কলকাতা: পঞ্চায়েত নির্বাচনের নির্ঘণ্ট প্রকাশের পর থেকেই অশান্তির সূচনা (Panchayat Elections 2023)। মনোনয়ন পর্ব পেরিয়ে, স্ক্রুটিনি পর্বেও, অব্যাহত থেকেছে তা। তাতেই জোর পেয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনী নামানোর প্রশ্ন (Central Forces)। কিন্তু আদালতের নির্দেশের পরও কেন্দ্রীয় বাহিনী নামানোয় রাজ্য নির্বাচন কমিশনের তরফে অনীহা রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিরোধীরা। আদালতে তিরস্কৃত হতে হয়েছে রাজ্যের নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিন্হাকে (Rajiv Sinha)। না পারলে পদ ছেড়ে দিন এমন মন্তব্য করেছেন বিচারপতি। সেই আবহে এবিপি আনন্দে মুখ খুললেন রাজ্যের প্রাক্তন নির্বাচন কমিশনার মীরা পান্ডে (Meera Pandey)। 


কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ভোট করাতে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিলেন তৎকালীন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার মীরা। বর্তমান আবহে বার বার তাঁর কথা উঠে এসেছে। এমনকি তাঁর আমলে যেভাবে ভোট হয়েছিল, সেভাবে বিপুল সংখ্যক বাহিনী দিয়ে ভোট করাতে হবে বলে জানিয়েছে আদালত। এমন পরিস্থিতিতে এবিপি আনন্দকে দেওয়া এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে নিজের মতামত জানান মীরা। 


বৃহস্পতিবার এবিপি আনন্দের মুখোমুখি হয়ে মীরা বলেন, "সুষ্ঠ নির্বাচন করাতে গেলে সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন। নইলে ভোট করে কোনও লাভ হবে না। ভোট হচ্ছে, যাতে মানুষ সুষ্ঠ ভাবে নিজের ভোটটা দিতে পারেন। এত কাজ, এত প্রস্তুতি সবকিছু তার জন্যই। সেটা সুষ্ঠ ভাবে সারতে গেলে সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন। সকলের কাছে সেই আবেদনই থাকবে আমার।"


আরও পড়ুন: Meera Pandey: চাইলেই নিরপেক্ষ থাকা যায়, মানুষের আস্থার জন্যই প্রয়োজন কেন্দ্রীয় বাহিনী, এবিপি আনন্দে মুখ খুললেন মীরা পান্ডে


এ বারের পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে আগাগোড়াই অশান্তি দেখা গিয়েছে। মনোনয়ন পর্ব থেকে স্ক্রুটিনি, অশান্তি, বোমাবাজির ঘটনা সামনে এসেছে। এখনও পর্যন্ত মারাও গিয়েছেন ন'জন। তা নিয়ে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। এ প্রসঙ্গে মীরা বলেন, "প্রত্যেক নির্বাচনেই নানা অভিযোগ ওঠে। জায়গায় জায়গায় দায়ের হয় অভিযোগ। সেগুলির তদন্তও হয়। কিন্তু সবকিছুরই একটা প্রক্রিয়া আছে। কমিশনকে সেই সময়টা দিতে হবে।"


২০১৩ সালে কেন্দ্রীয় বাহিনী চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন মীরা। এবারের নির্বাচনে বার বার তাঁর প্রসঙ্গ উঠে আসছে। কিন্তু মীরার বক্তব্য, "১০ বছর আগের সঙ্গে এখনকার পরিস্থিতি পাল্টেছে। বুথের সংখ্যা বেড়েছে। বেড়েছে ভোটারও। কমিশনকে সবকিছুর জন্য প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে। নিশ্চয়ই সুষ্ঠ ভাবে  দায়িত্ব পালন করবে কমিশন।"


পঞ্চায়েত নির্বাচনের মতো তৃণমূল স্তরের নির্বাচনে অশান্তি যে ঘটেই, এদিন তাও উল্লেখ করেন মীরা। তিনি বলেন, "দেখুন, ঘটনা যে ঘটে না, তা নয়। গ্রাসরুট লেভেলে নির্বাচনের সঙ্গে আবেগ জড়িয়ে থাকে। প্রার্থীর সঙ্গে আবেগ থাকে মানুষের। কারণ প্রার্থী তাঁদের এলাকার মানুষ। মানুষের মধ্যে এই আবেগটা বরাবর রয়েছে যে, 'আমার প্রার্থী, আমি ভোট দেব।' সেটাকে সম্মান জানানো উচিত। তিনি যাতে ভোট দিতে পারেন, সকলকে একজোট হয়ে কাজ করতে হবে।"


এ দিন মীরা জানান, নির্বাচনের সময় প্রায়শই গন্ডগোল, অশান্তির খবর আসে। এ বলে, আমার ওখানে অশান্তি হচ্ছে, ও বলে, সেখানে অশান্তি হচ্ছে। সবসময় যা বলা হয়, ঠিক হয় না। তাই মীরার বক্তব্য, "পরিস্থিতি যাচাই করে দেখার সময়টা তো দিতে হবে!" তাঁর মতে, সুষ্ঠ নির্বাচন কমিশনকে একাকে করতে হবে, তা নয়। রাজ্। সরকার, নাগরিক, ভোটকর্মী, সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন। সবাইকে মিলে সুষ্ঠ ভাবে কাজটা তুলে দেওয়াই কাম্য বলে মনে করেন তিনি।