কলকাতা: আগের অভিজ্ঞতা থেকেই পঞ্চায়েত নির্বাচনে কেন্দ্রীয় বাহিনী (Central Forces) নামানোর দাবিতে সরব হয়েছিল সব দল। সেই মতো মামলা জমা পড়েছিল কলকাতা হাইকোর্টে। তার পর দফায় দফায় শুনানি আদালতে, গড়িমসির অভিযোগে ভর্ৎসনা এবং বারং কড়া নির্দেশ আদালতের। শেষ মেশ রাজ্যে নামানো হয়েছিল কেন্দ্রীয় বাহিনী। কিন্তু শনিবার ভোটগ্রহণের দিন সেই কেন্দ্রীয় বাহিনীকে নিষ্ক্রিয় থাকতেই দেখা গেল। তাদের চোখের সামনেই দেদার ভোটলুঠ, ব্যালট-লুঠ, অশান্তি, হিংসা এবং সর্বোপরি ১৩টি প্রাণ ঝরে গেল। তাই পঞ্চায়েত নির্বাচনে কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভূমিকা নিয়েও উঠে আসছে 'দিদি-মোদি সেটিং' তত্ত্ব (Panchayat Elections 2023)। 


নির্ঘণ্ট ঘোষণার পর থেকে মনোনয়ন, স্ক্রুটিনি পর্ব এবং সর্বোপরি ভোটগ্রহণের দিনও পঞ্চায়েত নির্বাচন রক্তস্নাতই থাকল। কোথাও পিস্তল উঁচিয়ে দাপিয়ে বেড়িয়েছে দুষ্কৃতীরা।  কোথাও বিভিন্ন দলের কর্মীরা গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। কোথাও বুলেটবিদ্ধ হয়েছেন খোদ ভোটার।  বোমাবাজিতে মৃত্যু হয়েছে বিভিন্ন দলের ১৩ জন কর্মীর। রাজ্য পুলিশ এবং বিপুল পরিমাণ কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন থাকার পরও কী করে অবাধে এই ধুন্ধুমার চলল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। 


আরও পড়ুন: Suvendu Adhikari: 'সন্ধে ৬টায় কমিশনের দফতরে তালা', কমিশনারকে ফোনে 'হুমকি' শুভেন্দুর


তাই অবধারিত ভাবে কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভূমিকা উঠে আসছে। ২০০৯ বা ২০১১ সালে যেখানে অলোক রাজ দৃঢ় হাতে নির্বাচন পরিচালনা করে দেখিয়ে দিয়েছিলেন, সেখানে আজকে কার্যতই নিষ্ক্রিয় ছিল কেন্দ্রীয় বাহিনী। ৮২২ বাহিনী নামানোর কথা আদালত বলে দিলেও, ১৬০ বাহিনী আসেই পৌঁছয়নি বাংলায়। তাই কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ভোট করানোর ক্ষেত্রে 'দিদি-মোদি সেটিং' তত্ত্ব নিয়ে আরও একবার সরব হয়েছে কংগ্রেস।  


এবিপি আনন্দের তাই কংগ্রেস নেতা কৌস্তভ বাগচি বলেন, "সপ্তাহ দুয়েক আগে হাইকোর্ট বলে দিয়েছিল ৮২২ কোম্পানির কথা। অথচ কেন্দ্রীয় সরকার জানায়, ৩১৫ কোম্পানির বেশি পাঠাতে পারবে না। তার পর আবার পাঁচ-সাত দিন পর অবস্থান পাল্টায়। এতে গোটা প্রক্রিয়াটিকেই বিগড়ে দেওয়া হয়েছে। সজলবাবু, শুভেন্দুরা যদি মন থেকে তৃণমূলের বিরোধিতা করতে চান, তাঁরা বলতে পারেন, বিজেপি আদর্শ প্ল্যাটফর্ম! এর পিছনেও রয়েছে সেটিং। ভোটের চার-পাঁচদিন আগে বলছে, বাকি কোম্পানি আসছে, এ ভাবে সম্ভব!"


কেন্দ্রীয় বাহিনী, পুলিশ এবং প্রশাসনকে নিষ্ক্রিয় থাকতে দেখেই একাধিক জায়গায় মানুষ প্রতিরোধ করছেন বলেও মেনে নেন কৌস্তভ। তাঁদের মতে, তৃণমূলকে উৎখাত করতে গেলে রাজ্য বা কেন্দ্রীয় বিজেপি বিকল্প নয়। তাঁর বক্তব্য, "সজল ঘোষের সঙ্গে কেন্দ্রীয় বাহিনী ঘুরতে পারে, শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে কেন্দ্রীয় বাহিনী ঘুরতে পারে, কিন্তু বুথে গিয়ে পাহারা দিতে পারে না! যাঁরা বিজেপি করেন, তাঁরা সিদ্ধান্ত নিন, তৃণমূলের সঙ্গে লড়াইয়ের আদৌ মানসিকতা রয়েছে কিনা।" যদিও এই তত্ত্ব মানতে নারাজ বিজেপি-র সজল ঘোষ। এ প্রসঙ্গে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনকে পাখির চোখ করে ঐক্যবদ্ধ হওয়া, পটনায় মমতার সঙ্গে রাহুল গাঁধীর বৈঠকের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন তিনি। কিন্তু রাজনৈতিক এই রাাজনৈতিক তরজার মধ্যেও কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তা ছিল চোখে পড়ার মতো।


ভোটের আগে যদিও জায়গায় জায়গায় রুটমার্চ করতে দেখা গিয়েছিল কেন্দ্রীয় বাহিনীকে। কিন্তু ভোটের দিন তারা সব গেলেন কোথায়? দিকে দিকে মৃত্য়ু, খুন, বোমা-আগ্নেয়াস্ত্রের আস্ফালন, ভয়ঙ্কর তাণ্ডব, বীভৎস সন্ত্রাসের খবর উঠে এসেছে দিনভর। সেখানে, বুথ হোক বা পথ, কোথাও দেখা যায়নি কেন্দ্রীয় বাহিনীকে। তাই তাদের গণতন্ত্রের উৎসবে তাদের ভূমিকা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন।