সন্দীপ সরকার ও ময়ূখ ঠাকুর চক্রবর্তী, কলকাতা: ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ছেড়া চটি-জুতো! পড়ে আছে জামা-কাপড়ের টুকরো! শুধু প্ল্যাটফর্ম নয়, রেললাইন থেকেও মিলেছে এরকম নমুনা।


বুধবার রাতে মুর্শিদাবাদের নিমতিতা স্টেশনে বোমা বিস্ফোরণের অভিঘাত যে কতটা মারাত্মক ছিল, বৃহস্পতিবার সকালের ছবিগুলিই তা বলে দিচ্ছে। কিন্তু কীভাবে বিস্ফোরণ, কী বোমা ব্যবহার করা হয়েছিল? কাদের নিশানায় ছিলেন শ্রমপ্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন? অভিযুক্তদের ধরতে সিআইডি-কে তদন্তভার দিয়েছে রাজ্য সরকার। পাশাপাশি স্পেশাল টাস্ক ফোর্স গঠন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।


বুধবার রাতের ঘটনার পর প্রথমে আজিমগঞ্জ জিআরপি তদন্ত শুরু করে। শ্রমপ্রতিমন্ত্রীর এক সঙ্গীর অভিযোগের ভিত্তিতে, খুনের চেষ্টার অভিযোগে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০৭ নম্বর ধারা, অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের অভিযোগে ১২০-র বি, গুরুতর আঘাতের কারণে ৩২৬ নম্বর ধারা এবং বিস্ফোরক আইনে মামলা রুজু হয়েছে। তবে ঘটনার গুরুত্ব বুঝে জিআরপি-র থেকে তদন্তভার নেয় সিআইডি।


এদিন সকাল ৮টায় ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায় সিআইডি-র বম্ব স্কোয়াড। বেলা ১২টা নাগাদ যান সিআইডি-র অফিসাররা। প্ল্যাটফর্ম ও রেললাইন থেকে নমুনা সংগ্রহ করেন তাঁরা। ফটোগ্রাফির সঙ্গে ভিডিওগ্রাফিও করা হয়। স্নিফার ডগ নিয়ে তল্লাশি চালানো হয় স্টেশন চত্বরে। বুধবার রাতে ঘটনার পর থেকেই নিমতিতা স্টেশন দিয়ে ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।স্টেশনের চারদিকে মোতায়েন রয়েছে আরপিএফ। বিস্ফোরণের মুহূর্তের এই ভিডিও দেখলেই বোঝা যাচ্ছে, মন্ত্রীর একেবারে সামনেই বোমাটি ফাটানো হয়েছে। সিআইডি সূত্রে খবর, ঘটনার সময় তোলা মোবাইল ফোনে ভিডিও সংগ্রহ করা হচ্ছে। খতিয়ে দেখা হচ্ছে আশপাশে সিসিটিভি ফুটেজ।দুষ্কৃতী যদি একেবারে সামনে থেকে বোমা ছুড়তো, তাহলে তাঁর নিজেরও জখম হওয়ায় সম্ভাবনা থাকত। মুখ্যমন্ত্রীর অনুমান, দূর থেকে রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে বোমা ফাটানো হয়েছে।


মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘রিমোট কন্ট্রোলে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। মন্ত্রীর ভাগ্নে এই কথা বলছেন। আমারও তাই মনে হচ্ছে।’’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই আশঙ্কাকে হাতিয়ার করেই ঘটনায় এনআইএ তদন্তের দাবি তুলেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। সিবিআই তদন্তের দাবি তুলেছেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধির চৌধুরী বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী যদি মনে করেন রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে বিস্ফোরণ তাহলে এক্ষুনি এনআইকে তদন্তভার দেওয়া উচিত ৷’’


বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন,মন্ত্রী আক্রান্ত হলে, বাংলার মানুষের কী অবস্থা?


 মুর্শিদাবাদের প্রাক্তন পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর বর্তমানে তৃণমূল নেতা। তিনিও মনে করছেন, খুব শক্তিশালী বোমা ব্যবহার করা হয়েছে নিমতিতায়। বোমায় জখম শ্রমপ্রতিমন্ত্রী ও তাঁর বেশ কয়েকজন সঙ্গীর (মোট ১৫) চিকিৎসা চলছে এসএসকেএম-এ। এদিন তাঁদের দেখতে যান মুখ্যমন্ত্রী।


হাসপাতালের তরফে জানানো হয়েছে, ৬ সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড গঠন হয়েছে ৷ মন্ত্রীর দু’টি পায়ের অনেকটা ঝলসে গিয়েছে ৷ বাঁ পায়ের গোড়ালির হাড়-সহ আরও দু’টি হাড় ভেঙেছে ৷ ছিড়ে গিয়েছে একটি ধমনীও। ডান হাতের একটি আঙুলের একাংশ উড়ে গিয়েছে ৷ ক্ষতি হয়েছে বুড়ো আঙুলেরও।শরীরের অনেক জায়গায় ইন্টার ইনজিউরি রয়েছে।অস্ত্রোপচারের পর মন্ত্রীকে সিসিইউ-তে রাখা হয়েছে।আপাতত স্থিতিশীল রয়েছেন তিনি। 


এসএসকেওমের প্লাস্টিক সার্জারির বিভাগীয় প্রধান গৌতম গুহ বলেন,অস্ত্রোপচার করে বাঁ পায়ের ছেড়া ধমনী জোড়া লাগানো হয়েছে। ধাতব পাত দিয়ে জোড়া হয়েছে ভাঙা হাড়। আরও কয়েকটি অস্ত্রোপচার করা হবে। ঝলসে যাওয়া অংশ স্কিন ড্রাফটিং করা হবে। বোমায় আহত আরও তিনজনের পা এবং একজনের হাতের একাংশ উড়ে গেছে। একজনের পা ও হাতের একাংশ বাদ পড়েছে। মন্ত্রী ছাড়াও তাঁর এক আত্মীয় ও দুই সহকর্মীর অস্ত্রোপচার হয়েছে।