কলকাতা: কলকাতা পুরভোটে (Kolkata Municipal Election 2021) কেন্দ্রীয় বাহিনী চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের (Supreme Court) দ্বারস্থ হল রাজ্য বিজেপি (BJP)। এখন যেহেতু ছুটি চলছে, সেজন্য সুপ্রিম কোর্টের অবসরকালীন বেঞ্চে জরুরি ভিত্তিতে শুনানি চেয়ে আবেদন জানানো হয়েছে বলে বিজেপি সূত্রে জানা গেছে। সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে আবেদন বিজেপির। দল সূত্রে খবর, আবেদনপত্র পাঠানো হয়েছে প্রধান বিচারপতির কাছে।


উল্লেখ্য, গতকালই কলকাতা হাইকোর্টে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে কলকাতা পুরভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের আর্জি খারিজ হয়ে গিয়েছে। এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার কথা গতকালই জানিয়েছিল বিজেপি।


এর আগেও সুপ্রিম কোর্টে একই আর্জিতে গিয়েছিল বিজেপি। এ সংক্রান্ত মামলা হাইকোর্টেও চলছিল। তাই তখন বিজেপির আর্জি ফিরিয়ে দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। তাদের এ ব্যাপারে হাইকোর্টে যেতে বলেছিল আদালত। 


‘কেন্দ্রীয় বাহিনী (Central Forces) ছাড়াই হবে কলকাতার পুরভোট, ’ গতকাল সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশই কার্যত বহাল রেখে জানিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্টের  প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন ডিভিশন বেঞ্চ।তবে কলকাতার পুরভোটের ওপর নজর রাখবে কলকাতা হাইকোর্ট।


ভোটের নিরাপত্তা নিয়ে আদালতে দেওয়া প্রতিশ্রুতি কি রাজ্য সরকার ও রাজ্য নির্বাচন কমিশন রক্ষা করছে? তা দেখার জন্য পুরভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনী চেয়ে বিজেপির করা মামলা বিচারাধীন রেখেছে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ।  



রবিবার কলকাতায় পুরভোট।বিজেপি চাইছে কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ভোট হোক।রাজ্য নির্বাচন কমিশন ভরসা রাখছে রাজ্য পুলিশের ওপর।এই পরিস্থিতিতে শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টে মামলার শুনানিতে বিজেপির আইনজীবী দাবি করেন, বিধানসভা ভোটের আগে মানুষের মনে যে ভয় ছিল, এখন তার ১০ গুণ বেশি ভয় কাজ করছে।তখন, রাজ্য নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী দাবি করেন, সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের লক্ষ্যে কমিশন সবরকম পদক্ষেপ করেছে। 
  
প্রধান বিচারপতি তখন কমিশনের আইনজীবীকে প্রশ্ন করেন, বিজেপি অভিযোগ করছে, মানুষ তাঁদের পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে ভয়ে আছেন। এ নিয়ে আপনাদের কী বলার আছে?ভোটারদের মনোবল বাড়ানোর জন্য আপনারা কী করেছেন? 


উত্তরে রাজ্য নির্বাচন কমিশন দাবি করে, প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ করা হয়েছে। এরপরই রাজ্য নির্বাচন কমিশনের উদ্দেশে একাধিক প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন প্রধান বিচারপতি। তিনি বলেন, রাজ্যের তরফে যে পরিমাণ বাহিনীর কথা বলা হয়েছে, সেই সংখ্যক পুলিশকর্মী যে রাস্তায় নামবেনই, সেটা আপনারা নিশ্চিত করবেন কী করে?  তার থেকে কম যদি থাকে, সেটা জানবেন কী করে? কোনও নির্দিষ্ট আধিকারিককে কি এ বিষয়ে আপনারা দায়িত্ব দিয়েছেন?কিছু ঘটলে তার দায় কার ওপর বর্তাবে?



জবাবে রাজ্য নির্বাচন কমিশন দাবি করে, সব ব্যবস্থা করা হয়েছে। তখন কমিশনের উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি ফের বলেন, আপনাদের হিসেবে দেখা যাচ্ছে, একটি বুথে ১ হাজার ২০০ ভোটার রয়েছে। ওই কেন্দ্রে ১৩টি বুথ আছে। তাহলে প্রায় ১৫ হাজার ভোটার আসবেন। তাদের নিরাপত্তার জন্য ৩৫ জন পুলিশ থাকবেন। আপনার (রাজ্য নির্বাচন কমিশন) কি মনে হয় এই সংখ্যক বাহিনী পর্যাপ্ত?


তখন কমিশন জানায়, পরিকল্পনা অনুযায়ী তাদের হাতে পর্যাপ্ত বাহিনী রয়েছে। প্রয়োজন পড়লে আরও বাহিনী দেওয়া হবে। 


কবে থেকে রুট মার্চ শুরু হবে, তা জানতে চান প্রধান বিচারপতি। শুক্রবার বিকেল থেকেই রুটমার্চ শুরু করার কথা জানায় কমিশন।ভোটারদের মনোবল বাড়ানোর জন্য আর কী করা হয়েছে? পেট্রোলিং বা এরিয়া ডমিনেশন কীভাবে হবে, তাও জানতে চান প্রধান বিচারপতি। কোনও সন্তোষজনক উত্তর না পেয়ে, বিস্ময় প্রকাশ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, রবিবার ভোট, এখনও আপনাদের কাছে নির্দিষ্ট পরিকল্পনা নেই!


গতকাল রাজ্য সরকারের তরফে আদালতে জানানো হয়, কলকাতা পুলিশের কাছে মোট ২৭ হাজার কর্মী আছে। রাজ্য পুলিশেরও পর্যাপ্ত বাহিনী আছে। নিরাপত্তার দায়িত্বে কলকাতার পুলিশ কমিশনার, রাজ্য পুলিশের ডিজি এবং আইজি রয়েছেন। 


কিন্তু, পরিস্থিতির যদি হঠাত্‍ পরিবর্তন ঘটে, যদি কেন্দ্রীয় বাহিনীর প্রয়োজন হয়, তখন কী করবেন?রাজ্য সরকারের কাছে জানতে চান প্রধান বিচারপতি।   


উত্তরে রাজ্যের তরফে অ্যাডভোকেট জেনারেল জানান, আমাদের পুলিশকর্মীরা যথেষ্ট দক্ষ। তারা যে কোনও পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে পারবেন। 
তখন কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে অতিরিক্ত সলিসিটার জেনারেল বলেন, আমাদের হাতে পর্যাপ্ত কেন্দ্রীয় বাহিনী আছে। মানুষ যদি ভোট দিতে যেতে ভয় পায়, তাহলে ভয় দূর করতে আমরা কাজ করতে পারি। কমিশন চাইলে শনিবার সকালের মধ্যে কেন্দ্রীয় বাহিনী পাঠিয়ে দেব।


কিন্তু, তখন রাজ্য নির্বাচন কমিশন বলে, এই মুহূর্তে কেন্দ্রীয় বাহিনীর প্রয়োজন নেই। সবপক্ষের সওয়াল শুনে প্রধান বিচারপতি বলেন, আদালতে রাজ্য সরকার ও রাজ্য নির্বাচন কমিশনের তরফে দেওয়া সব প্রতিশ্রুতি পালন করা হচ্ছে কিনা, তা দেখার জন্য মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি করা হল না। 
এরপর রাতে ওয়েবসাইটে আপলোড হওয়া নির্দেশনামায় প্রধান বিচারপতি জানিয়ে দেন, কেন্দ্রীয় বাহিনী ছাড়াই কলকাতায় পুরভোট হবে। নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে হবে রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে। ভোটারদের নিরাপত্তার স্বার্থে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করবেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার, রাজ্য পুলিশের ডিজি।


 


বিস্তারিত আসছে...