অরিন্দম সেন ও রাজা চট্টোপাধ্যায়, আলিপুরদুয়ার: বিজেপির প্রথম দফার প্রার্থীতালিকা বেরিয়েছে। সেখানে নাম রয়েছে ২০ প্রার্থীর। তার মধ্যেই সামনে এসে গেল অন্তর্দ্বন্দ্বের ছবি। ওই তালিকায় নাম রয়েছে মাদারিহাটের বিজেপি বিধায়ক মনোজ টিগ্গার। এবার দল তাঁকে আলিপুরদুয়ার লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী করেছে। যে আসনে গতবার বিজেপির হয়ে জিতেছিলেন জন বার্লা। এবার তাঁকে টিকিট দেয়নি দল। আর তাতেই গোঁসা করেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। পরিস্থিতি এমনই যে মাদারিহাটে রেলের অনুষ্ঠানে গিয়ে সবার সামনে মনোজ টিগ্গার তীব্র সমালোচনা করলেন বিদায়ী সাংসদ। তাঁর অভিযোগ, জেলা সভাপতি ও বিধায়ক মনোজ টিগ্গা কলকাঠি নাড়ার জন্যই তাঁর নাম বাদ পড়েছে। আর যখন এই কথা তিনি বলছেন তখন তাঁর সামনেই বসে মনোজ টিগ্গা।
মনোজ টিগ্গা জানিয়েছেন, প্রার্থীতালিকা তৈরির পুরো বিষয়টিই দলের উচ্চ নেতৃত্ব সামলেছে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। ফলে বার্লার অভিযোগ ঠিক নয় বলেই দাবি করেছেন তিনি। যদিও জন বার্লার দাবি এই পরিস্থিতিতে তিনি সমর্থন করবেন না টিগ্গাকে।
আলিপুরদুয়ারের বিদায়ী বিজেপি সাংসদ এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জন বার্লা বলেছেন, 'প্রত্যাহার করবে, তারপর কথা হবে, না হলে কারও সঙ্গে কোনও কথা হবে না! কারও সঙ্গে কথা বলব না। প্রত্যাহার করলে তখন কথা বলব। আমার সঙ্গে ছল করবে! আমি জেতাব...না, না, না...আমি করব না। প্রত্যাহার করলে তবে কথা হবে।' তিনি টেনে এনেছেন পবন সিংহের প্রসঙ্গ। আসানসোলে বিজেপির ভোজপুরি নায়ক প্রার্থী নিয়ে তুমুল বিতর্ক তৈরি হয়। শেষ পর্যন্ত ওই প্রার্থীকে তুলে নেয় বিজেপি। সেই মতোই এখানেও প্রার্থী তুলে অন্য প্রার্থী দেওয়ার দিকেই ইঙ্গিত করেছেন জন বার্লা।
লোকসভায় টিকিটের শিকে ছেঁড়েনি বলে যখন বিদায়ী সাংসদ চেঁচামেচি করছেন তখন কাছেই বসে এবারের প্রার্থী মনোজ টিগ্গা। তাঁর মুখে ঠোঁট টেপা হাসি। তাঁর সামনে বসেই জন বার্লার দাবি, 'আমাকে বলে, মাদারিহাট স্টেশন করে দিন, ৬০ হাজার ভোটে জেতাব। আর তারপর অমিত শাহের কাছে কী বলে...।' তখনই অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিজেপি কর্মীরা তাঁকে চুপ করতে বলেন। কিন্তু তা না শুনেই বলতে থাকেন বার্লা। তাঁর অভিযোগ, 'কীভাবে চুপ থাকব! আমাকে ধোঁকা দেবে! কীভাবে চুপ থাকব?'
টিগ্গার উপর রাগ:
এবার আলিপুরদুয়ার থেকে লোকসভার টিকিট না পেয়ে কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী জন বার্লা বেজায় চটেছেন বিজেপিরই জেলা সভাপতি ও মাদারিহাটের বিজেপি বিধায়ক মনোজ টিগ্গার ওপরে! মন্ত্রীর অভিযোগ, তাঁর টিকিট কাটা গেছে মনোজ টিগ্গার জন্যই। জন বার্লার অভিযোগ, 'আমি ওর জন্য ভোট করাব না। টিকিট পাইয়ে দিয়েছি। জিতিয়েছি। আজ সেই আমার সঙ্গে ছলের আশ্রয় নেবে! আদিবাসীদের সঙ্গে ছল! আমার সঙ্গে ছল করা হয়েছে!আজ সভাপতি হয়ে আমাদের মনে আঘাত দিয়েছে...কাঁদিয়েছে। যে কাঁদাল, তাঁকে কীভাবে আশীর্বাদ করব।' মাদারিহাটের বিধায়ক এবং আলিপুরদুয়ার জেলা বিজেপি সভাপতি মনোজ টিগ্গা বলছেন, 'কোন কেন্দ্রে, কে প্রার্থী হবে সেটা কেউ বলতে পারে না। সেটা একমাত্র আমাদের নির্বাচনী সমিতি ঠিক করে যে কোন কেন্দ্রে কে প্রার্থী হবে।'
আলিপুরদুয়ার জেলায় ৬টি ব্লক মিলিয়ে তফশিলি জাতির মানুষ রয়েছেন ৩২ শতাংশ এবং তফশিলি উপজাতি সম্প্রদায়ের মানুষের সংখ্যা ২৮ শতাংশ। এই ভোটারদের মধ্যে জন বার্লার প্রভাব রয়েছে ভালই। ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে জেলার একমাত্র লোকসভা আসন থেকে প্রায় আড়াই লক্ষ ভোটের ব্যবধানে তিনি জয়ী হন। এরপর ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনেও এই জেলার ৫টি আসনেই বিজেপির জয়ের ধারা অব্যাহত থাকে। সেই জেলাতেই লোকসভা ভোটের মুখে বিজেপিতে কার্যত লঙ্কাকাণ্ড। বিজেপির রাজ্য কমিটির সম্পাদক দীপক বর্মনকে সঙ্গে নিয়ে ডুয়ার্সের বানারহাটের লক্ষ্মীপাড়া চা বাগানে জন বার্লার বাড়িতে যান মনোজ টিগ্গা। কিন্তু, দেখা মেলেনি তাঁর। যদিও মনোজ টিগ্গার দাবি, বার্লা কাজে ব্যস্ত ছিলেন, অন্য কোনও বিষয় নেই।
আলিপুরদুয়ারের তৃণমূল নেতা ও SJDA চেয়ারম্যান সৌরভ চক্রবর্তীর দাবি, 'বিজেপি আগেই আলিপুরদুয়ারে হেরে বসে আছে। সেই কারণেই নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি দলের বিরোধিতা করছেন।'
সামনে ভোট। তার আগে উত্তরবঙ্গের শক্ত ঘাঁটি আলিপুরদুয়ারেই বিদায়ী সাংসদের বিদ্রোহে অস্বস্তিতে বিজেপি শিবির। শেষপর্যন্ত জন বার্লা কি নির্দল হয়ে বা অন্য কোনও দলে গিয়ে ভোটে লড়তে পারেন? তিনি এ নিয়ে কিছু না বললেও, জেলা রাজনৈতিক মহলের মতে, রাজনীতিতে তো সবকিছুই সম্ভব!
আরও পড়ুন: বিজেপিতে 'অভিষেক' অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের, হাতে নিলেন পতাকা