কলকাতা: বিজেপি বাংলার প্রার্থীতালিকার প্রায় অর্ধেক ঘোষণা করে দিয়েছে। রবিবার জনগর্জন সভার মধ্য দিয়ে লোকসভা ভোটপ্রচারের (Lok Sabha Election) ডঙ্কা বাজিয়ে দেবে তৃণমূলও। এদিনই সভামঞ্চ থেকেই প্রার্থীতালিতা প্রকাশের সম্ভাবনা রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বাম-কংগ্রেস (CPM Congress Alliance) কোথায়? এখনও ধোঁয়াশা রয়েছে রাজ্যে সিপিএম-কংগ্রেস জোট নিয়ে। বাংলায় লোকসভা নির্বাচনে কি হাত-কাস্তের জোট হবে? AICC-তাতে মত দেবে? উত্তর নেই রাজ্যের নেতাদের কাছে। 


সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম (MD Selim on Candidate List) বলেছেন, 'কংগ্রেসের সঙ্গে আলোচনা হবে কিনা, আমি বারবার বলেছি, সেটা কংগ্রেস ঠিক করবে। অল ইন্ডিয়া কংগ্রেস ঠিক করবে। প্রাথমিক কিছু কথাবার্তা হয়েছিল। কিন্তু আমরা বলেছি, বিজেপি-তৃণমূল বিরোধী অবস্থান নিলেই, তারপরে আলোচনা হবে।' প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী (Adhir Chowdhury on Aliiance) জানিয়েছেন, দিল্লির নেতৃত্ব যখন আলোচনা করবে তাঁদের সঙ্গে, তখন সেটা জানিয়ে দেওয়া হবে।


লোকসভা নির্বাচন যে কোনও দিন ঘোষণা হতে পারে। কিন্তু, আসন্ন নির্বাচনে বাংলায় কংগ্রেস-সিপিএমের জোট নিয়ে এখনও কোনও নিশ্চয়তা নেই। ধোঁয়াশা রয়েছে পুরোমাত্রায়। ইতিমধ্যেই প্রথম দফায়, বাংলার ২০টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করে দিয়েছে বিজেপি। তৃণমূলও এখনও পর্যন্ত, ৪২টি লোকসভা আসনে একাই লড়ার সিদ্ধান্তে অনড়। কিন্তু প্রস্তুতির দিক থেকে এখনও অনেকটাই যেন পিছিয়ে বাম ও কংগ্রেস। সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে বিজেপি বিরোধী I.N.D.I.A জোটের মঞ্চে থাকলেও, সিপিএম শুরু থেকেই তৃণমূল বিরোধিতার কথা বলেছে। প্রদেশ কংগ্রেসও দুর্নীতি-সহ বিভিন্ন ইস্যুতে নিয়মিত রাজ্যে তৃণমূলের কড়া সমালোচনা করেছে। কিন্তু তৃণমূলকে নিয়ে নরম অবস্থান নিতে দেখা গিয়েছে কংগ্রেস হাইকমান্ডকে। তৃণমূলের দিকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে আসন-রফার।  


বাংলায় বাম-কংগ্রেস জোট নিয়ে চূড়ান্ত কোনও সিদ্ধান্ত এখনও জানায়নি কংগ্রেস হাইকম্যান্ড। এদিকে সূত্রের খবর, লোকসভা ভোট দোরগোড়ায় এসে যাওয়ায় সিপিএমও আসন-রফা চূড়ান্ত করা নিয়ে দেরি করতে রাজি নয়। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেছেন, 'আমাদের ১১ তারিখ পলিটব্যুরোর বৈঠক আছে। আমাদের তালিকা তারপরে বামফ্রন্টের বৈঠকে আলোচনা হবে। তারপরে আমরা প্রকাশ করে দেব। বিমানদা সব সময় বলেন, যেদিন নির্বাচন ঘোষণা হবে, সেদিন করে দেব। আমরা বলছি, তার আগে হলে ভাল হয়।' কংগ্রেসের সঙ্গে জোট প্রসঙ্গে তাঁর মত, 'কংগ্রেসের মুশকিল হচ্ছে, তারা তৃণমূলের সঙ্গে গেলেও যেতে পারি, সিপিএমের সঙ্গেও যেতে পারি, AICC-র। সেটাতে রাজনৈতিক লড়াই হয় না। আমাদের কাছে নির্বাচনটা রাজনৈতিক লড়াই।' এই বিষয়ে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেন, 'বড় দল একটা, আলোচনা, বিভিন্ন রাজ্য নিয়ে তাকে ভোট করতে হয়। এক এক রাজ্যে, এক এক সমস্যা! তাকেও অপেক্ষা করতে হয়েছে, তার জন্য আমাদের মাথাব্যথার তো কিছু নেই। আমরা প্রস্তুতি নিয়েই বসে আছি।'


এর আগে বাংলায় রাহুল গাঁধীর ন্যায় যাত্রা চলাকালীন, কংগ্রেসকে তীব্র কটাক্ষ করেন মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়। কংগ্রেস ৪০টা আসন পাবে কিনা তা নিয়েই কটাক্ষ করেছিলেন তিনি। সূত্রের খবর, AICC-র এই বডি ল্যাঙ্গোয়েজ দেখে বঙ্গ সিপিএম শিবিরের একাংশের ধারণা, কেন্দ্রে বিরোধী জোট সরকার গঠনের সম্ভাবনা তৈরি হলে, তৃণমূলের সমর্থন নিশ্চিত করতেই দরজা খোলা রাখতে চাইছে কংগ্রেস হাইকমান্ড। সেকারণেই কি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লাগাতার একলা চলো বার্তা দেওয়ার পরেও, বাংলায় তৃণমূলের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধার বার্তা দিয়ে যাচ্ছেন জয়রাম রমেশরা? তৃণমূলের প্রার্থী তালিকা দেখে নিয়েই কি প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বকে চূড়ান্ত সিগন্যাল দেবে AICC? সিপিএম কি তার জন্য অপেক্ষা করবে? লোকসভা ভোটের আগে রাজনৈতিকমহলে জোরালো হচ্ছে এমনই সব প্রশ্ন।


আরও পড়ুন: তৃণমূলের জনগর্জনে ব়্যাম্প-চমক! জনসংযোগের নয়া কৌশল?