কলকাতা: একসময় শোভন-রত্না ছিলেন রাজ্য রাজনীতির হিট জুটি! কিন্তু তাঁরাই আজ একে অপরের বিরুদ্ধে গোলাবর্ষণ করে চলেছেন। ঠিক যেমনটা, অধুনা বিজেপি নেতা শোভনের সঙ্গে তরজা তুঙ্গে উঠেছে তৃণমূলের মন্ত্রী-সাংসদদের। গত বছরের জানুয়ারিতে উত্তর ২৪ পরগনার দমদমে এসেছিলেন অভিনেত্রী রবীনা ট্যান্ডন। তখন মঞ্চে ‘তু চিজ বড়ি হ্যায় মস্ত মস্ত’ গানের সঙ্গে কোমর মেলাতে দেখা যায় সৌগত রায়কে। মঙ্গলবার এ নিয়ে কটাক্ষ করেছিলেন শোভন চট্টোপাধ্যায়। বলিউডি হিট গানের সঙ্গে সৌগতর কোমর দোলানোর প্রসঙ্গ টেনে বলেন, কলেজে কোনওদিন ক্লাস করে না!
বুধবার পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় তৃণমূলের অধ্যাপক সাংসদ বলেন, আমি দমদমের সাংসদ। সেখানে রবীনা ট্যান্ডন এসেছিলেন। ব্রাত্য বসুও ছিল। মোহরা সিনেমার নাচ নাচে। তু চিজ বড়ি হে মস্ত মস্ত। আমায় ডাকলেন। বললেন, পা মেলান। আমি মিলিয়েছি। দমদমের মানুষ কোনও আপত্তি করেনি। কারণ তারপর আমি জিতেছি। আমরা যারা জনজীবনের সঙ্গে থাকি, তাদের এসব করতে হয়। আর শোভন কতদূর পড়াশোনা করেছে যে, আমার অধ্যাপনা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে! আমি আশুতোষ কলেজ থেকে অবসর নেওয়ার পর দিন থেকে এখনও পরিচালন সমিতির সভাপতি। যেখানে সব দলের অধ্যাপকরা আছেন। কেউ আপত্তি করেননি।
এছাড়া সৌগতর ভোটের টিকিট পাওয়া নিয়েও বাগযুদ্ধ চরমে উঠেছে। শোভন প্রয়াত প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির নাম টেনে তাঁর কাছে সৌগত টিকিটের জন্য তদ্বির করেন বলে অভিযোগ তুলেছেন। পাল্টা সৌগত আজ বলেন, কোন ব্যাপারে প্রিয়দার ঘরে বসে ছিলাম, আমি জানি না । প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি আমাদের নেতা ছিলেন। তাকে মানতুম। প্রিয়দা মনে করেছিলেন, আমার আলিপুর থেকে দাঁড়ানো উচিত। টিকিট দিয়েছিলেন। জিতেও ছিলাম। তারপর যখন তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিই, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, আলিপুর থেকে টিকিট দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না, একটা বিকল্প আসন ভাবুন। তারপর ঢাকুরিয়া থেকে। শোভনের মনে রাখা উচিত, তিনটি জায়গা থেকেই আমি জিতেছিলাম। আলিপুর, ঢাকুরিয়া, বনগাঁ। এটা আমার কৃতিত্ব। বোঝার ক্ষমতা নেই শোভনের।
কলকাতার প্রাক্তন মেয়র ছিলেন শোভন। তার পদত্যাগের পর ফিরহাদ হাকিমকে মেয়র পদে বসান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রাক্তন ও বর্তমান মহানাগরিকের তরজাও এই মহূর্তে তুঙ্গে উঠেছে।
শোভনের দাবি, টিকিট চাইতে মমতার বাড়িতে লোক পাঠিয়েছিলেন, প্রণব মুখোপাধ্যায়ের কাছেও টিকিট চাইতে গিয়েছিলেন ফিরহাদ। পাল্টা আজ ফিরহাদ বলেন, আমি প্রথম দিন থেকে তৃণমূলে। শোভন পরে এসেছে। আলিপুরের মানুষ আবদার করতেই পারে। আবেগে যেতেই পারে। কিন্তু আমি যাইনি। আমার বাড়িতেও তো প্রচুর লোক আসে। আর আমি আমার জন্য কোনদিন কিছু চাইনি। শোভন যা জেনেছে, তা ভুল। কিন্তু এর জন্য তো আমি দল ছাড়িনি। প্রণবদার বাড়িতে কংগ্রেসের টিকিট চাইতে আমি যাইনি। বাড়িতে এমনিতেই গেছি। মমতাদির কাছেও কোন দিনটি টিকিট চাইনি। ও আসলে অন্যের দিকে তাকিয়ে থাকে। যেটা আছে তার দিকে তাকায় না।
শোভন বিজেপিতে সক্রিয় হওয়ার পর মুখ খুলেই মমতা সহ তৃণমূলের প্রথম সারির নেতাদের আক্রমণ করতে শুরু করেছেন। পাল্টা জবাব দিতে ছাড়ছে না তৃণমূলও।
ভোটের আগে ফের একবার উঠে এসেছে চিটফান্ড প্রসঙ্গ। আর এখন যে চিটফান্ড ইস্যু ঘিরে রাজ্য রাজনীতি এখন সরগরম, তার শুরুটা ২০১৩ সালে, সারদাকাণ্ড সামনে আসার পর। সারদার কর্ণধার সুদীপ্ত সেন এখনও জেলে। তার লোভের ফাঁদে পা দিয়ে, বহু মানুষ সর্বস্বান্ত হয়েছেন, অনেকের মৃত্যু পর্যন্ত হয়েছে। সেই মানুষগুলো আজও অপেক্ষায় রয়েছেন, যদি টাকা ফেরত পাওয়া যায়। অন্যদিকে, জেলবন্দি অবস্থাতেই এবিপি আনন্দকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এনিয়ে সাফাই দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন সুদীপ্ত সেন।
তবে জেলবন্দি যে কোনও অভিযুক্তই নিজের পক্ষে সাফাই দেওয়ার চেষ্টা করে। তার অর্থ কখনওই এটা নয় যে, তিনি কিছুই জানতে না বা বুঝতে পারেননি। সবাই তাঁকে দিয়ে সবটা করিয়ে নিয়েছে। যে সংস্থার নয়ছয়ে হাজার হাজার মানুষ নিঃস্ব হয়েছে, তাতে সেই সংস্থার কর্ণধার সুদীপ্ত সেনের ভূমিকা খতিয়ে দেখছে গোয়েন্দা সংস্থা। কবে মামলার নিষ্পত্তি হবে? কবে আমানত ফেরত মিলবে? হা পিত্যেশ করে বসে আছেন অসংখ্য মানুষ।
চিটফান্ড ইস্যুর পাশাপাশি অধিকারী পরিবারের সঙ্গে তৃণমূলের টানাপোড়েন ঘিরেও রাজ্য রাজনীতি এখন তোলপাড়।
তু চিজ বড়ি হ্যায় মস্ত মস্ত! পা মিলিয়েছি, ভোটেও জিতেছি, শোভনকে পাল্টা সৌগতর
ওয়েব ডেস্ক, এবিপি আনন্দ
Updated at:
14 Jan 2021 07:38 AM (IST)
কলকাতার প্রাক্তন মেয়র ছিলেন শোভন। তার পদত্যাগের পর ফিরহাদ হাকিমকে মেয়র পদে বসান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রাক্তন ও বর্তমান মহানাগরিকের তরজাও এই মহূর্তে তুঙ্গে উঠেছে।
NEXT
PREV
নির্বাচন ২০২৩ (elections) লেটেস্ট খবর এবং আপডেট জানার জন্য দেখুন এবিপি লাইভ। ব্রেকিং নিউজ এবং ডেইলি শিরোনাম দেখতে চোখ রাখুন এবিপি আনন্দ লাইভ টিভিতে ।
- - - - - - - - - Advertisement - - - - - - - - -