সৌভিক মজুমদার, প্রকাশ সিনহা ও কমলকৃষ্ণ দে, ভাতার ও কলকাতা : 'SSC আলাদা, শিক্ষা দফতর আলাদা। সবটা আমি করি না।' আজ নিয়োগ দুর্নীতি প্রসঙ্গে এই মন্তব্য় করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাল্টা বিরোধীরা কটাক্ষ করে বলছে, অতিরিক্ত শূন্য়পদ তৈরির নামে যে দুর্নীতি হয়েছে, তা থেকে নিজেকে আড়ালের চেষ্টা করছেন মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়।
অতিরিক্ত শূন্য়পদ তৈরি নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের রায়ে ইতিমধ্য়েই নজরে চলে এসেছে রাজ্য় মন্ত্রিসভা ! আর রায়ের পরের দিনই কি এই ইস্য়ুতে নিজের ভূমিকা নিয়ে ব্য়াখ্য়া দেওয়ার চেষ্টা করলেন মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায় ? আর তত বেশি করে তাঁকেই চেপে ধরার চেষ্টা শুরু করল বিজেপি ?
কলকাতা হাইকোর্টের বিশেষ ডিভিশন বেঞ্চের রায়ের ২৬৯ নম্বর পৃষ্ঠায় স্পষ্ট বলা হয়েছে, অতিরিক্ত শূন্য়পদে নিয়োগ নিয়ে CBI তদন্তের উদ্দেশ্য়, এটা সামনে আনা যে, এক্ষেত্রে কী ধরনের দুর্নীতি হয়েছে, কত বড় দুর্নীতি হয়েছে এবং কারা কারা জড়িত। এটা চমকে দেওয়ার মতো যে, জালিয়াতি করে পাওয়া চাকরি বাঁচানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল মন্ত্রিসভার মতো জায়গায়। এটা জেনেও যে, এইসব চাকরি হয়েছে প্য়ানেলের বাইরে এবং মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়া প্য়ানেল থেকে।
রায়ের কপির ২৭৩ এবং ২৭৪ নম্বর পৃষ্ঠায় নির্দেশের অংশে বিচারপতিরা বলেছেন, বেআইনি চাকরি প্রাপকদের সুযোগ করে দিতে, অতিরিক্ত শূন্য়পদ তৈরির ছাড়পত্র দিয়েছিলেন রাজ্য় সরকারের কোন ব্য়ক্তিরা, তা নিয়ে CBI আরও তদন্ত চালাবে। প্রয়োজন পড়লে CBI তাঁদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করতে পারবে।
এই রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে এদিন ভাতারের সভায় মমতা বলেন, "যদি বলতেন, এখানে অসুবিধা আছে, এটা তোমার ভুল হয়েছে, তুমি সংশোধন করো, আমরা করে দিতাম। ভুল তো যে কোনও কেউ করে ফেলতে পারে, সবটা কি আমি করি ? আমি করি না।" তিনি আরও বলেন, "শিক্ষা দফতর আলাদা দফতর আছে, SSC আলাদা আছে, প্রাইমারি বোর্ড আলাদা আছে, মাধ্যমিক বোর্ড আলাদা আছে, কলেজ কমিশন আলাদা আছে, এগুলি তারা দেখে।"
পাল্টা বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর বক্তব্য, "সম্পূর্ণ দায়িত্ব মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের। আমাদের একটাই দাবি, মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায় ও তাঁর সব সহযোগীকে গ্রেফতার করুন, যাঁরা ২০২২ সালের ৫ মের মন্ত্রিসভার বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।" তাঁর সংযোজন, "হাইকোর্টের পরিষ্কার রায় আছে, অতিরিক্ত পদ সৃষ্টি করার জন্য যে দায়ী তাঁর বিরুদ্ধে সিবিআইয়ের অ্যাকশন হতে হবে।"
এর আগে বিচারপতি থাকাকালীন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্য়ায়ের এজলাসে অতিরিক্ত শূন্য়পদ প্রসঙ্গে মন্ত্রিসভার কথা উঠে এসেছিল। ২০২২ সালের ২৫ নভেম্বর আদালতে উপস্থিত শিক্ষাসচিব মণীশ জৈনের কাছে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় জানতে চেয়েছিলেন, অতিরিক্ত শূন্যপদ কেন তৈরি করা হল ? উত্তরে শিক্ষাসচিব বলেন, উপযুক্ত স্তর থেকেই নির্দেশ দেওয়া হয়। ব্রাত্য বসু নির্দেশ দিয়েছিলেন। আইনি পরামর্শ নেওয়ার কথা বলেছিলেন। আইনজীবী ও অ্যাডভোকেট জেনারেলের সঙ্গে কথা হয়েছিল। আইন দফতরের সঙ্গেও কথা বলি। কথা হয়, স্কুল সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যানের সঙ্গে। মুখ্যসচিবকে বিষয়টি জানানো হয়। নোট পাঠানো হয় ক্যাবিনেটে।
কলকাতা হাইকোর্টের সোমবারের রায়েও সেই প্রসঙ্গ উঠে এসেছে। রায়ের কপির ২১৫ নম্বর পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে, বেআইনি নিয়োগের জন্য় SSC অতিরিক্ত শূন্য়পদ তৈরির আবেদন জানিয়েছিল। রাজ্য় সরকারও তার বিরোধিতা করেনি। এমনকী, আদালতে পেশ করা নথিতে দেখা গেছে, বেআইনিভাবে চাকরি পাওয়া প্রার্থীদের জায়গা করে দিতে, রাজ্য়ের মন্ত্রিসভা অবধি অতিরিক্ত শূন্য়পদ তৈরিতে ছাড়পত্র দিয়েছিল। প্রধান সচিব সিঙ্গল বেঞ্চে হাজির হয়ে, অতিরিক্ত শূন্য়পদ তৈরি সংক্রান্ত ক্য়াবিনেট নোট এবং ক্য়াবিনেট মেমো পেশ করেছিলেন।
এপ্রসঙ্গে বিদায়ী সাংসদ ও বিজেপি প্রার্থী অগ্নিমিত্রা পাল বলেন, "আপনার নির্দেশে এই চুরি হয়েছে। আমি মহামান্য আদালতের কাছে আমি অনুরোধ করব এবং দৃষ্টি আকর্ষণ করব যে, মমতা ব্যানার্জিকে CBI তদন্তের আওতায় আনা হোক কারণ, এই রাজ্যে ওঁর নির্দেশ একটা গাছের পাতাও নড়ে না। দরকার হলে ওঁকে গ্রেফতার করা হোক এবং গ্রেফতার করে ওঁর জিজ্ঞাসাবাদ হোক।"
এবার কী হবে, সেদিকেই সবার নজর।