কলকাতা: ২০২৩ সালের ৮ ডিসেম্বর ঘুষ নিয়ে সংসদে প্রশ্ন করার অভিযোগে লোকসভা থেকে বহিষ্কৃত করা হয় কৃষ্ণনগরের তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ মহুয়া মৈত্রকে (Krishnanagar TMC Candidate Mahua Moitra)। সেইদিন নতুন সংসদ ভবনের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে মহুয়া বুঝিয়ে দিয়েছিলেন এত সহজে হাল ছাড়ার পাত্রী নন তিনি। স্পষ্ট ভাষায় বলেছিলেন, "এখন আমার বয়স ৪৯ বছর। আরও অন্তত ২৫ বছর আমি সংসদের ভিতরে বা বাইরে রাজনীতি করব। কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের কবিতার লাইন উচ্চারণ করে বলেছিলেন, "আদিম হিংস্র মানবিকতার আমি যদি কেউ হই, স্বজন হারানো শ্মশানে তোদের চিতা আমি তুলবই।" সেই দৃঢ় মানসিকতাকে হাতিয়ার করেই আজ জয় ছিনিয়ে আনল কৃষ্ণনগরের তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী মহুয়া মৈত্র।
ডিসেম্বর মাসে মহুয়া মৈত্রকে বহিষ্কার করার পরেই কট্টর মোদি বিরোধী হিসেবে পরিচিত মহুয়া সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে পরিষ্কার অভিযোগ করেছিলেন, সংসদে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও ব্যবসায়ী গৌতম আদানিকে নিয়ে প্রশ্ন করার জন্যই তাঁর উপর প্রতিশোধ নিয়েছে বিজেপি। যাতে এই বিষয়ে মুখ খুলতে অন্যরা ভয় পান তার জন্যই মহুয়ার বিরুদ্ধে গেরুয়া শিবির কড়া পদক্ষেপ নিয়েছে বলে অভিযোগ করেছিলেন তিনি। বুঝিয়ে দিয়েছিলেন এত সহজে হাল ছাড়বেন না তিনি। মানুষের রায় নিয়েই ফের ফিরবেন সংসদে। ৬ মাসের মধ্যেই নিজের কথা রাখলেন মহুয়া। লোকসভা নির্বাচনে কৃষ্ণনগর আসনে বিজেপি প্রার্থী অমৃতা রায়কে ৫৬ হাজার ৭০৫ ভোটে হারিয়ে স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন নিজের আগের অবস্থানেই অনঢ় রয়েছেন তিনি। লোকসভার নতুন অধিবেশন শুরু হলে তা যে হাড়ে হাড়ে বুঝিয়ে দেবেন নিজের হাবভাবেই প্রকাশ করলেন তিনি।
Thank you Krishnanagar, thank you @mamataofficial thank you INDIA pic.twitter.com/PIUUulcRq2
— Mahua Moitra (@MahuaMoitra) June 4, 2024
[
মঙ্গলবার সকালে গণনা যখন শুরু হয় তখন প্রথম দিকে কিছুক্ষণ কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির বধূ অমৃতা রায়ের কাছে পিছিয়ে ছিলেন মহুয়া। কিন্তু, বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাল্টে যায় পুরো ছবিটা। দেখা যায়, বিজেপি প্রার্থী অমৃতা রায়কে ৫৬ হাজার ৭০৫ ভোটে হারিয়ে সংসদ থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার ৬ মাসের মধ্যে ফের সেখানে ফিরছেন স্বমহিমায়।
২০২৩ সালের মাঝামাঝি বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে অভিযোগ করেছিলেন, দুবাইয়ের একজন ব্যবসায়ী দর্শন হিরানন্দানির কাছ থেকে নগদ টাকা এবং উপহার নিয়ে লোকসভায় প্রশ্ন করেছিলেন শিল্পপতি গৌতম আদানি এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে। তার ভিত্তিতে মহুয়া মৈত্রকে জেরা করে সংসদের এথিকস কমিটি। সেই জেরা চলাকালীনই উল্টোপাল্টা প্রশ্ন করা হচ্ছে বলে এথিকস কমিটির বৈঠক থেকে রেগে বেরিয়ে আসেন মহুয়া মৈত্র। স্পষ্ট জানিয়ে দেন গৌতম আদানি ও নরেন্দ্র মোদির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন করার জন্যই তাঁকে এভাবে হেনস্থা করা হচ্ছে। সঠিক সময়ে কৃষ্ণনগরের মানুষ এর যোগ্য জবাব দেবেন। ২০২৪ সালের ৪ জুন মহুয়ার কথা সত্যি প্রমাণ করলেন কৃষ্ণনগরের মানুষ। রাজ পরিবারের বধূ অমৃতা রায়কে হারিয়ে ফের জিতিয়ে আনলেন মহুয়া মৈত্রকে।
৫৬ হাজারের বেশি ভোটে জয়ী হলেও কাজটা মোটেও সহজ ছিল না মহুয়ার পক্ষে। কৃষ্ণনগরে ভোট প্রচার করতে দু-বার এসেছিলে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী মোদি। বিজেপি প্রার্থী হিসেবে নাম ঘোষণার পর ফোন করে দীর্ঘক্ষণ অমৃতা রায়ের সঙ্গে কথা বলেছিলেন তিনি। এর পাশাপাশি তৃণমূল প্রার্থীর উপর চাপ বাড়াতে বারবার কৃষ্ণনগরে এসেছিলেন রাজ্য বিজেপির প্রথম সারির নেতারাও। পরিস্থিতি দেখে তৃণমূল কংগ্রেসে মহুয়া মৈত্রের বিরোধী হিসেবে পরিচিত নেতা-নেত্রীরা এমনকী কয়েকজন বিধায়কও নিজেদের ঘনিষ্ঠ মহলে দাবি করেছিলেন, কৃষ্ণনগরে এবার মহুয়া মৈত্রের জেতা খুবই মুশকিল। কৃষ্ণনগরের বাম-কংগ্রেস জোট প্রার্থী এসএম সাদি সংখ্যালঘু ভোট কেটে মহুয়াকে হারিয়ে দিতে পারেন। যাতে লাভবান হতে পারে বিজেপি। এই সমস্ত জল্পনার মাঝেই মহুয়া প্রথম থেকে বলে এসেছিলেন, তিনি জিতবেনই। বিভিন্ন সংস্থার বুথফেরত সমীক্ষার পরেও নিজের ঘনিষ্ঠ মহলে মহুয়া দৃঢ় গলায় জানিয়েছিলেন, "যদি বাংলায় তৃণমূল একটি আসনও জেতে, তাহলে সেটা হবে কৃষ্ণনগর।" মঙ্গলবার নিজের সেই প্রতিশ্রুতিই পূরণ করলেন কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র।
জয়ের পরেই প্রথমে ফুলের স্তবক হাতে নিয়ে নিজের এক্স হ্যান্ডেলে একটি টুইট করেন মহুয়া। তার শিরোনামে লেখা ছিল, "ধন্যবাদ কৃষ্ণনগর, ধন্যবাদ মমতা অফিসিয়াল, ধন্যবাদ ভারত।" পরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, "আমার জয়ে আমি খুশি। কিন্তু, ভারতজুড়ে যেভাবে সাম্প্রদায়িকতার রাজনীতি চলছে এবং মোদিজি যে বলেছিলেন তিনি ৫৪৩টি আসনেই লড়াই করছেন। মানুষ তার যোগ্য জবাব দেওয়ায় আমি খুশি। এই নির্বাচন ওদের বিরুদ্ধে হয়েছে। বাংলাতেও খুব ভালো পারফর্মমেন্স হয়েছে।"
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।
আরও পড়ুন: WB Loksabha Election Results 2024: ইন্দ্রপতন, অধীরের গড়ে পাঠানের বাজিমাত