সুনীত হালদার, হাওড়া: পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে প্রথম থেকেই হানাহানি, মারপিট-হিংসার ছবি সামনে এসেছে। রক্তপাত, হিংসার ঘটনার থেকে চোখ সরালে এই নির্বাচনের আরও একটি দিক রয়েছে, তা হল অর্থনৈতিক দিক। নির্বাচন এলেই তার সঙ্গে প্রয়োজন পড়ে পতাকা, ফ্লেক্স, ব্যানারের। ফলে চাহিদাও এক লাফে বেড়ে গিয়েছে অনেকটাই। আর তাতেই লাভের মুখ দেখছেন এর সঙ্গে যুক্ত ছোট-বড় ব্যবসায়ী, শ্রমিকরা। এই শিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছেন বহু মানুষ। হাওড়া জেলায় বেশ স্পষ্ট এই ছবি। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে রাজনৈতিক দলের অর্ডার মতো পতাকা সরবরাহ করতে হবে। তাই খাওয়ার সময়ও পাচ্ছেন না কারিগররা। রাত জেগে চলছে কাজ। নির্বাচনের মুখে একটু বাড়তি লাভের মুখ দেখতে পেয়ে খুশি মালিক এবং কারিগররা।


ডোমজুড়ের উনসানি এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক দলের পতাকা তৈরি করছেন রাজু হালদার। সব রাজনৈতিক দলের পতাকা তৈরি করেন তিনি। এর পাশাপাশি স্বাধীনতা দিবস, প্রজাতন্ত্র দিবসের জন্য জাতীয় পতাকাও তৈরি করেন। ওই দিনগুলিতে তো ব্যস্ততা থাকেই। আর ব্যস্ততা বেড়ে যায় নির্বাচন এলে। আগেভাগেই প্রস্তুতি নিয়ে রাখেন, কিন্তু এবার হঠাৎ করেই পঞ্চায়েত নির্বাচন ঘোষণা হয়ে গিয়েছে। আর তারপরেই পতাকার অর্ডারের ঢল নেমেছে। যার ফলে হঠাৎ করে চাপও অনেক বেড়ে গিয়েছে। এখন দিনরাত এক করে তৃণমূল, কংগ্রেস, বিজেপি, সিপিএম এবং আইএসএফ-এর পতাকা তৈরি করে চলেছেন তাঁরা। পঞ্চায়েত ভোটে বড় ভূমিকা নেন নির্দল প্রার্থীরাও। ফলে তাঁদের চিহ্ন দেওয়া পতাকার অর্ডারও রয়েছে। কারিগরদের তৈরি ছোট-বড় বিভিন্ন মাপের পতাকা চলে যাচ্ছে উত্তরবঙ্গ এবং দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায়।


পতাকার পাশাপাশি রয়েছে চিহ্ন দেওয়া টি-শার্টের অর্ডার। যা পরে প্রচার চালান দলের কর্মীরা। এক কর্মচারী শেখ সাইফুদ্দিন জানান কাজের এত চাপ যে তাঁরা খাওয়া-দাওয়ার সময় পাচ্ছেন না। সকাল দশটার টিফিন খেতে খেতে কখনও দুপুর বারোটা হয়ে যাচ্ছে। অনেকসময় দুপুরের খাবার খেতে বসছেন বিকেল পেরিয়ে। 


ভোট হঠাৎ ঘোষণা হয়ে যাওয়ার ফলে তাঁদের কাজের চাপ বেড়ে গিয়েছে। সব রাজনৈতিক দলই চাইছে, তাদের যেন তাড়াতাড়ি পতাকা দিয়ে দেওয়া হয়। আর একজন কর্মচারী শেখ মোর্সেলিন আবার ছুটি পাচ্ছেন না। তিনি জানান, কাজের চাপে তাঁদের বাড়ি যাওয়া বন্ধ। ভোটের পর সব অর্ডার শেষ হলে তারপর ছুটি পাবেন বলে জানিয়েছেন তিনি। কারখানার মালিক রাজু হালদার জানান, তাঁর কারখানায় ১০ জন কারিগর কাজ করেন। তাঁরা কাজ করেও সামাল দিতে পারছেন না। কোনও কোনও দিন মাঝরাত পর্যন্ত কাজ চলছে। চাপ সামলাতে ভরসা করতে হয়েছে আশপাশে কারও কারও উপর। কিছু কিছু বাড়িতে সেলাইয়ের জন্য জিনিসপত্র পাঠানো হচ্ছে। রাজু হালদার বলেন, 'যেহেতু এখান থেকে গোটা পশ্চিমবঙ্গে পতাকা সরবরাহ করা হচ্ছে তাই কাজের চাপ একটু বেশি।'


কাজের চাপ বেশি হলেও বাড়তি লাভ হওয়ায় খুশি কারখানার মালিক এবং কর্মীরা। গণতন্ত্রের উৎসবে সামিল হওয়াও হচ্ছে, পাশাপাশই আসছে বাড়তি লাভ।


আরও পড়ুন: প্রতিদিন নিয়মিত মধু সেবনে কী কী উপকার হতে পারে আমাদের স্বাস্থ্যের?