ভরতপুর : পঞ্চায়েতের টিকিট নিয়ে দলের বিরুদ্ধে তোপ দাগার পরের দিনই মিছিল করে পথে নামলেন ভরতপুরের বিধায়ক হুমায়ুন কবীর। দল যাঁদের প্রতীক দেয়নি, সেই সব আসনে নির্দল প্রার্থীদের জেতানোর ডাক দিয়েছেন তৃণমূল বিধায়ক। টিকিট বিলি নিয়ে গতকালই দলের শাওনি সিংহ রায়-সহ জেলা ও রাজ্য নেতৃত্বকে নিশানা করেন হুমায়ুন। আজ সকালে ভরতপুর বিধানসভা এলাকার সালারে দলীয় ব্লক সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান সুমনকে বাদ দিয়ে প্রাক্তন ব্লক সভাপতি ও জেলা পরিষদের নির্দল প্রার্থী মহম্মদ আজহারউদ্দিন ওরফে সিজারকে নিয়ে মিছিল করলেন তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবীর। দলের নির্দেশকে উপেক্ষা করে খোলাখুলি নির্দলদের সমর্থন করার কথা ঘোষণাও করেছেন হুমায়ুন। তিনি বলেছেন, "প্রতীক চেয়ে আমরা যাঁরা বঞ্চিত হয়েছি, তাঁদের যাঁদের নৌকা চিহ্ন বা চেয়ার চিহ্ন, তাঁদেরকে আমার পূর্ণ সমর্থন থাকবে। আমরা নির্বাচনে তাঁদের জেতাব। কোনও মানুষকে যদি কেউ চমকায়-ধমকায়,  তাঁদের সঙ্গে মোকাবিলা করার দায়িত্ব হুমায়ুন কবীরের।"


পঞ্চায়েতের প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পরই মুর্শিদাবাদে তৃণমূলের অন্দরের ক্ষোভ বাইরে চলে আসে। একসঙ্গে সাংবাদিক বৈঠক করে, প্রার্থীপদ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন মুর্শিদাবাদের ৪ তৃণমূল বিধায়ক- হুমায়ুন কবীর, রবিউল আলম চৌধুরী, শাহিনা মমতাজ বেগম এবং আব্দুর রজ্জাক। বেনজির এই ক্ষোভের জেরে অস্বস্তি বেড়েছে জেলা তৃণমূলের। 


পঞ্চায়েত ভোটে প্রার্থীপদ ঘিরে তৃণমূলের অন্দরে বেনজির ক্ষোভ! একই জেলার শাসকদলের ৪ বিধায়ক পাশাপাশি বসে কার্যত নিশানা করেন শীর্ষ নেতৃত্বকে। প্রয়োজনে দলের ঘোষিত প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্দল কাঁটা বিছিয়ে দেওয়ারও প্রচ্ছন্ন হুঁশিয়ারি শোনা যায় হুমায়ুন কবীর, রবিউল আলম চৌধুরী, সাহিনা মমতাজ এবং আব্দুর রাজ্জাকের মতো তৃণমূল বিধায়কদের গলায়!


রেজিনগরের তৃণমূল বিধায়ক রবিউল আলম চৌধুরী বলেন, 'আমিই প্রথম মুর্শিদাবাদে তৃণমূল বিধায়ক হিসাবে যোগ দিয়েছিলাম। আমাকে অভিষেক সংগঠন দেখতে বলেছিল। সংগঠন দেখেছি। আজ সেই আমিই ব্রাত্য হয়ে গেলাম।'


মুর্শিদাবাদ সেই জেলা, অতীতে যেখানকার ভোটে গোঁজ-শামুকে পা কেটেছে বিভিন্ন দলের অফিসিয়াল প্রার্থীদের। ২০০১ সালেই নওদায় কংগ্রেস ও তৃণমূলের জোট প্রার্থী ও শাহিনা মমতাজের শ্বশুর নাসিরুদ্দিন খানের বিরুদ্ধে নির্দল প্রার্থী হিসাবে আবু তাহের খান, হরিহরপাড়ায় জোট প্রার্থী মহফুজ আলম ডালিমের বিরুদ্ধে নির্দল প্রার্থী হিসাবে নিয়ামত শেখকে জিতিয়ে এনেছিলেন অধীর চৌধুরী। আবার ২০০৬-এ কান্দিতে কংগ্রেসের অফিসিয়াল প্রার্থী অতীশ সিন্হার বিরুদ্ধে অপূর্ব সরকার, বহরমপুরে কংগ্রেস প্রার্থী মায়ারানি পালের বিরুদ্ধে মনোজ চক্রবর্তীকে জিতিয়ে এনেছিলেন সেই অধীরই। এখন রাজনীতির ফেরে মনোজ চক্রবর্তী বাদে, বাকি সবাই কেউ তৃণমূলের বিধায়ক, কেউ সাংসদ। হুমায়ুন কবীরও একসময় কংগ্রেসের বিধায়ক ছিলেন...পরে যোগ দেন তৃণমূলে। একদা কংগ্রেসের বিধায়ক হিসাবে জয়ী রবিউল আলম চৌধুরীও পরে শিবির বদলে তৃণমূলে চলে যান। আব্দুর রাজ্জাকও জলঙ্গি থেকে ২ বারের সিপিএম বিধায়ক। পরে যোগ দেন তৃণমূলে। ২০১৬-র বিধানসভা ভোটের পরে, শুভেন্দু অধিকারী যখন তৃণমূলের পর্যবেক্ষক হিসাবে মুর্শিদাবাদের দায়িত্বে, তখনই এদের প্রত্যেককে দলে টেনে, নবাবের জেলায় কংগ্রেসের কেল্লা নাড়িয়ে দিয়েছিল তৃণমূল। আর এখন এই ৪ বিধায়কই, প্রার্থীপদ নিয়ে বিবাদের জেরে একসুরে নিজেদের দলেরই নেতৃত্বের দিকে আঙুল তুলছেন।


হুমায়ুন কবীর এর আগে বলেছিলেন, ৯০ পারসেন্ট প্রার্থী নিয়েছেন জেলা চেয়ারম্যান। আমি ১০ পারসেন্ট। আমি কি ভিখারি নাকি!


বিষয়টি নিয়ে রীতিমতো অস্বস্তিতে বহরমপুর-মুর্শিদাবাদ সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের কর্তাব্যক্তিরা!