নয়াদিল্লি: নির্বাচনী প্রচার চলাকালীন নিগ্রহের শিকার কংগ্রেসের লোকসভা প্রার্থী কানহাইয়া কুমার (Kanhaiya Kumar Assaulted)। এবারের লোকসভা নির্বাচনে উত্তর-পূর্ব দিল্লি থেকে কানহাইয়াকে প্রার্থী করেছে কংগ্রেস। এই মুহূর্তে নির্বাচনী প্রচার নিয়েই ব্যস্ত জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রনেতা কানহাইয়া। সেই আবহেই শুক্রবার তাঁর উপর হামলা হয়। নিগ্রহের পাশাপাশি কালিও ছিটনো হয় কানহাইয়াকে লক্ষ্য করে। (Lok Sabha Elections 2024)
শুক্রবার উত্তর-পূর্ব দিল্লির উসমানপুরে আম আদমি পার্টির নতুন দলীয় কার্যালয়ে স্নীয় কাউন্সিলরের সঙ্গে বৈঠক ছিল কানহাইয়ার। সেখান থেকে বেরনোর সময় তাঁকে ছেঁকে ধরে ভিড়। কেউ গলায় মালা পরান, কেউ আবার ছবি তোলার চেষ্টা করেন। সেই সময়ই সাত-আটজন কানহাইয়ার উপর চড়াও হন বলে অভিযোগ সামনে এসেছে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় যে ভিডিও সামনে এসেছে, তাতে দেখা গিয়েছে, ভিড় ঠেলে কানহাইয়াকে ফুলের মালা পরাতে এগিয়ে যাচ্ছেন এক ব্যক্তি। কাছাকাছি পৌঁছতেই কানহাইয়াকে সপাটে চড় কষান তিনি। চারপাশের লোকজন কিছু বুঝে ওঠার আগে আরও বেশ কয়েক বার কানহাইয়ার গায়ে হাত তোলেন তিনি। কানহাইয়ার দিকে উড়ে আসে কালিও। পরে যদিও তাঁকে ধরে ফেলেন অনেকে।
ভিডিও-য় যে যুবককে কানহাইয়ার উপর হাত তুলতে দেখা যায়, তিনি ও বাকি হামলাকারীরা বিজেপি-র লোক এবং তাঁরা উত্তর-পূর্ব দিল্লির বিজেপি সাংসদ মনোজ তিওয়ারির শাগরেদ বলে অভিযোগ তুলেছে কংগ্রেস এবং কানহাইয়ার সহযোগীরা। মনোজের দফতর থেকে অভিযোগ অস্বীকার করা হলেও, মনোজের সঙ্গে হামলাকারী যুবকের ছবি সামনে এসেছে। মসজিদ চত্বরে অশান্তি পাকানোর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার অভিয়োগে এর আগে গাজিয়াবাদ পুলিশ ওই যুবককে গ্রেফতার করেছিল বলেও জানা গিয়েছে। আগ্নেয়াস্ত্র হাতে তাঁর একাধিক ছবিও সামনে এসেছে নেট দুনিয়ায়।
আম আদমি পার্টির ব্রহ্মপুরীর কাউন্সিলর ছায়া গৌরব শর্মা এই ঘটনায় থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, কর্তারনগরে সাত-আটজন কানহাইয়ার উপর চড়াও হন। তাঁর গায়ে কালি ছিটনোর পাশাপাশি মারধরও করা হয়। ধাক্কাধাক্কিতে তিন জন মহিলা আহত হন এবং এক মহিলা সাংবাদিক নর্দমায় পড়েও যান বলে জানিয়েছেন ছায়া গৌরব। তিনি বলেন, "একটি বৈঠকে মনোজ তিওয়ারির ঠিক পাশে বসেছিলেন হামলাকারী যুবক। এদিন কানহাইয়াকে বাঁচাতে ছুটে গেলে আমাকে এবং আমার স্বামীকে খুনের হুমকিও দেওয়া হয়।" ঘটনার সময় দিল্লি পুলিশ নিযুক্ত PSO-ও উপস্থিত ছিলেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
এই ঘটনায় উত্তর-পূর্ব দিল্লির DCP জয় তিরকে জানান, অভিযোগ পেয়েছেন তাঁরা। মালা পরিয়ে কানহাইয়াকে মারধর এবং কালি ছোড়ার ঘটনা ঘটেছে বলে জানতে পেরেছেন। ঘটনাস্থল থেকে যে ভিডিও সামনে এসেছে, তার সত্যতা যাচাই করে দেখা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। হামলার পর কানহাইয়া বলেন, "এই ধরনের নোংরামিতে ভয় পাই না আমি। কিছু কিছু জায়গায় সীমা লঙ্ঘন করা যায় না। আর রাজনীতিতে মহিলাদের উপর হামলা একেবারেই কাম্য নয়। এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করছি।" মনোজের উদ্দেশে কানহাইয়া বলেন, "আমি কোনও অপরাধ করে থাকলে গ্রেফতার করুন আমাকে। কিন্তু গুন্ডা পাঠিয়ে ভয় দেখাবেন না।" এভাবেই সুরত এবং গাঁধীনগরে বিরোধী প্রার্থীদের ভয় দেখানো হচ্ছে বলেও দাবি করেন কানহাইয়া।
যদিও মনোজের দফতর থেকে বলা হয়, "উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে হারতে চলেছেন কানহাইয়া, তাই এসব গুজব ছড়ানো হচ্ছে। এই ধরনের সঙ্কীর্ণ বিষয় নিয়ে মাথা ঘামাই না আমরা। নিজের হতাশা থেকে প্রতিদ্বন্দ্বীর নামে বদনাম করে, টুকরে টুকরে গ্যাংয়ের সদস্য কানহাইয়া উত্তেজনা তৈরি করতে চাইছেন।" তবে বিষয়টি নিয়ে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে কংগ্রেস।