কলকাতা: বিজেপির হাতে ছিল রাজ্যের শাসন। বিধানসভা ভোটে সেই রাজ্য ধরে রাখতে চেষ্টার কোনও কসুর করেনি বিজেপি। একাধিক হিন্দুত্ববাদী এজেন্ডা সামনে রেখে প্রচার রয়েছে। নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহ, যোগী আদিত্যনাথের মতো তারকা প্রচারক মাঠে নেমে একের পর এক সভা করেছেন। তবুও শেষ পর্যন্ত ভোটের ময়দানে কংগ্রেসের কাছে হারতেই হল পদ্ম শিবিরকে। কিন্তু কেন? ঠিক কী কী কারণে মুখ থুবড়ে পড়ল বিজেপি, আর জয়ী হল কংগ্রেস?


প্রদেশ নেতায় ভরসা:
কর্নাটকের নির্বাচনে আগাগোড়া প্রদেশ কংগ্রেস নেতার উপর ভরসা করেছে কংগ্রেস হাইকমান্ড। সে রাজ্যের প্রচার, কী কী ইস্য়ুতে প্রচার হবে সব রাশ ছিল প্রদেশ কংগ্রেসের হাতেই। 


মাস-লিডার:
ডি কে শিবকুমার এবং সিদ্দারামাইয়া এই দুজনেই কর্নাটক কংগ্রেসের এমন ২ নেতা যাঁরা জননেতা হিসেবেই পরিচিত। ফলে তাঁদের পরিচিতি, নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা এবং জনপ্রিয়তা কংগ্রেসের পালে হাওয়া দিতে সাহায্য করেছে।


দূরে সরানো গিয়েছে দ্বন্দ্ব:
কর্ণাটকের রাজনীতিতে কান পাতলে শোনা যায় সিদ্দারামাইয়া এবং ডি কে শিবকুমারের মধ্যে দ্বন্দ্বের চোরাস্রোতে-র কথা। কিন্তু, ভারত জোড়ো যাত্রার সময় থেকে এই দুই নেতাকে একসঙ্গে ময়দানে নামাতে সক্ষম হয় কংগ্রেস নেতৃত্ব। তারপর থেকেই এই দুই নেতা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়েছেন। কর্ণাটকের মাটি চষে তাঁরা প্রচার করেছেন। ১৩৬ জন প্রার্থীকে জিতিয়ে এনেছেন। নিজেরাও নিজেদের কেন্দ্র থেকে বড় ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন।


দুর্নীতি ইস্যু:
কর্নাটকের বিদায়ী বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির একাধিক প্রচার ছিল। সেই ইস্যু বারবার প্রচারে সামনের সারিতে নিয়ে এসেছেন প্রদেশ কংগ্রেসের এই দুই কান্ডারী।


কংগ্রেসের আশ্বাস:
এই বিধানসভা নির্বাচনে একাধিক আশ্বাস দিয়েছে কংগ্রেস। মহিলাদের জন্য মাসিক ভাতা চালু, বেকারদের জন্য ভাতা চালু, সরকারি বাসে মহিলাদের বিনা টিকিটে ভ্রমণ-সহ একাধিক আশ্বাস রয়েছে। যা সাধারণ ভোটারদের কংগ্রেসের দিকে ঝুঁকিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।


ভারত জোড়ো যাত্রা:
এই নির্বাচনের কিছুদিন আগেই কর্নাটকের উপর দিয়ে ভারত জোড়া যাত্রা নিয়ে গিয়েছিলেন রাহুল গাঁধী। সেখানে বিপুল জনসমর্থন মিলেছিল। ভোটের আগে যা বড়সড় সুবিধা দিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। পাশাপাশি ভোটপ্রচারেও এসেছেন রাহুল। বাসে উঠে, বাইকে চড়ে অভিনব প্রচার করেছেন।


লিঙ্গায়েত-ভোক্কালিগা সমীকরণ:
ইয়েদুরাপ্পাকে সরিয়ে দেওয়ায় লিঙ্গায়েতদের একটা বড় অংশ বিজেপির থেকে মুখ ফিরিয়েছে বলে ভোটের ফল দেখে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। সেই ভোট গিয়েছে কংগ্রেসের ঝুলিতে। ভোক্কালিগাদের একটি অংশও জেডিএসের বদলে বেছে নিয়েছে কংগ্রেসকে।


ওবিসি-সংখ্যালঘুদের ভরসা:
কর্নাটকে জাতপাতের রাজনীতি কোনও অংশে কম নয়। সব দিকেই নজর দিয়েছিল বিজেপি। এছাড়া হিজাব বিতর্কের মতো ঘটনার পরে সংখ্যালঘুদের বড় অংশও ভরসা রেখেছে কংগ্রেসের উপর।


এই কারণগুলির জন্য়ই এবার দক্ষিণের রাজ্যে কংগ্রেসের বাজিমাত বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।