নয়াদিল্লি: সক্রিয় রাজনীতি থেকে অবসর নিলেও, নির্বাচনী মরশুমে ঘুরেফিরে তাঁর নাম উঠে এসেছে বারং বার। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মুখেই বার বার শোনা গিয়েছে পূর্বসূরি মনমোহন সিংহের নাম। দেশের সম্পদের উপর মুসলিমদের প্রথম অধিকার বলে মনমোহন সরকারকে বার বার উদ্ধৃত করেছেন মোদি। এবার মোদির সেই দাবির জবাব দিলেন মনমোহন। কখনও কোনও সম্প্রদায়কে অন্য সম্প্রদায়ের থেকে আলাদা করে দেখেননি বলে মোদিকে জবাব দিলেন তিনি। (Manmohan Singh)


বৃহস্পতিবার দেশবাসীর উদ্দেশে একটি খোলা চিঠি লিখেছেন মনমোহন, তাতেই মোদির দাবি খণ্ডন করেছেন তিনি। মনমোহনের কথা, 'চলতি নির্বাচনে রাজনৈতিক আলোচনাগুলি মন দিয়ে দেখছি। একের পর এক জঘন্য ঘৃণাভাষণ দিয়েছেন মোদিজি, যা সরাসরি বিভাজনমূলক। মোদিজিই প্রথম প্রধানমন্ত্রী, যিনি প্রধানমন্ত্রী পদটির মর্যাদা এবং প্রধানমন্ত্রীর দফতরের গুরুত্ব এত নীচে নামিয়ে এনেছেন'। (Manmohan on Modi)


মনমোহন চিঠিতে লিখেছেন, 'দেশের একটি নির্দিষ্ট শ্রেণির মানুষ এবং বিরোধীদের নিশানা করতে আগের কোনও প্রধানমন্ত্রী এমন জঘন্য, অসংসদীয় এবং নিম্নমানের ভাষার প্রয়োগ করেননি। আমার মন্তব্য বলে কিছু মিথ্যে দাবি করা হয়েছে। জীবনে কখনও এক সম্প্রদায়কে অন্য সম্প্রদায়ের থেকে আলাদা করে দেখিনি আমি। বিজেপি-র এটাই স্বভাব এবং অভ্যাস'।



খোলা চিঠিতে দেশে শান্তি এবং সম্প্রীতির পরিবেশ বজায় রাখতে আর্জি জানিয়েছেন মনমোহন। তাঁর আর্জি, 'উন্নয়ন এবং সার্বিক অগ্রগতির পক্ষে পঞ্জাবের মানুষকে ভোট দিতে আর্জি জানাচ্ছি আমি। যুবজমাসকে বলব, ভোটদান নিয়ে সজাগ হোন, ভবিষ্যতের কথা ভেবে ভোট দিন। একমাত্র কংগ্রেসই উন্নয়ন নির্ভর, ভবিষ্যৎমুখী প্রগতির প্রতিশ্রুতি দিতে পারে, যেখানে গণতন্ত্র এবং সংবিধান সুরক্ষিত থাকবে'। মনমোহনের কথায়, "স্বৈরাচারী শাসকের অবিরাম আঘাত থেকে গণতন্ত্র এবং সংবিধানকে বাঁচানোর এটাই শেষ সুযোগ।"


গত মাসেই রাজস্থানে নির্বাচনী প্রচীরে গিয়ে মনমোহনের কথা উল্লেখ করেন মোদি। তাঁকে বলতে শোনা যায়, 'কংগ্রেসের নির্বাচনী ইস্তেহার বলছে, ওরা মা-বোনেদের সোনা ছিনিয়ে বিলিয়ে দেবে। মনমোহন সিংহের সরকার বলেছিল, দেশের সম্পদের উপর প্রথম অধিকার মুসলিমদেরই। শহুরে নকশালদের এই মানসিকতা মা-বোনেদের মঙ্গলসূত্রও ছাড়বে না'।


মোদির এই দাবি নিয়ে বিতর্ক শুরু হতে সময় লাগেনি। মনমোহন সরকারের মন্তব্যকে তিনি বিকৃত করে সকলের সামনে তুলে ধরছেন বলে পাল্টা দাবি সামনে আসে বিরোধীদের তরফে। ২০০৬ সালের ডিসেম্বরে ন্যাশনাল ডেভলপমেন্ট কাউন্সিলের বক্তৃতায় মনমোহনের সেই উক্তিও সামনে আসে, যেখানে তাঁকে ,বলতে শোনা গিয়েছিল, "আমাদের লক্ষ্য একেবারে স্পষ্ট। কৃষি, সেচ এবং জলসম্পদ, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, গ্রামীণ পরিকাঠামোয় বিনিয়োগ, সাধারণ ক্ষেত্রেও গণ পরিকাঠানোয় বিনিয়োগ বাড়ানো জরুরি। পাশাপাশি, তফসিলি জাতি, তফসিলি উপজাতি, অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি,  সংখ্যালঘু, মহিলা এবং শিশুদের জন্য উন্নয়নমূলক প্রকল্পকেও প্রাধান্য দিচ্ছি আমরা।  তফসিলি জাতি এবং উপজাতিদের জন্য তৈরি প্রকল্পগুলিকে পুনরুজ্জীবিত করতে হবে। সংখ্যালঘু বিশেষ করে মুসলিম সংখ্যালঘুরা যাতে উন্নয়নের সমান সুফল পান, তার পরিকল্পনা করতে হবে। দেশের সম্পদের উপর ওঁদের অগ্রাধিকার দিতে হবে।"


পরে মনমোহনের দফতর থেকে বিবৃতি দিয়ে আরও স্পষ্ট ভাবে বলা হয় যে, তফসিলি জাতি, উপজাতি, অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি, মহিলা, শিশু এবং সংখ্যালঘুদের দেশের সম্পদের উপর অগ্রাধিকারের কথাই বলেন মনমোহন। ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে মনমোহনের সেই উক্তিই মোদি বিকৃত করে সকলের সামনে তুলে ধরেছেন বলে অভিযোগ বিরোধীদের।