নয়াদিল্লি: দুই দলের সংঘাতে গোড়াতেই বেধেছিল গন্ডগোল। তাতে ভেস্তে যাওয়ার জোগড় হয়েছিল সবকিছু। কিন্তু বৃহত্তর ঐক্যের খাতিরেই সুর নরম করল কংগ্রেস (Congress)। দিল্লিতে আমলা নিয়োগ অর্ডিন্যান্সের বিরুদ্ধে আম আদমি পার্টির (AAP) পাশে দাঁড়িয়েছে তারা। পাল্টা সৌজন্য দেখিয়ে বিরোধী বৈঠকে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের দল আপ-ও। দুই রাজনীতিকের জন্যই এই সহাবস্থানে এসে পৌঁছনো সম্ভব হল।  তাঁরা আর কেউ নন, বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) এবং বিহারের মুখ্যমন্ত্রী তথা সংযুক্ত জনতা দলের নেতা নীতীশ কুমার। বিশেষ করে মমতাই দুই দলের মধ্যে সেতুবন্ধন গড়ে তোলেন বলে জানা যাচ্ছে (Oppositions Meet)। 


গত ২৩ জুন পটনায় বিজেপি বিরোধী শিবিরের প্রথম বৈঠক বসে। সেখানে বিজেপি-র বিরোধিতায় সকলে একমত হলেও, দিল্লির আমলা নিয়োগ অর্ডিন্য়ান্স ঘিরে কংগ্রেস এবং আপ-এর মধ্যে সংঘাত বাধে। বিরোধী শিবিরে যোগদানে রাজি হলেও, অর্ডিন্যান্স নিয়ে কংগ্রেসের নীরবতায় প্রশ্ন তোলেন কেজরিওয়াল। প্রকাশ্যে কংগ্রেস এর বিরোধিতা না করলে, বিরোধী শিবিরে যোগদান নিয়ে তাঁদেরও ভাবতে হবে বলে জানিয়ে দেন। তাতে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গের সঙ্গে বচসায় জড়ান কেজরিওয়াল। তার উপর আপ-শাসিত পঞ্জাবে কংগ্রেসের ওপি সোনির গ্রেফতারি আরও দূরত্ব বাড়ায়। পটনার ওই বৈঠকেই দুই পক্ষের মধ্যে মধ্যস্থতা করতে এগিয়ে যান মমতা এবং নীতীশ। চায়ের আড্ডায় ভুল বোঝাবুঝি মিটিয়ে নিতে বলেন মমতা।


আরও পড়ুন: NCP Crisis : ভাঙনের পর প্রথমবার, কাকা শরদের মুখোমুখি অজিত, বাকি বিক্ষুব্ধদের সঙ্গে নিয়ে বৈঠকও


পটনার সেই বৈঠকের পর এক এক করে দিন পেরিয়ে যেতে থাকলেও, অর্ডিন্যান্স নিয়ে কোনও উচ্চবাচ্য করেতে শোনা যায়নি কংগ্রেসকে। তাতে আপ-ও জানিয়ে দেয়, কংগ্রেস দাবি না মানলে, মাথা নোয়াবে না তারাও। এর পর খড়্গে নিজে কেজরিওয়ালকে ফোন করে ১৭ জুলাই বেঙ্গালুরুতে আয়োজিত বিরোধীদের দ্বিতীয় বৈঠকে আমন্ত্রণ জানান। কিন্তু সরাসরি হ্যাঁ বা না বলার পরিবর্তে, ফোনে কেজরিওয়াল তাঁকে ঝুলিয়েই রাখেন বলে জানা যায়। 


এর পর সংসদের বাদল অধিবেশনের আগে শনিবার কংগ্রেসের সংসদীয় দলের বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়। তার পর কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ জানান, রাজ্যগুলির যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোয় আঘাত কাম্য নয়। কোনও ভাবে কেন্দ্রীয় সরকার তা করলে, কংগ্রেস আগের মতোই বিরোধিতা করবে। এর পর রবিবার কেসি বেণুগোপাল জানিয়ে দেন, অর্ডিন্যান্সের বিরুদ্ধেই কংগ্রেস। 


কিন্তু প্রকাশ্যে কংগ্রেসের এই ঘোষণার নেপথ্যে নীতীশ এবং মমতা ছিলেন বলে জানা গিয়েছে। সূত্রের খবর, কংগ্রেস যদি নিজের অবস্থান স্পষ্ট ভাবে না জানায়, তাহলে বিরোধী ঐক্যে সিলমোহর পড়ার আগেই দিল্লি এবং পঞ্জাবের সমান গহ্বর তৈরি হবে জোটের গায়ে। সরাসরি খড়্গে ফোন করে সেকথা জানান মমতা। প্রকাশ্যে অবস্থান ঘোষণা করতে আর্জি জানান। তার পরই বেণুগোপাল এগিয়ে আসেন। তাতে সাড়া দিয়ে আপ-ও জানিয়েছে, বেঙ্গালুরুর বৈঠকে উপস্থিত থাকবে তারা। 


 শুধুমাত্র ভুল বোঝাবুঝির জন্যই এই পরিস্থিতি তৈরি হল বলে যদিও দাবি করেছেন ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ওমর আব্দুল্লা। তিনি জানিয়েছেন, পটনার বৈঠকেও এই একই বার্তা দিয়েছিলেন কংগ্রেস সভাপতি। নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট ভাবেই জানিয়েছিলেন। অর্ডিন্যান্সের প্রশ্নে বরাবরই দ্বর্থ্যহীন ভাবে নিজেদের অবস্থান জানিয়েছে এসেছে কংগ্রেস।