আমদাবাদ : গুজরাতে (Gujrat Assembly Election 2022) সপ্তমবার ক্ষমতায় এসে, পশ্চিমবঙ্গে (West Bengal) বামেদের (Left) রেকর্ড ছুঁল বিজেপি। তবে ১৯৯৫ সালে প্রায় দেড় বছর সরকারের বাইরে থাকায়, এরাজ্যে বামেদের ৩৪ বছরের রেকর্ড আপাতত অক্ষত থাকছে। কারণ, এই দফায় গুজরাতে পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকার পরও, বিজেপি সরকারের বয়স হবে ৩২ বছর।


রেকর্ড পে রেকর্ড 


গুজরাত বিধানসভা ভোটের ফলাফল একাধিক রেকর্ড ভেঙে তছনচ করে দিয়েছে। ২৭ বছরের বিজেপি জমানার সর্বোচ্চ আসন তো বটেই, গুজরাতে এবার বিজেপি যত আসন পেয়েছে, তা সর্বকালের সর্বোচ্চ। সেই সঙ্গে গুজরাতে বাংলার রেকর্ডও ছুঁয়েছে বিজেপি। 


বামেদের টানা ৭


১৯৭৭ থেকে ২০১১ সাল অবধি টানা ৭ বার ভোটে জিতে পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় এসেছিল বামেরা। এবার নিয়ে গুজরাতেও টানা ৭ বার জিতল বিজেপি। গেরুয়া শিবিরের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের বলেছেন, 'আমরা সিপিএমের রেকর্ড ভেঙেছি। ওরা সাত বার জিতেছিল। গুজরাতে আমরা সাতবার জিতলাম'। 


প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ট্যুইট করেছেন, ধন্যবাদ গুজরাত। ভোটের অভাবনীয় ফল দেখে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। মানুষ উন্নয়নের রাজনীতিকে বেছে নিয়েছে এবং বুঝিয়ে দিয়েছে, তারা এই ধারাকেই এগিয়ে নিয়ে যেতে চায়। গুজরাতের জনশক্তির সামনে মাথা নত করছি। পরে বিজেপির সদর দফতরে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, ''গুজরাত নে তো কামাল কর দিয়া....'


অটুট বামেদের রেকর্ড


তবে এরাজ্যে বামেদের ৩৪ বছর ক্ষমতায় থাকার রেকর্ড এখনও অটুট। কারণ, গুজরাতে ৭ বার ক্ষমতায় এলেও এই দফায় ৫ বছর ক্ষমতায় থাকার পর, বিজেপি সরকারের বয়স হবে ৩২ বছর। ১৯৯৫ সালে গুজরাতে প্রথমবার একক ভাবে সরকার গড়েছিল বিজেপি। 


কিন্তু, ১৯৯৬ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে ১৯৯৮ সালের ৪ মার্চ অবধি তাদের সরকারের বাইরে থাকতে হয়েছিল। ১৯৯৫ সালে গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন বিজেপির কেশুভাই পটেল। ৭ মাসের মাথায় তাঁকে সরিয়ে নিয়ে আসা হয় সুরেশ মেহতাকে। এরপর গুজরাতে টালমাটাল পরিস্থিতি তৈরি হয়। ১২১ জন বিধায়ক থাকলেও বিদ্রোহের চাপে সে রাজ্যে বারবার মুখ্যমন্ত্রী বদললায়। ৫ বছরে কেশুভাই ও সুরেশ ছাড়া মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন শঙ্করসিন বাঘেলা এবং দিলীপ পারিখ। শেষ ২ জন বিজেপি ছেড়ে রাষ্ট্রীয় জনতা পার্টি গড়ে মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন। দুই সরকারের মাঝে ২৭ দিন রাষ্ট্রপতি শাসনও ছিল এই রাজ্যে। পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করে ১৯৯৮ সাল থেকে। সেবার ১১৭ আসন পায় বিজেপি। আবারও মুখ্যমন্ত্রী হন কেশুভাই। তবে তিনি সেবারও ৫ বছর টিকতে পারেননি। ২০০১ সালে তাঁকে সরিয়ে মুখ্যমন্ত্রী করা হয় নরেন্দ্র মোদিকে। 


আরও পড়ুন-কংগ্রেসের কু-শাসন না দেখেও প্রত্যাখ্যান করেছে যুব সম্প্রদায়ের ১ কোটি' গুজরাতে পদ্ম-রেকর্ডে খোঁচা মোদির


২০০২ সালে ১২৭ আসন নিয়ে আবারও ক্ষমতায় ফেরে বিজেপি। সেই থেকে একার জোরে গুজরাতে টানা ক্ষমতায় রয়েছে বিজেপি। কিন্তু, ছেদ পড়েছিল শুধু মাঝের ওই দেড় বছরে। যার জেরে এবার সপ্তমবারের জন্য ক্ষমতায় এলেও, এই দফার শেষে সরকারের বয়স হবে ৩২। তবে পশ্চিমবঙ্গকে বাদ দিলে, ৩২ বছর টানা ক্ষমতায় থাকার রেকর্ডও কোথাও নেই। অন্যদিকে, যে রাজ্যে কংগ্রেস একসময় রেকর্ড আসনে জিতেছিল, সেখানে এবার সবচেয়ে খারাপ ফল হয়েছে তাদের। পরিসংখ্যান বলছে, ১৯৮৫ সালের পর গুজরাতে কোনও বিধানসভা ভোটে জেতেনি কংগ্রেস। বিধায়ক সংখ্যা ১৯-এর নিচে নেমে যাওয়ায় বিরোধী দলের মরযাদাও হারাতে চলেছে তারা।


গুজরাতের ফল নিয়ে রাহুল গাঁধী ট্যুইট করেছেন, গুজরাতবাসী যে রায় দিয়েছেন, তা বিনম্রভাবে মেনে নিচ্ছি। আমরা নতুন করে সংগঠন সাজাব, কঠোর পরিশ্রম করব এবং সাধারণ মানুষের অধিকারের লড়াই জারি রাখব।