সুকান্ত মুখোপাধ্যায়, শিবাশিস মৌলিক, বোলপুর: একেবারে একাহাতে এতদিন বীরভূম আগলে রেখেছিলেন তিনি (Birbhum News)। কিন্তু পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে বীরভূমে কার্যতই অভিভাবকহীন তৃণমূল (TMC)। গরুপাচার মামলায় মেয়ে সুকন্যা-সহ তিহাড় জেলে বন্দি রয়েছেন অনুব্রত মণ্ডল (Anubrata Mondal)। খাতায় কলমে এখনও বীরভূমে তৃণমূলের সভাপতি তিনি। কিন্তু এই পঞ্চায়েত নির্বাচনে বীরভূমে তাঁর অনুপস্থিতি ভালই টের পাচ্ছে তৃণমূল। বোলপুরের নিচুপট্টিতে অনুব্রতর বাড়ি তো খাঁ খাঁ করছেই, খাঁ খাঁ করছে জেলা তৃণমূলের কার্যালয়ও। অনুব্রতর অনুপস্থিতিতে সেখানে আপাতত মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে দায়িত্ব দিয়েছে তৃণমূল, যা নিয়ে কটাক্ষ ছুড়ে দিয়েছে বিরোধীরা (Panchayat Elections 2023)। 


ছোটনাগপুর মালভূমির উত্তর-পূর্বে অবস্থিত বীরভূম। রুক্ষ, শুষ্ক এবং চরম প্রকৃতির লাল মাটির এই জেলায়, গ্রীষ্মে তাপমাত্রা কখনও-সখনও ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পেরিয়ে যায়। তবে, এই উত্তাপকেও টেক্কা দেয় ভোট মরশুমের গরম। তার উপর পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে নেতাদের বাগযুদ্ধ, হেভিওয়েট রাজনীতিকদের আনাগোনায় আরও উত্তাপ বেড়েছে বীরভূমের রাজনীতির।

তবে সবদিক থেকেই এবার সেই উত্তাপ, সরগরম ভাব অনেকটাই ফিকে। কারণ যাঁকে ঘিরে কার্যত আবর্তিত হয় রীরভূমের রাজনীতি, সেই অনুব্রতই এখন সকন্যা জেলে।  তাই নির্বাচনী মরশুমে অনুব্রতর যে বাড়ি থাকত সরগরম থাকত, বোলপুরের সেই নিচুপট্টির এই বাড়ি এখন খাঁ খাঁ করছে। যেখানে বসে বছরের পর বছর নির্বাচণী বাণী শুনিয়ে এসেছেন অনুব্রত, সেই বাড়ি থাকলেও, অনুব্রত নেই সেখানে। 


আরও পড়ুন: Firhad Hakim: ‘মহব্বত এক সে হোতি হ্যায়, হাজারোঁ সে নহি, আমাদের কাছে মমতাই ওহ্ এক’, বীরভূম থেকে বার্তা ফিরহাদের


বীরভূমে অনুব্রতর এই অনুপস্থিতি কি তৃণমূলের ভোটবাক্সে প্রভাব ফেলবে? পরিস্থিতি দেখে সেই প্রশ্ন জোরালো ভাবে উঠে আসছে। তবে শুধু সংবাদমাধ্যম বা বিশেষজ্ঞ মহল নয়, স্থানীদের মনেও কাজ করছে সংসদ। তাই এবিপি আনন্দের ক্যামেরায় বোলপুরের এক বাসিন্দাকে বলতে শোনা গেল, "মনে হয় প্রভাব পড়বে। পঞ্চায়েত নির্বাচন এখানে না থাকলেও, সবাই এখানেই দেখা করতে আসত। এখন দেখুন! সব ফাঁকা।" তবে সকলে এমনটাই যে ভাবছেন, তা নয়। বোলপুরের আর এক বাসিন্দা বলেন, "কাকা যা জমি তৈরি করে দিয়ে গিয়েছে, তাতে কারও কোনও ক্ষতি হবে না।"

অনুব্রতরহীন বীরভূম ভাবাচ্চে তৃণমূলকেও। কারণ অনুব্রত না থাকায় জেলা তৃণমূলের কার্যায়লও শুনশান। অথচ নির্বাচনের সময় যখন দোতলাায় কন্ট্রোল রুম খুলে বসতেন অনুব্রত, ভিড় গিজগিজ করত বাইরে পর্যন্ত। এখন সেই ঘরও ফাঁকা, আশপাশও। যদিও আশাহত হতে নারাজ জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। তাই বীরভূমে তৃণমূলের বিদায়ী জেলা সভাপধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরীর দাবি, ২০২১ সালেও সবাই গেল গেল রব তুলেছিলেন। এখনও তাই করছেন। তৃণমূলের ফেরা নিয়ে আত্মবিশ্বাসী তিনি। 

জেলা রাজনীতিতে অনুব্রত মণ্ডলের বিপরীত শিবিরের নেতা বলে পরিচিত কাজল শেখ। এবার, তাঁকে জেলা পরিষদের প্রার্থী করেছে তৃণমূল। তিনিও বলছেন, অনুব্রতরর না থাকাটা পঞ্চায়েত নির্বাচনে কোনও ফ্যাক্টর হবে না। তাঁর বক্তব্য, "উনি তো একটা জমি তৈরি করে দিয়েছেন! উন্নয়নও হয়েছে। সেখান থেকে ওঁর না থাকাটা ফ্যাক্টর হবে না বলে মনে হয়।"

অনুব্রতহীন বীরভূমে  আপাতত নিজের বিশ্বস্ত সেনাপতি ফিরহাদকে দায়িত্ব দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে, দু'দিনের সফরে বীরভূমে এসেছেন তিনি। তাঁর কথায়, "আমাকে মুখ্যমন্ত্রী দায়িত্ব দিয়েছেন। তা াপলন করছই মাত্র। কোনও প্রভাব পড়বে না। বিপুল ভোটে জিতবে তৃণমূল।" এদিন পাইকরে নির্বাচনী সভা করেন ফিরহাদ। রবিবার লোহাপুর এবং রামপুরহাট ১ নম্বর ব্লকে প্রচার করবেন তিনি।