের মুখোমুখি হন তিনি। ছেলে জানতে চান, এতে তাঁর কোনও লাভ হবে কি আদৌ! গা ছাড়া উত্তর দিয়েই বেরিয়ে যান ভূপেন্দ্র। কিন্তু রাতে বাড়ি আসতে আসতেই ঘটে যায় বিস্ফোরণ। ভূপেন্দ্র মুখ্যমন্ত্রী হচ্ছেন বলে গমগম করে ওঠে টেলিভিশনের স্ক্রিন। তাতে অবাক হয়ে যান বাড়ির লোকজনও।


এর আগে, পৌরসভার দায়িত্ব সামলালেও, মুখ্যমন্ত্রিত্বের মতো গুরু দায়িত্বের ধারেকাছেও কখনও পাওয়া যায়নি ভূপেন্দ্রকে। রাজনীতিতে হাঁকডাকও বিশেষ শোনা যায়নি কখনও। তাই তাঁর মতো ‘অনভিজ্ঞ’ কেউ পদে বসছেন জেনে, অবাক হয়ে যান বিজেপি-র কর্মী-সমর্থকরাও।


দেশের বৃহত্তম দল, যারা কিনা কেন্দ্রেরও ক্ষমতায় আসীন, সেই দলের সদস্য হয়েও ভূপেন্দ্রর মধ্যে আত্মপ্রচার, ক্ষমতা জাহির করার জিগির নেই বলে একমত দলীয় সদস্যরাও। নেতাসুলভ ভাবমূর্তি গড়ে তুলতে কুর্তা-পাজামা নয়, শার্ট-প্যান্টেই স্বচ্ছন্দ তিনি। পাটিদার পরিচয়ও বাকিদের থেকে এগিয়ে রেখেছে তাঁকে। এখনও পর্যন্ত যে সমালোচনায় সবচেয়ে বিদ্ধ হতে হয়েছে তাঁকে, তা হল, মোদি-শাহের হাতের পুতুল তিনি। তাতে ভূপেন্দ্র রাজনীতিক শিখরে পৌঁছতে না পারলেও, তাঁকে সামনে রেখে মোদি-শাহ গুজরাতে রাজপাট অনায়াসে চালিয়ে যেতে পারবেন বলে মত রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদেরও।


সম্প্রতি গুজরাত সফরে গিয়েছিলেন শাহ। নিয়ম মাফিক, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানিয়ে, সঙ্গে করে মঞ্চ পর্যন্ত নিয়ে আসাই প্রত্যাশিত ছিল। কিন্তু শাহ পৌঁছনোর আধ ঘণ্টা আগেই সভাস্থলে পৌঁছে যান ভূপেন্দ্র। দলের সব কর্মী যখন রয়েছেন, নিজেকে বিজেপি কর্মী ছাড়া অন্য কিছু ভাবতে চাননি ভূপেন্দ্র। প্রতি সোম-মঙ্গল নিজের দফতরে ‘জনতা দরবার’-এর আয়োজন করেন ভূপেন্দ্র। সাধারণ মানুষ সেখানে নিজেদের অভাব-অভিযোগ নিয়ে বিনা বাধায় যেতে পারেন।


বিতর্কহীন, মোদি-শাহের অনুগত, নেতৃত্বের নেক নজরে ভূপেন্দ্র


এ সব নিয়ে কোনও ররকম প্রচারও নেই তাঁর। সংবাদমাধ্যমে প্রায় ধরাই দেন না। সভা-মিছিলে ভাষণ দেওয়ায় অনীহা তাঁর। বড্ড জোর ১০ মিনিটই কোনও সভায় কথা বলবেন। দিল্লির নেতৃত্বকে টপকে কোনও বিষয়ে মন্তব্য পর্যন্ত করেন না। যে কারণে মুদ্রা বন্দরে বিপুল পরিমাণ মাদক উদ্ধার হোক, বা সাংবাদিক নিগ্রহ, বিলকিস বানোর ধর্ষকদের মুক্তি হোক, বা গরবা অনুষ্ঠানে ঢোকার দায়ে মুসলিম যুবকদের গণপ্রহার, সব ক্ষেত্রেই নীরব ছিলেন তিনি। তাই প্রকাশ্য সভায় খোদ মোদিও তাঁর প্রশংসা না করে পারেন না বলে মত রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের।