সৌভিক মজুমদার, মনোজ বন্দোপাধ্য়ায় ও আশিস বাগচী:  কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে নির্দেশ দিতে গিয়ে, ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত ভোটকে কার্যত মাপকাঠি হিসেবে বেঁধে দিল কলকাতা হাইকোর্ট। এক দশক আগে সেই পঞ্চায়েত ভোটের সময়, কেন্দ্রীয় বাহিনীর জন্য় সুপ্রিম কোর্ট অবধি গেছিলেন তৎকালীন রাজ্য় নির্বাচন কমিশনার মীরা পাণ্ডে। পঞ্চায়েত ভোট পরিচালনার ক্ষেত্রে কমিশনই যে শেষ কথা, সেকথাও বারবার বুঝিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। কলকাতা হাইকোর্ট রাজ্য় নির্বাচন কমিশনারকে ভৎসনা করার পর, কমিশনের ভূমিকায় ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছে বিরোধীরাও। আর এ প্রসঙ্গেই বারবার অনেকে ফিরে যাচ্ছেন ১০ বছর আগে। 


২০১৩-র পঞ্চায়েত ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জন্য়, তৎকালীন রাজ্য় নির্বাচন কমিশনার মীরা পাণ্ডের লড়াই। এখনও গোটা দেশে তা নজির। এক দশক কেটে আরও একটি পঞ্চায়েত ভোটের আগে, কার্যত তাঁর লড়াইয়ের ফলকেই, মানদণ্ড হিসেবে সামনে রাখল কলকাতা হাইকোর্ট। আদালত এদিন স্পষ্টই জানিয়েছে, ২০১৩ সালে যে পরিমাণ বাহিনী মোতায়েন ছিল, তার থেকে কম বাহিনী চাইলে হবে না। বরং তার থেকে বেশি চাইতে হবে। পাশাপাশি, রাজ্য় নির্বাচন কমিশনার হিসেবে মীরা পাণ্ডের ভূমিকা মনে করিয়ে, প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ এদিন বলেছে, ২০১৩ সালে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জন্য় এই কমিশন সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গেছিল। আমরা বুঝতে পারছি না এই নির্বাচনে সেই কমিশনের স্বতন্ত্রতার কী হল?


২০১৩ সালে সুষ্ঠু ভোটের স্বার্থে, দফা এবং কেন্দ্রীয় বাহিনীর মতো বিষয়ে, রাজ্য় সরকারের সঙ্গে সংঘাতের পথে হেঁটেছিলেন তৎকালীন রাজ্য় নির্বাচন কমিশনার মীরা পাণ্ডে। তখন রাজ্য় সরকার কমিশনকে নিরাপত্তা বাহিনী সংক্রান্ত তথ্য় না দেওয়ায় খোলাখুলি তা নিয়ে সরব হয়েছিলেন মীরা পাণ্ডে। তৎকালীন রাজ্য় নির্বাচন কমিশনার মীরা পাণ্ডে বলেছিলেন, 'আমরা গভর্নমেন্টের সঙ্গে ইমিডিয়েটলি টেক আপ করব, যে এখনও অবধি আমাদের ইনফরমেশন অ্য়াস পার কোর্ট অর্ডারও দেওয়া হয়নি। সব ডিটেলসও দেওয়া আছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে কত সিকিওরিটি ফোর্স লাগবে, না লাগবে।'


সুপ্রিম কোর্টের রায়ের দিনে দিল্লি অবধি চলে গেছিলেন মীরা পাণ্ডে। আগাগোড়া নজর রেখেছিলেন সওয়াল-জবাবে। তারপরও তিনি বারবার বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, অবাধ ভোটের দায়িত্ব রাজ্য় নির্বাচন কমিশনের হাতেই। সেই সময়ে অবাধ ও সুষ্ঠু ভোটের স্বার্থে কেন্দ্রীয় বাহিনীর প্রয়োজনীয়তা নিয়ে বারবার সরব হয়েছিল এবিপি আনন্দও। সেই সময়ে রাজ্য় নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী হিসেবে সওয়াল করেছিলেন প্রয়াত ব্য়ারিস্টার সমরাদিত্য় পাল। তিনিও সেই সময়ে এবিপি আনন্দকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বারবার বলেছিলেন, সংবিধান অনুযায়ী, পঞ্চায়েত ভোট করানোর ক্ষেত্রে রাশ থাকে রাজ্য় নির্বাচন কমিশনের হাতেই। সেই সময়েই আইনজীবী সমরাদিত্য় পাল বলেছিলেন, 'কনস্টিটিউশন নিয়ে যারা কী বলব, খেলা করার চেষ্টা, সেটা নিশ্চয়ই এই সব জাজমেন্ট দিয়েই সেই বার্তাটা তাদের কানে পৌঁছোবে। পার্টিকুলারলি সরকারদের বা পাবলিক অথরিটিদের, যে তারা যেন সংবিধানটা একটু ভাল করে, দেখে, তারপর রাজত্ব করে।'


১০ বছর বাদে এই ২০২৩ সালেও এবিপি আনন্দ বারবার সেই কেন্দ্রীয় বাহিনীর প্রয়োজনীয়তার কথাই বলেছে। একদশক আগের সেই পরিস্থিতিকেই মানদণ্ড করে, এবারের পঞ্চায়েত ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনী আনার নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। 


আরও পড়ুন: রাজ্য নির্বাচন কমিশনারের জয়েনিং রিপোর্ট গ্রহণ করলেন না রাজ্যপাল