কলকাতা: এক লহমায় বদলে গিয়েছে জীবনটা। ভোট সন্ত্রাসের বলি তাঁর বাবা। বাসন্তীতে নিহত যুব তৃণমূল নেতার মেয়ে নিজেও তৃণমূল প্রার্থী। কিন্তু যে দলের জন্য জীবন বিপন্ন করে বাবার প্রাণটা গেল, সেই দলের হয়ে আর লড়তে চান না মনোয়ারা। আগেই জানিয়েছেন এই সিদ্ধান্তের কথা। ফের একবার বুঝিয়ে দিলেন কেন রাজ্য পুলিশের উপর ভরসা রাখতে পারছেনা না তিনি। একইসঙ্গে দলের শীর্ষ নেতাদের কাছে তাঁর আবেদন, সবাই যেন শান্তিতে থাকতে পারে তা নিশ্চিত করুন। এবিপি আনন্দের মহাযুদ্ধে (Maha Juddha ) এসে বললেন মনোয়ারা পিয়াদা।
পঞ্চায়েত নির্বাচনের (WB Panchayat Poll 2023) দিনক্ষণ ঘোষণা হতেই দিকে দিকে হিংসার ছবি। ভোট সন্ত্রাসে ঝরে যাচ্ছে একের পর এক প্রাণ। 'বেলাগাম হিংসাকে করা যাবে জয়? তেইশে ফিরবে না তো আঠেরোর ভয়?' শীর্ষক আলোচনায় মহাযুদ্ধের মঞ্চে দাঁড়িয়ে পিতৃহারা মেয়ের গলায় উঠে এল ক্ষোভের কথা। পঞ্চায়েত ভোটের আগে শনিবার রাতে গুলি করে খুন করা হয়েছে যুব তৃণমূল কর্মী জিয়ারুল মোল্লাকে। নিহতের মেয়ে তৃণমূলেরই পঞ্চায়েত সমিতির প্রার্থী মানোয়ারা পিয়াদা।
কী বললেন মনোয়ারা?
মহাযুদ্ধের মঞ্চে দাঁড়িয়ে মনোয়ারা বলেন, “আমার বাবা আমাদের মধ্যে এখন নেই। বাবা তৃণমূলের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। নিষ্ঠাভরে দলটা করতেন। মারা যাওয়ার এত ঘণ্টা পরেও রাজ্য পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করল না। বাবা যে দলের জন্য যে নিজের জীবন বিপন্ন করে তুলল তাদের কোনও নেতৃত্ব, মন্ত্রী পা রাখা তো দূর ফোন করে দুঃখ প্রকাশও করেনি। রাজ্য পুলিশের উপর ভরসা নেই বলে বলার পর অনেকে প্রশ্ন করেছেন। তাঁদের উদ্দেশে বলতে চাই, আমার বাবাকে দুবছর ধরে যে খুনের হুমকি দিত, বাবা বারবার কল রেকর্ডিং সহ থানায় গিয়েছে। নিরাপত্তার জন্য আবেদন করেছিলেন বাবা। প্রশাসন একবারের জন্য পাশে থাকেনি। বেঁচে থাকা অবস্থায় যে পুলিশ বাবার পাশে দাঁড়াল না, তাঁরা বাবা মৃত্যুর পর কী তদন্ত করবে, গ্রেফতার করবে কিনা, তা নিয়ে আশঙ্কায় ছিলাম। তাই রাজ্যপালের দ্বারস্থ হয়েছিলাম। প্রতিনিয়ত আমাকে সরিয়ে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছি। যে দলের জন্য লড়েছি, সেই দলই আমার বাবার জীবনটা কেড়ে নিয়েছে। সেই দল আমি আদৌ করব কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ আছে। রাজ্য পুলিশ কী কাজ করবে জানি না।’’
রাজ্যপালের উপর আস্থা: মনোয়ারা জানিয়েছেন, "যেদিন বাবা খুন হন, সেদিনই রাজ্যপালের সঙ্গে কথা হয় ফোনে। উনি বাড়িতে আসবেন বলে জানান। সুবিচারের আশ্বাসও দেন। সপরিবার সকাল থেকে আমরা তাঁর অপেক্ষায় ছিলাম। বাবা যেখানে খুন হয়েছিলেন সেখানে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু রাজ্যপাল বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছতে পারেননি। চক্রান্ত করে তাঁকে আসতে দেওয়া হয়নি। এবিপি আনন্দেই আমি ইন্টারভিউতে জানিয়েছিলাম সেই কথা। এরপর দুপুরে রাজ্যপালের ফোন পাই। এরপর আমি গিয়ে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করি। সাহয্য়ের এবং সুবিচারের আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।''
কাতর আবেদন মনোয়ারার: পিতৃহীন তৃণমূল প্রার্থীর কথায়, "নোংরা রাজনীতির জন্য আমার বাবার জীবনটা চলে গেল। বাবা তো আর ফিরে আসবে না। মুখ্যমন্ত্রী এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে বলতে চাই, সবাই যেন শান্তিতে সপরিবারে থাকতে পারে। আমার মতো পিতৃহারা যেন কাউকে না হতে হয়। প্রশাসন যেন দুই দিকটা দেখে একটু কাজ করে। মাকে বিধবা অবস্থায় দেখে বুকটা ফেটে যাচ্ছে। বলার আর কোনও ভাষা নেই।''
আরও পড়ুন: Oral Health: কতবার দাঁত মাজলে দূরে থাকবে হৃদরোগ? কী বলছে গবেষণা?