কলকাতা: ভোটের দিন ও তারপর এমন ঘটনা ঘটলে, গণনার পরে কী হবে? বাঘাযতীনকাণ্ড নিয়ে মন্তব্য কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতির। পুলিশের আরও সক্রিয় হওয়া উচিত ছিল বলেও অসন্তোষ প্রকাশ। অন্যদিকে, শুক্রবারই মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের সঙ্গে দেখা করে ক্ষতিপূরণের দাবি জানান ভোট-সন্ত্রাসে আক্রান্তরা।


বাঘাযতীনকাণ্ডে আক্রান্তদের অভিযোগে যে আশঙ্কার সুর ছিল, এবার কার্যত তা-ই শোনা গেল কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতির গলাতেও। শুক্রবার বাঘাযতীন-মামলার শুনানিতে বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত সরাসরি সরকারি আইনজীবীর উদ্দেশে বলেন, পুলিশের আরও সক্রিয় হওয়া উচিত ছিল। আমি আশঙ্কা করছি, ভোট ও তার পরবর্তী সময়ে যদি এধরনের ঘটনা ঘটে, তাহলে গণনা ও তার পরবর্তী সময়ে কী অভিযোগ আসতে পারে!

বিচারপতির পর্যবেক্ষণের প্রেক্ষিতে সরকারি আইনজীবী এদিন বলেন, আমাদের পুলিশ সক্রিয় ছিল। দ্রুততার সঙ্গে তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেমেছে। মামলার তদন্তও চলছে। সেজন্য যা যা করণীয়, করছি।

কিন্তু, বিচারপতি এতে বিশেষ সন্তুষ্ট হননি। বরং তিনি স্পষ্ট নির্দেশ দেন, আদালতের অনুমতি ছাড়া পুলিশের পিকেট তোলা যাবে না। যত সংখ্যক পুলিশ সেখানে বহাল আছে, ততজনই থাকবেন।

৩০ এপ্রিল ভোট মিটতে না মিটতেই রাতের অন্ধকারে বাঘাযতীনে সিপিএমের উপর হামলার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। এরপরই নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে ভোট-পরবর্তী হিংসা রুখতে ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে মামলা করেন বাঘাযতীনের আক্রান্ত সিপিএম নেতার মা মায়ারানি ঘোষ। তিনি প্রশ্ন তোলেন, কমিশনের আশ্বাসের পর ভোট দেওয়ায় বাড়িতে ভাঙচুর হলে কেন এর ক্ষতিপূরণ দেবে না নির্বাচন কমিশন?

একই দাবিতে শুক্রবার মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দ্বারস্থ হন ভোট-সন্ত্রাসের শিকার বহু মানুষ। তার মধ্যে ছিলেন হালিশহর এবং হরিদেবপুরে আক্রান্ত দুই শিশুর মা-ও। তাঁদের দাবি, ভোট-সন্ত্রাসে জখম এবং ঘরছাড়াদের আর্থিক সাহায্য দেওয়া কমিশনের দায়িত্ব।

আক্রান্তদের সঙ্গে কমিশনে যান বিরোধীরাও।

তাঁদের দাবি, এই দাবি দিল্লিতে জানাবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক।
বস্তুত যেদিন বাঘাযতীনকাণ্ড নিয়ে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করল হাইকোর্ট, সেদিনই বিরোধীদের ওপর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হামলার ঘটনার খবর উঠে এল। অভিযোগ সেই শাসকদলের বিরুদ্ধেই।

উত্তর ২৪ পরগনার খড়দা থেকে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিং বা পূর্ব মেদিনীপুরের পটাশপুর। ভোটের ফল প্রকাশের এক সপ্তাহ আগেও বিভিন্ন জায়গায় বিরোধীদের ওপর আক্রমণের অভিযোগ তৃণমূলের বিরুদ্ধে। অন্যদিকে, আমডাঙায় সিপিএম কর্মীর ওপর গুলি চালানোর ঘটনায় চার তৃণমূল সমর্থককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

বেলেঘাটায় যখন আক্রান্ত প্রতিবন্ধী, ক্যানিংয়ে তখন ব্লেডের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত কিশোরের পিঠ। ভোট দেওয়ার বয়স ওদের না হলেও, ভোট-সন্ত্রাস থেকে রেহাই নেই ওদের।

সিপিএম করার অপরাধে নিমাই সাঁপুই নামে এক ব্যক্তিকে গ্রামের নলকূপ থেকে জল নিতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, প্রতিবাদ করায় ওই সিপিএম কর্মী ও তাঁর স্ত্রীকে বেধড়ক মারধর করা হয়। ব্লেডের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত করে দেওয়া হয় সিপিএম কর্মীর ১৫ বছরের নাতির পিঠ।

তৃণমূল অবশ্য পুরো বিষয়টিকে পারিবারিক বিবাদ বলে উড়িয়ে দিয়েছে।

বিরোধীদের ওপর আক্রমণ নেমে এসেছে অন্যান্য জায়গাতেও।

সন্ত্রাসের অভিযোগ পেয়ে পটাশপুরে গেলে, জোট প্রার্থী মাখনলাল নায়েককে মারধরের অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে। শাসক দল অবশ্য জোট প্রার্থীর বিরুদ্ধেই পাল্টা প্ররোচনা সৃষ্টির অভিযোগ তুলেছে।

সিপিএম কর্মীর বিউটি পার্লারে ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। স্থানীয় সূত্রে খবর, খড়দার শান্তিনগর পানশিলা এলাকায় একটি বিউটি পার্লার চালান সিপিএম সমর্থক বুলা সেনগুপ্ত। শুক্রবার দুপুরে দোকান বন্ধ করে স্বামীকে নিয়ে ব্যাঙ্কে যান তিনি। অভিযোগ, সেই সুযোগে তাঁর পার্লারে ভাঙচুর চালায় তৃণমূলকর্মীরা। শাসক দলের নেতারা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

অন্যদিকে, উত্তর ২৪ পরগনার আমডাঙায় সিপিএম কর্মীকে গুলি করার ঘটনায় চার তৃণমূল সমর্থককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এর মধ্যে তিনজনকে ৫ দিনের পুলিশ হেফাজতে পাঠিয়েছে আদালত। একজনকে ১৪ দিনের জেল হেফাজত। তবে আমডাঙার তৃণমূল প্রার্থী রফিকুর রহমানের ভাই আনিসুর রহমানের নাম এফআইআরে থাকলেও, তাকে পুলিশ এখনও ধরতে পারেনি।

আমডাঙার তৃণমূল প্রার্থী রফিকুর রহমানের অবশ্য দাবি, এই ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির কোনও যোগ নেই।

এক সপ্তাহ পর ভোটের ফল ঘোষণা। এখনই এই অবস্থা হলে, গণনার পর কী হবে! আশঙ্কায় ভুগছেন অনেকেই।