কলকাতা: রামমন্দির আন্দোলন হিন্দিবলয়ে- বিশেষ করে উত্তরপ্রদেশে বিজেপির উত্থানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কারণ। বিজেপির ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে অন্যতম ছিল অযোধ্যায় রাম মন্দির নির্মাণ। মোদি ২০১৯-এর ভোটে এই আশ্বাসও দিয়েছিলেন। সেইমতো কাজও করেছেন। ২০২৪ সালের জানুয়ারি অযোধ্যায় উদ্বোধন হয়েছে রাম মন্দিরের। লোকসভা ভোটের আগে- প্রচারপর্বে রাম মন্দির আবেগে শান লাগিয়েছিল বিজেপি। কিন্তু রাম মন্দির আন্দোলনের রাজ্যে কার্যত মুখ থুবড়ে পড়ল বিজেপি। এমনকী রাম মন্দির (Ram Mandir) আন্দোলনের আঁতুরঘর - অযোধ্যার ফৈজাবাদ কেন্দ্রেও হারতে হল মোদির বিজেপিকে। ২০২৪ এর লোকসভা ভোটে কি তাহলে বিজেপির কোনও কাজেই এল না দীর্ঘদিনের রাম মন্দির আবেগের অস্ত্র?

  


তিনিই ছিলেন দলের সুপারস্টার ক্য়াম্পেনার। সভা করতে বারবার ছুটে এসেছেন বাংলায়। তাঁর নামেই দেশজুড়ে ভোটের প্রচার করেছে বিজেপি। কিন্তু, এবারের লোকসভা ভোটে ফেল মোদি ম্য়াজিক। শুধু তাই নয়, যে রাজ্য়ে ঘটা ঘরে রামমন্দির উদ্বোধন করেছেন নরেন্দ্র মোদি, সেই উত্তরপ্রদেশেও হতাশাজনক ফল করেছে বিজেপি।


বিজেপির  সুপারস্টার ক্য়াম্পেনার নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi)। যে কোনও ভোট বৈতরণী পার করতে তাঁর ব্র্যান্ড ইমেজে ভরসা করে পদ্মশিবির। আর মোদি ভরসা করেছিলেন রাম-আবেগের উপর। রাম মন্দির উদ্বোধনে তিনিই ছিলেন প্রধান যজমান। লোকসভা নির্বাচন শুরু মাস দুয়েক আগে অযোধ্যায় উদ্বোধন হয় রামমন্দিরের। আর গোটা বিষয়টি অত্যন্ত ঘটা করে পালন হয়েছিল। রাম মন্দির উদ্বোধন যেমন লাগাতার সারা দেশে প্রচার হয়েছিল। তেমনই লোকসভার প্রচারেও ঘুরেফিরে এসেছে রাম মন্দির ইস্যু। উত্তরপ্রদেশের বাইরে বাংলা থেকে শুরু করে অন্য রাজ্যেও প্রচারে বারবার রাম মন্দির তৈরিকে মোদি বা বিজেপির সাফল্য বলে প্রচার করা হয়েছে। রাম-আবেগে ভরসা বাংলায় বিজেপিকে কোনও ডিভিডেন্ট দেয়নি। তেমনই উত্তরপ্রদেশেও দেয়নি। 


অযোধ্যা যে লোকসভার অন্তর্গত- সেই ফৈজাবাদ আসনেই সমাজবাদী পার্টির (Samajwadi party) কাছে হেরে গিয়েছে বিজেপি। সপার সমাজবাদী পার্টির (Akhilesh Yadav) প্রার্থী অবধেশ প্রসাদে প্রাপ্ত ভোট ৫ লক্ষ ৫৪ হাজার ২৮৯। আর উল্টোদিকে ভারতীয় জনতা পার্টির প্রার্থী লাল্লু সিংহের প্রাপ্ত ভোট ৪ লক্ষ ৯৯ হাজার ৭২২।- অর্থাৎ ৫৪ হাজার ৫৬৭ ভোটের ব্যবধানে এই আসনে হেরেছে বিজেপি।  


মোটের উপর বিজেপির এই শক্তিক্ষয় দেখা গিয়েছে গোটা উত্তরপ্রদেশে (Uttar Pradesh Election)। ৮০ লোকসভা আসনের উত্তরপ্রদেশে মাত্র ৩৩-এই আটকে গিয়েছে বিজেপি। এনডিএ-শরিক ধরে মোট প্রাপ্ত আসন ৩৬। অন্য়দিকে একা সমাজবাদী পার্টিই পেয়েছে ৩৭টি আসন। কংগ্রেস পেয়েছে ৬টি আসন। 'দিল্লির রাস্তা যায় উত্তরপ্রদেশের মধ্যে দিয়ে'- দিল্লির মসনদ দখল প্রসঙ্গে এই কথাটি চালু রয়েছে। এই প্রবাদটিকেই ফের সত্যি প্রমাণ করে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার আগেই থমকে গেল বিজেপি। অন্যতম কারণ উত্তরপ্রদেশের ক্ষত।


ধাক্কা নরেন্দ্র মোদির মার্জিনেও:
গতবার লোকসভা নির্বাচনে উত্তরপ্রদেশের বারাণসী আসনে নরেন্দ্র মোদি জিতেছিলেন ৪ লক্ষ ৭৯ হাজার ৫০৫ ভোটে। এবার একধাক্কায় তাঁর জয়ের ব্য়বধান কমে হল ১ লক্ষ ৫২ হাজার ৫১৩ ভোট। এই আসনে দ্বিতীয় হয়েছে কংগ্রেস। অমেঠিতে হেরেছেন স্মৃতি ইরানি। 


গত লোকসভা নির্বাচনের তুলনায় ৩২টি আসন বাড়িয়েছে সমাজবাদী পার্টি। কংগ্রেস যেখানে গতবার ১টি আসনে জয় পেয়েছিল। সেখানে এবার ৬টি আসনে জয় এসেছে। অন্যদিকে বিজেপি এই রাজ্যে গতবারের চেয়ে ২৯টি আসন খুইয়েছে। তাহলে কি 'রামলালা' মুখ ফেরাল বিজেপির থেকে? উত্তরপ্রদেশে বিজেপির এই হোঁচটে উঠছে এই প্রশ্ন। 


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে। 


আরও পড়ুন: জেতা আসন বদলের পিছনে কলকাঠি কার? হারের পরে মুখ খুললেন দিলীপ