সমীরণ পাল, উত্তর ২৪ পরগনা:  পঞ্চায়েত নির্বাচনের (Panchayat Election 2023) ফল প্রকাশের পর থেকেই ভোট পরবর্তী হিংসায় ( Panchayat Post Poll Violence) জ্বলছে গোটা বাংলা। কখনও বিরোধীদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে, কখনও টিউবয়েলের মুখ চুরি করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, আবার কখনও শাসকের ফলন্ত ফসলের ক্ষেত নষ্ট করা হচ্ছে। আর এমনই ঘটনা কয়েকদিন ধরে ঘটে চলেছে হাবড়া দু নম্বর ব্লকের রাজীবপুর বিরা গ্রাম পঞ্চায়েতের হালিয়াডাঙ্গা এলাকায়। সেখানেই একজোট হয়ে রুখে দাঁড়ালেন তৃণমূল এবং বিজেপি দুই সদ্য নির্বাচিত নবাগতা সদস্যা।


পোড়খাওয়া অভিজ্ঞ নেতারা যেভাবে একে অপরের বিরুদ্ধে বিষোদগার করছেন, এখানে তাঁর অন্য ছবি। রাজীবপুর বিড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের ৯৫ নম্বর বুথে এবার জয়ী হয়েছেন বিজেপির সদস্যা ঝর্ণা মন্ডল রাজনীতিতে এবার তার প্রথম জয়। অন্যদিকে ঝর্ণা মন্ডলের প্রতিবেশী চন্দ্রা মন্ডল জেলা পরিষদের ১৯ নম্বর সিট থেকে এবার তৃণমূলের সদস্যা নির্বাচিত হয়েছেন। তিনিও নবাগতা। এর আগে স্বামী ভাস্কর মন্ডল জেলা পরিষদের ওই সিটে জয়ী সদস্য ছিলেন। ভোটের রেজাল্ট বেরোনোর পর থেকে হালিয়াডাঙ্গা গ্রামে হচ্ছে একের পর এক হিংসার ঘটনা। যাতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সাধারণ বিজেপি অথবা তৃণমূলের সদস্য সমর্থকরা।


কখনও টিউবয়েলের মুখ খুলে নিয়ে যাচ্ছে দুষ্কৃতীরা কখনও শাসক তৃণমূলের ওলের ক্ষেত কুপিয়ে শেষ করে দেওয়া হয়েছে। আবার বিজেপি সমর্থকের ধানের বীজতলা বিষাক্ত পাউডার ঢেলে নষ্ট করে দিয়েছে দুষ্কৃতীরা। শনিবারে এরপরেই একসঙ্গে মাঠে নামলেন দুই জয়ী সদস্যা দুজনেই রাজনীতিতে নবাগতা। গ্রামবাসীদের কাছে গিয়ে বলেছেন নিজেদের মধ্যে হিংসা না করতে, প্রকৃত যারা অপরাধী তাদের ঠিক খুঁজে বের করবে পুলিশ প্রশাসন কিন্তু অযথা যেন একপক্ষ আরেকপক্ষকে দোষ না দিয়ে নিজেরা যেনও গন্ডগোল- অশান্তিতে জড়িয়ে না পড়েন। তাহলে সুবিধা হয়ে যাবে সেই সব দুষ্কৃতীদের যারা নিজেদের মধ্যে ভেদাভেদ তৈরি করতে চায়।


নজিরবিহীন এই ঘটনায় মুগ্ধ বিজেপি এবং তৃণমূলের উচ্চ নেতৃত্ব। বারাসাত জেলা বিজেপির সভাপতি তাপস মিত্র জানান, প্রথমদিকে বিজেপি সমর্থকদের কলের মুখ খুলে নেওয়া হয়েছিল, ধানের বীজতলাও নষ্ট করা হয়েছে ঘটনার পেছনে তৃণমূলের হেরে যাওয়া অন্যতম কারণ বলে তাপস বাবুর দাবি। পাশাপাশি নবাগতা বিজেপি সদস্যা এবং তৃণমূলের জেলা পরিষদের সদস্যের উদ্যোগকেও তিনি স্বাগত জানিয়েছেন। পশুবাবুর মতে মিলেমিশে রাজনীতি করাটা ভালো লক্ষণ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও সুশাসন চান।


একই রকম ভাবে হাবরা দু'নম্বর ব্লকের তৃণমূল নেতা এবারে হাবরা দুই পঞ্চায়েত সমিতি থেকে জয়ী প্রার্থী গুপি মজুমদার একই সুরে বললেন এ ঘটনা খুবই ভালো। সাধারণ মানুষের ক্ষতি আটকাতে দু প্রার্থী যেভাবে এগিয়ে এসেছে তা প্রশংসনীয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এমনটাই চাইছেন।প্রাক্তন জেলা পরিষদ সদস্য তৃণমূল নেতা ভাস্কর মন্ডল জানান, তার নিজের ওলের ক্ষেত দুষ্কৃতীরা কেটে নষ্ট করে দিয়েছে। তবে এই ঘটনার পেছনে কিছু স্বার্থান্বেষী মানুষ রয়েছেন যারা না বিজেপি না তৃণমূল এদের চিহ্নিত করে কঠোর শাস্তির দাবি জানান তিনি। যে কোন প্রকারে অশান্তি বাঁধিয়ে রাখাই এদের উদ্দেশ্য বলে ভাস্করবাবুর দাবি।


একই সুরে ভাস্করবাবুর স্ত্রী জেলা পরিষদের এবারের প্রার্থী চন্দ্রা মন্ডল জানান,' কিছু না জেনে বুঝে কেউ যেন কাউকে শুধু শুধু দোষারোপ না করে এভাবে গ্রামের শান্তি বিঘ্নিত হবে।একই সুরে বিজেপির স্থানীয় গ্রামীণ সদস্য ঝর্ণা মন্ডল জানান, কেউ সুকৌশলে নিজেদের মধ্যে ঝামেলা অশান্তি বাঁধাতে চাইছে সে কারণেই প্রশাসনের উপরেই তারা ভরসা রাখছেন। তবে প্রচন্ড আতঙ্কে হালিয়াডাঙ্গার কৃষকেরা একের পর এক ক্ষেত নষ্ট হয় তারা রাত পাহারা দিচ্ছেন এবং অনেকটাই আতঙ্কের মধ্যে আছেন বলে তারা জানান।


আরও পড়ুন, 'TMC এভাবে সন্ত্রাস চালালে রাজ্যসভায় ভোট দিতে যাব না', হুঁশিয়ারি তৃণমূল বিধায়কের


পঞ্চায়েত নির্বাচনের একের পর এক ঘটনায় নবাগতারা যেভাবে নিজেদের মহানুভবতা প্রমাণ করছেন হালিয়াডাঙ্গার ঘটনায় ফের একই চিত্র উঠে এল। এখন দেখার রাজনীতিতে নবাগতাদের থেকে কিছু শিক্ষা নিতে পারেন কিনা অভিজ্ঞ দীর্ঘদিনের তৃণমূল বা বিজেপি নেতৃত্ব। যারা কারণে-অকারণে একে অপরের বিরুদ্ধে বিষোদগার করে গ্রামে অশান্তি জিইয়ে রাখছেন।