সুদীপ্ত আচার্য, প্রকাশ সিনহা, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা :  ভয়ের ভাঙড়ে ( Bhangar )  গণনা ( Panchayat Poll Counting ) পর্বের শেষেও ভোট-হিংসার বলি হলেন আরও তিন জন। গভীর রাতে পঞ্চায়েত ভোট গণনার শেষ পর্বে কাঁঠালিয়া স্কুলে গণনা কেন্দ্রের সামনেই হয় বোমাবাজি, চলে গুলি। গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় দুই আইএসএফ কর্মী হাসান মোল্লা, রেজাউল গাজি এবং গ্রামবাসী রাজু মোল্লার।  


গেল সাধারণ মানুষের প্রাণও


ভাঙড়ে ভোট-হিংসার মধ্যে পড়ে শুধু রাজনৈতিক কর্মীদের নয়, সাধারণ মানুষের প্রাণও গেল বেঘোরে।   বাড়ির বাইরে বেরোতেই গুলি লেগে মৃত্যু হয় তাঁর, অভিযোগ মৃতের পরিবারের।  রাজু মোল্লা নামে ওই  ব্যক্তি কোনও রাজনৈতিক দলের সদস্য ছিল না বলেই দাবি পরিবারের । 

নিহত রাজু মোল্লার বাড়ি শানপুকুর গ্রাম পঞ্চায়েতের চিনেপুকুর এলাকায়। পরিবারের দাবি, মায়ের সঙ্গে ঝগড়া করে ঘটকপুকুরে দিদির বাড়ি যাচ্ছিলেন রাজু। গোলাগুলির মাঝে পড়ে মৃত্যু হয় বছর আঠাশের যুবকের। 


মৃত্যুর পর মৃত্যু



আইএসএফের দাবি, জেলা পরিষদের ৮৩ নম্বর আসনে তাঁদের প্রার্থী জাহানারা খাতুন জিতে যাওয়ায় পুনর্গণনার দাবি তোলে তৃণমূল। অভিযোগ, জয়ের শংসাপত্র দিতে টালবাহানা শুরু করেন বিডিও। এরপর জোর করে তৃণমূল প্রার্থী খাদিজা বিবিকে জিতিয়ে দেওয়া হয়।


এই নিয়ে দুই দলের কর্মীদের মধ্যে গন্ডগোল চরমে ওঠে। সেইসময় গণনা কেন্দ্রেই ছিলেন তৃণমূল নেতা আরাবুল ইসলাম ও তাঁর ছেলে হাকিমুল। পুলিশের সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধ বেধে যায় আইএসএফ কর্মীদের। শুরু হয় বোমাবাজি। গুলিও চলে। গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারান দুই আইএসএফ কর্মী হাসান মোল্লা, রেজাউল গাজি এবং গ্রামবাসী রাজু মোল্লা।  


শুধু তাই নয়, ভোট গণনার দিন ভাঙড়ে গুলিবিদ্ধ হন এক পুলিশ কর্তা। মঙ্গলবার তৃণমূল- আইএসএফ সংঘর্ষে গুলিও চলে। গুলিবিদ্ধ হন বারুইপুর পুলিশ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হেড কোয়ার্টার মাকসুদ হাসান। তাঁর বাঁ হাতে গুলি লাগে। বুধবার আর এন টেগোর হাসপাতালে তাঁর অস্ত্রোপচার হওয়ার কথা। পুলিশ কর্তার দেহরক্ষীর বাঁ পা ছুঁয়ে বেরিয়ে যায় আরেকটি গুলি।  


 জনের মৃত্যুর পর ক্ষোভে ফুঁসছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। রাস্তায় এখনও পড়ে রয়েছে তাজা বোমা, ইটের টুকরো, ভাঙা কাচ। কার্যত বন‍্ধের চেহারা নিয়েছে গোটা এলাকা। শোনপুর বাজারে দোকানপাট বন্ধ। সন্ত্রাসের আবহে ব্যবসা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ভোট মিটলেও অশান্তির ভাঙড় যে সহজে শান্ত হবে না, তা ভেবেই আতঙ্কিত এলাকার মানুষ। আগের দিন তিন-তিনটি মৃত্যুর পর, বুধবার সকালে বিশাল পুলিশ বাহিনী নিয়ে ভাঙড়ে যান এডিজি দক্ষিণবঙ্গ সিদ্ধিনাথ গুপ্ত। যদিও তাতে সাধারণ মানুষের ভয় কাটছে না।