কলকাতা: সপ্তম দফা ভোট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শেষ হল ২০২৪ এর লোকসভা নির্বাচন। তবে ভোটেও যেমন সন্ত্রাসের অভিযোগ উঠেছিল, তেমন ভোট মিটে যাওয়ার পরও সেই সন্ত্রাসের অভিযোগ জারি। 


কলকাতায় সন্ত্রাস? 


যাদবপুরেও ভোট পরবর্তী সন্ত্রাস। খেয়াদহে ভোট মিটতেই বিজেপির বুথ সভাপতির উপর হামলা। মাথা ফাটল বিজেপির বুথ সভাপতির। হামলার অভিযোগ তৃণমূলের বিরুদ্ধে। বিজেপি নেতার দাদাকেও মারধরের অভিযোগ। পাল্টা তৃণমূল কর্মীর বাড়ি ভাঙচুর বিজেপির।  


খাস কলকাতায় ভোট-পরবর্তী হিংসা। ভোট মিটতেই বিজেপি কর্মীদের ঘরছাড়া করার অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। কলকাতা উত্তর লোকসভা কেন্দ্রের বেলেঘাটা, নারকেলডাঙা-সহ একাধিক জায়গা থেকে বিজেপি কর্মী, সমর্থকরা এসে আশ্রয় নিয়েছেন কলকাতা উত্তরের জেলা পার্টি অফিসে। বিজেপি প্রার্থী তাপস রায়ের পোলিং এজেন্ট হয়ে বুথে বসায় তাঁদের বাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয় বলে অভিযোগ। তৃণমূলের প্রতিক্রিয়া এখনও মেলেনি। 


জেলায় জেলায় কোথায় কী অভিযোগ? 


ভোটপর্বের শেষদিনে ব্যারাকপুর লোকসভার ২টি জায়গায় বোমাবাজি। গভীর রাতে নৈহাটি পুরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূল পার্টি অফিসের সামনে পড়ল বোমা। বোমাবাজির ঘটনায় বিজেপিকে নিশানা করেছেন স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর। অন্যদিকে, গতকাল রাতে ভাটপাড়ার ৯ নম্বর ওয়ার্ডে ব্য়ারাকপুরের বিজেপি প্রার্থী অর্জুন সিংয়ের নির্বাচনী এজেন্ট প্রিয়াঙ্গু পাণ্ডের বাড়ির সামনে বোমাবাজি হয়। দুটি ঘটনাতেই সিসি ক্যামেরার ফুটেজে ধরা পড়েছে বোমাবাজির ছবি। ভাটপাড়ার ঘটনায় তৃণমূলের দিকে আঙুল তুলেছে বিজেপি। 



ভোট মিটতেই নিউ আলিপুরে বিজেপি নেতার বাড়িতে হামলার অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, বন্দুকের বাঁট দিয়ে
মেরে দাঁত ভেঙে দেওয়া হয় কলকাতা দক্ষিণের বিজেপি প্রার্থী দেবশ্রী চৌধুরীর পোলিং এজেন্ট পল্লব চক্রবর্তীর। আরেক বিজেপি কর্মীর মাথায় গুরুতর আঘাত পান। জখম হয়েছেন আরও কয়েকজন। অভিযোগ, গতকাল রাত ৮টা নাগাদ কলকাতা পুরসভার ৮১ নম্বর ওয়ার্ডে বিজেপির দক্ষিণ কলকাতা সাংগঠনিক জেলার সদস্য তারক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে হামলা হয়। সেখানেই বিজেপি প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট-সহ কয়েকজনকে মারধর করা হয়। স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের নির্দেশেই হামলা হয়েছে বলে দাবি বিজেপির। তৃণমূলের প্রতিক্রিয়া মেলেনি। 


বেলেঘাটার পর ট্যাংরা। ভোটের পরে ফের ঝরল রক্ত। কলকাতা উত্তর লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী তাপস রায়ের পোলিং এজেন্ট রমেশ সাউয়ের মাথা ফাটিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠল
তৃণমূলের বিরুদ্ধে। কলকাতা পুরসভার ৫৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা বিজেপি কর্মীর অভিযোগ, ভোট শেষের পর ২৮৩ নম্বর বুথ থেকেই বার হতেই তাঁকে ধাপায় তুলে নিয়ে যায় তৃণমূলের লোকজন। বুথে বসার জন্য মেরে মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়। তৃণমূলের প্রতিক্রিয়া এখনও মেলেনি। 


নদিয়ার কালীগঞ্জে ভোট-পরবর্তী হিংসা। গুলি করে কুপিয়ে খুন করা হল বিজেপি কর্মীকে। মাথা কেটে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ।মৃতের নাম হাফিজুল শেখ। গতকাল সন্ধে ৭টা নাগাদ বছর পঁয়ত্রিশের বিজেপি কর্মী বন্ধুদের সঙ্গে ক্যারম খেলছিলেন। অভিযোগ, সেইসময়ই তাঁকে লক্ষ্য করে পরপর গুলি ছোড়ে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা। মৃত্যু নিশ্চিত করতে মাথায় কোপ মারা হয়। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় বিজেপি কর্মীর। এরপর দেহ আটকে রেখে পুলিশকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান স্থানীয় বাসিন্দারা। মৃতের পরিবারের দাবি, লোকসভা ভোটের আগে সিপিএম ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন হাফিজুল, সেই আক্রোশেই খুন। ঘটনাস্থলে কৃষ্ণনগরের বিজেপি প্রার্থী অমৃতা রায়। যদিও তৃণমূলে দাবি, পারিবারিক বিবাদের জেরে এই ঘটনা। পুলিশের দাবি, মৃতের নামে পুরনো অপরাধের রেকর্ড রয়েছে। তার জেরেই খুন বলে প্রাথমিক অনুমান। একজনকে আটক করেছে পুলিশ।



এদিকে,বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রে ভোট মিটতেই সন্দেশখালিতে ফিরল ১১৪ ধারা। আজ সকাল ৬টা থেকে সরবেড়িয়া-আগারহাটি, বয়ারমারি ১, বয়ারমারি ২ ও হাটগাছি, এই চারটি গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৭টি জায়গায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। মঙ্গলবার ভোটের ফল ঘোষণার দিন সকাল ৬টা পর্যন্ত এই বিধিনিষেধ জারি থাকবে। সন্দেশখালির ন্যাজাট থানা এলাকার বিভিন্ন জায়গায় গতকাল ভোটের দিন লাগাতার অশান্তির ঘটনা ঘটে। ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।