কলকাতা: রাজনৈতিক ইতিহাস বলে পশ্চিমবঙ্গে মালদা-মুর্শিদাবাদ এলাকার রাশ ছিল 'হাতের' হাতে। কংগ্রেসের খাসতালুক বলে পরিচিত মুর্শিদাবাদ ও পার্শ্ববর্তী লোকসভা কেন্দ্রে একসময় দাপট দেখিয়েছে বাম ও কংগ্রেস। তবে সম্প্রতি বিধানসভা হোক কিংবা লোকসভা জঙ্গিপুরে যেভাবে ঘাসফুল দাপট রয়েছে তা ২০২৪ এর লোকসভা ভোটে বিরোধী শিবিরের মাথা ব্যথার কারণ হতে পারে। 


আসন-পরিচিতি


মুর্শিদাবাদ জেলার একটি লোকসভা কেন্দ্র জঙ্গিপুর। এই লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে সাতটি বিধানসভা আসনই মুর্শিদাবাদ জেলার মধ্যে পড়ে। জঙ্গিপুর লোকসভা কেন্দ্রের সাতটি বিধানসভা হল- সুতি, জঙ্গিপুর, রঘুনাথগঞ্জ, সাগরদিঘি, লালগোলা, নবগ্রাম এবং খড়গ্রাম।


রাজনৈতিক ইতিহাসে জঙ্গিপুর লোকসভা কেন্দ্র


রাজনৈতিক দিন থেকে এই কেন্দ্র যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। এর কারণ অবশ্যই পালা-বদলের ইতিহাস। ফিরে যাওয়া যাক ১৯৬৭ সালে। এই সালেই প্রথমবার এই কেন্দ্রে নির্বাচন হয়েছিল। জয়ী হয়েছিলেন কংগ্রেসের লুৎফল হক। ১৯৭২ এর নির্বাচনেও তিনিই জিতেছিলেন। এরপর পালা বদল। ১৯৭৭ সালে কংগ্রেসের থেকে জঙ্গিপুর লোকসভা আসন ছিনিয়ে নেয় বামেরা। ১৯৭৭ সাল থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত যতবার লোকসভা নির্বাচন হয়েছে, ততবার জয়ী হয়েছেন বাম প্রার্থীরা। এর মধ্যে ১৯৮০ সাল থেকে ১৯৯১ পর্যন্ত টানা জয়ী হয়েছিলেন সিপিআই নেতা জয়নাল আবেদিন। তবে ১৯৯৬ সালে ফের এই লোকসভা আসনে ফিরে আসে কংগ্রেস। এরপর আবার ফেরে বামেরা। তবে ২০০৪ সালে লোকসভা নির্বাচনে এই আসনে প্রার্থী হয়েছিলেন কংগ্রেসের 'চাণক্য' প্রণব মুখোপাধ্যায়। ২০১২ সাল পর্যন্ত তিনি জঙ্গিপুরের সাংসদ ছিলেন। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য ২০১২ সালে জঙ্গিপুরের সাংসদ পদ থেকে ইস্তফা দেন তিনি। সেই সময় উপনির্বাচনে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের পুত্র অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়কে প্রার্থী করে কংগ্রেস। উপনির্বাচনে তিনি জয়ী হন। ২০১৪ সালের নির্বাচনেও কংগ্রেস প্রার্থী হন প্রণব-পুত্র, জয়ীও হন। এরপর ফের পালা বদল। ২০১৯ এ প্রথমবারের জন্য জঙ্গিপুর লোকসভা নির্বাচনে জয়লাভ করে তৃণমূল কংগ্রেস। 


জঙ্গিপুরে জয়ের হিসেব-নিকেশ


প্রথম নির্বাচন থেকেই জঙ্গিপুর লোকসভা কেন্দ্রে বাম-কংগ্রেসের গড় হিসেবেই ছিল। ২০১২ সালে অবশ্য রীতিমতো হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয় বাম কংগ্রেসের।  সিপিএম প্রার্থী মুজফফর হোসেন ও অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়ের লড়াইয়ে শেষ হাসি হেসেছিলেন প্রণব-পুত্রই।  অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় পান ৩ লক্ষ ৭৮ হাজার ২০১ ভোট। সিপিএম প্রার্থী পেয়েছিলেন ৩ লক্ষ ৭০ হাজার ৪০ ভোট। ২০১৯ এ নাটকীয় পরিবর্তন। হাত কিংবা কাস্তে হাতুড়ি, কেউ নয়, জঙ্গিপুরের 'জমি দখল' ঘাসফুলের। কংগ্রেস ও বামেদের পিছন ফেলে তৃণমূল প্রার্থী খলিলুর রহমান পান ৫ লক্ষ ৬২ হাজার ৮৩৮ ভোট। রাজনৈতিক হিসেবকে অবাক করে দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসে বিজেপি। গেরুয়া শিবিরের মাফুজা খাতুন পান ৩ লক্ষ ১৭ হাজার ৫৬ ভোট। অন্যদিকে, কংগ্রেসের হয়ে লড়াই করা অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় পান ২ লক্ষ ৫৫ হাজার ৮৩৬ ভোট। 


জঙ্গিপুরে 'সবুজ দুর্গ' 


লোকসভা নির্বাচনে তো বটেই, ২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচনেও জঙ্গিপুরে নিরঙ্কুশ আধিপত্য বজায় রেখেছিল তৃণমূল। ২১ এর বিধানসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্রের সাতটি বিধানসভা কেন্দ্রে জয়লাভ করেছিল তৃণমূল কংগ্রেস। যদিও প্রাথমিকভাবে মনে করা হয়েছিল যে দেশজুড়ে যেখানে গেরুয়া ঝড় উঠেছিল, হয়তো জঙ্গিপুরেও সেই রং লাগবে। তবে ভোটবাক্সে সেই প্রভাব অবশ্য পড়েনি। 


দুর্গে কম্পন?


যদিও ২০২৩ এ সাগরদিঘি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে কিছুটা ধাক্কা খেয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস। বামফ্রন্ট-সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী বায়রন বিশ্বাসের জয়, মমতা শিবিরের 'বিশ্বাসে' ধাক্কা দিয়েছিল প্রাথমিকভাবে। রাজনৈতিক মহলের মত ছিল, হয়তো পরিবর্তনের শুরু সেখান থেকেই। কিন্তু ফলাফল প্রকাশের এক মাস পরেই বাম-কংগ্রেসের শিবির ত্যাগ করে তৃণমূল কংগ্রেসের যোগ দিয়েছিলেন বায়রন বিশ্বাস। 


২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচন হোক কিংবা ২০২১ এর বিধানসভা কিংবা সম্প্রতি পঞ্চায়েত ভোট, জঙ্গিপুরে একতরফা জয়ের হাসি হেসে চলেছে তৃণমূল কংগ্রেস। এবারেও কি মমতা ব্রিগেডেই ভরসা রাখতে চলেছে জঙ্গিপুর? শেষ উত্তর ভোট বাক্সই বলবে। তবে এক নজরে দেখে নেওয়া যাক কী বলছে এবিপি আনন্দে প্রকাশিত সি ভোটারের সমীক্ষা?  



এরাজ্যের ৪২টি আসনে সমীক্ষা চালিয়েছে সি ভোটার। ৫ জানুয়ারি থেকে ৫ এপ্রিল, অর্থাৎ গত ৩ মাস এই সমীক্ষা চালানো হয়েছে। ১ লক্ষ ১১ হাজার ২৫৬ জনের সঙ্গে কথা বলেছেন সমীক্ষকরা। তবে এই সমীক্ষা কোনওভাবেই রাজনৈতিক ভবিষ্যদ্বাণী নয়। ভোটের ফল কী হতে চলেছে, তার পূর্বাভাসও নয়। বরং ভোটারদের মন বোঝার একটা চেষ্টা মাত্র। 


জঙ্গিপুর লোকসভা কেন্দ্র


এই লোকসভা কেন্দ্রে ৭ মে তৃতীয় দফা ভোট।


তৃণমূল প্রার্থী : খলিলুর রহমান


বিজেপি প্রার্থী: ধনঞ্জয় ঘোষ


জোট প্রার্থী : কংগ্রেস নেতা মোর্তুজা হোসেন


সম্ভাব্য জয়ী : তৃণমূল প্রার্থী খলিলুর রহমান


 


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে