কলকাতা : কলকাতা হাইকোর্টের পর এবার মাদ্রাজ হাইকোর্ট। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের জন্য দায়ী একমাত্র নির্বাচন কমিশনই, কমিশনের অফিসারদের বিরুদ্ধে খুনের মামলা রুজু হওয়া উচিত’ করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি নিয়ে কমিশনকে তুলোধনা করল মাদ্রাজ হাইকোর্ট।‘সঠিক পদক্ষেপ না নিলে ২ মে ভোট গণনা বন্ধ করে দেব’ হুঁশিয়ারি মাদ্রাজ হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের। 

পশ্চিমবঙ্গে লাগামছাড়া ভাবে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। রবিবারই একদিনে রাজ্যে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা পৌঁছায় ১৬ হাজারের কাছাকাছি। এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে হাইকোর্টের নির্দেশ, কমিশনের গাইডলাইন সত্ত্বেও চলছে বড় প্রচার-জমায়েত। সেখানে শিকেয় উঠছে দূরত্ববিধি, বিরল মাস্কের ব্যবহারও। 

এই পরিস্থিতিতে মাদ্রাজ হাইকোর্টের এই রায়কে স্বাগত জানালেন এ রাজ্যের বিশিষ্ট চিকিত্সকরা।

চিকিৎসক দীপ্তেন্দ্র সরকার ABP Ananda কে জানালেন, '' এই রায় ঐতিহাসিক রায় । আমরা এখন ধ্বংসের শেষ পর্যায়ে এসে পৌঁছেছি । যাঁরা নির্বাচনে লড়ছেন, তাঁরা আক্রান্ত হচ্ছেন । মারা যাচ্ছেন । আজও একজন প্রার্থীকে আমি হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দিয়ে এসেছি । এই পরিস্থিতিতে প্রশাসনের একমাত্র গুরুত্ব হওয়া উচিত স্বাস্থ্য স্বাস্থ্য এবং স্বাস্থ্য । তাই মাদ্রাজ হাইকোর্টের এই রায়কে আমি  ডাক্তার ও নাগরিক হিসেবে স্বাগত জানাই '' 

প্রায় একই সুরে চিকিত্সক কুণাল সরকার জানালেন, এই রায়কে সর্বতোভাবে সমর্থন করেন তিনি। ডা. সরকার বললেন, '' চাইলে নির্বাচন কমিশন আমাদের রাজ্যে ২৯৪ টা পর্যায়েই ভোট করাতে পারত, কিন্তু যেখানে মার্চ মাসেই করোনার দ্বিতীয় কেউ ধাক্কা দিয়েছে, তখন সেই পরিস্থিতিতে কী করে একের পর এক মিটিং-মিছিল এই রাজ্যে হল ! নির্বাচন কমিশন অনুমতি কীভাবে দিল ?'' প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। সেই সঙ্গে তিনি রাজনৈতিক দলগুলিকেও দোষারোপ করেছেন একের পর এক প্রচারসভা করে যাওয়ার জন্য । ডা. সরকার বলেন, '' শুধু নির্বাচন কমিশন নয়, কোনও রাজনৈতিক দলই এই অভিযোগ থেকে গা বাঁচিয়ে যেতে পারবে না । তারাই বা কী করে এটা করল ? চিকিৎসক হিসেবে আমি মাদ্রাজ হাইকোর্টের সিদ্ধান্তের কাছে কৃতজ্ঞ ।  ভোটের প্রচারের জন্য পশ্চিমবঙ্গে করোনা পরিস্থিতি হয়ত অন্যান্য রাজ্যের থেকে আরও খারাপ হবে ।'' মন্তব্য কুনাল সরকারের। 

চিকিৎসক শুভ্রজ্যোতি ভৌমিক জানালেন , '' আমরা চিকিৎসকরা বারবার সংবাদমাধ্যমের মারফত আবেদন জানিয়ে ছিলাম । নির্বাচনী প্রচারে কারও মুখে মাস্ক দেখা যায়নি। কাতারে কাতারে মানুষ জড়ো হয়েছেন । সেই সময় নির্বাচন কমিশন কোনও পদক্ষেপ করেনি । এরপর কলকাতা হাইকোর্ট যখন নির্বাচন কমিশনকে তীব্র ভর্তসনা করেন, তখন নড়েচড়ে ওঠে ইলেকশন কমিশন।''

গত ২২ এপ্রিল একটি মামলার শুনানি চলাকালীন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলে কলকাতা হাইকোর্টও । এদিন প্রধান বিচারপতির এজলাসে শুনানি চলছিল। করোনার সময়ে প্রচার বন্ধের মামলায় চুড়ান্ত অসন্তোষ প্রকাশ করে হাইকোর্ট। আদালতের পর্যবেক্ষণ, ‘কমিশনের চূড়ান্ত ক্ষমতা তাও তার কোনও ব্যবহার নেই। এই সময় টি এন সেশনের দশ ভাগের একভাগ করে দেখাক কমিশন।’ আদালতের প্রশ্ন, ‘একটা সার্কুলার দিয়ে জনগণের ওপর সব ছেড়ে দিয়েছে কমিশন। পুলিশ, ক্যুইক রেসপন্স টিম সব আপনাদের আছে। ‘তাও কেন সেসবের ব্যবহার করছেন না?’