কলকাতা: ব্রিগেড থেকে জড়তাহীন জোটের বার্তা দিলেন বিমান বসু থেকে অধীর চৌধুরী। রবিবারের ব্রিগেড থেকেই বাম-কংগ্রেস-আইএসএফ জোটের নতুন নাম সংযুক্ত মোর্চা প্রকাশ করা হয়। যদিও, জোটকে কোনও গুরুত্ব দিতে নারাজ তৃণমূল ও বিজেপি।


এদিন ব্রিগেডের মঞ্চ থেকে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু বলেন, আজকের পর তৃণমূল-বিজেপি একদিকে, আর আমরা একদিকে। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর গলাতেও শোনা গেল জোটের বার্তা। তিনি বলেন, বাংলায় লড়াই হবে দু’টো শক্তির মধ্যে। নজর বদলো, বদল যায়েঙ্গে। দিশা বদলো, কিনারে বদল যায়েঙ্গে।


একমাস পরই শুরু হবে বিধানসভা ভোট। তার আগে প্রথম ব্রিগেড সমাবেশ করে, জড়তাহীন  জোটের বার্তা দিল বাম, কংগ্রেস। ব্রিগেড থেকেই প্রকাশ করা হল বাম-কংগ্রেস-আইএসএফ জোটের নতুন নাম সংযুক্ত মোর্চা।


বক্তৃতার ছত্রে ছত্রে বারবার নেতাদের মুখে উঠে এল এই নাম। উদ্দেশ্য একটাই, শুরু থেকে যত বেশি সম্ভব মানুষের কাছে জোটের ছবি পরিষ্কার করে দেওয়া। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী গণতান্ত্রিক শক্তির সমন্বয় ঘটিয়ে এই বাংলাকে সমৃদ্ধির বাংলা গড়ে তোলার শপথ নিয়ে সংযুক্ত মোর্চা গড়েছি। যে ভাষায় মমতা ববলে, সেই ভাষায় জবাব দিতে চাই, বাংলার নেত্রী মমতা, দেখে যান মোর্চার ক্ষমতা। এই মোর্চার ক্ষমতা দখলের লক্ষ্য নিয়ে গঠিত হয়েছে।


সিপিএম সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, বাংলায় পরিবর্তন হবে। সেকুলার মোর্চার পরিবর্তন। তিন মাস ধরে সংযুক্ত মোর্চা লড়াই করছে। কংগ্রেস, বামফ্রন্টের সঙ্গে আইএসএফ এসেছে।


এদিন সভামঞ্চের টুকরো টুকরো দৃশ্যেও বারবার উজ্জ্বল হয়েছে জোটের ছবি। কখনও সূর্যকান্ত মিশ্রকে দেখা গেছে অধীর চৌধুরীর সঙ্গে কথা বলতে। কখনও সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরিকে দেখা গেছে কংগ্রেস শাসিত ছত্তীসগঢ়ের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেলের সঙ্গে খোশগল্প করতে।


২০১৬ সালে বাম-কংগ্রেসের জোট হলেও, বিমান বসুর গলায় শোনা গেছিল সাবধানী সুর। আবার ২০১৯-এ জোট ভেস্তে যাওয়ার পরও নাম না করে কংগ্রেসের ঘাড়েই দায় ঠেলেছিলেন তিনি। কিন্তু, এদিন সেই জড়তা ঝেড়ে ফেলে দ্বিধা-দ্বন্দ্বহীবভাবে কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের পক্ষে সওয়াল করেন তিনি। চেনা ছকের বাইরে হেঁটে বিমান বসুর মুখে এদিন কমরেড ছাড়াও শোনা যায় বন্ধুগণ। অন্যদিকে, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর বক্তব্য শেষ করেছেন ইনকিলাব জিন্দাবাদ দিয়ে।


বাম-কংগ্রেসের হৃদ্যতা দেখে পাল্টা কটাক্ষের সুর শোনা গেল তৃণমূল-বিজেপির গলায়। রাজ্য বিজেপি মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, “বাম জমানায় ওদের (কংগ্রেস) ১০ হাজার কর্মী খুন হয়েছে। তার পরেও মঞ্চে দাঁড়িয়ে ইনকিলাব জিন্দাবাদ স্লোগান দিলেন দলের (কংগ্রেস) নেতারা। অথচ ব্রিগেড সমাবেশ থেকে একবার বন্দেমাতরম ধ্বনি উঠল না।” পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন,  বামেরা ২১ জুলাই গুলি করে মেলেছিল। হাজার হাজার কংগ্রেস কর্মী মারা গেল। আর আজ হাত মেলাল।


এদিন আব্বাস সিদ্দিকি আসার পর অধীর চৌধুরী বক্তব্য থামানোয়, ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের সঙ্গে কংগ্রেসের টানাপোড়েনের একটা জল্পনা তৈরি হয়েছে ঠিকই। কিন্তু, কংগ্রেস এবং বাম দুই শিবিরই আশাবাদী, ভোটের আগে ঐক্যের এই ছবি তাঁরা পৌঁছে দিতে পারবেন মানুষের কাছেও।