রাজীব চৌধুরী, মুর্শিদাবাদ: পঞ্চায়েতের প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পরই মুর্শিদাবাদে তৃণমূলের (TMC) অন্দরের ক্ষোভ বাইরে চলে এ (Panchayat Elections 2023)। একসঙ্গে সাংবাদিক বৈঠক করে, প্রার্থিপদ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করলেন মুর্শিদাবাদের (Murshidabad News) চার তৃণমূল বিধায়ক, হুমায়ুন কবীর, রবিউল আলম চৌধুরী, শাহিনা মমতাজ বেগম এবং আব্দুর রজ্জাক। বেনজির এই ক্ষোভের জেরে অস্বস্তি বেড়েছে জেলা তৃণমূলের, যা নিয়ে কটাক্ষ ছুড়ে দিয়েছে কংগ্রেস (Congress)।


পঞ্চায়েত ভোটে প্রার্থিপদ ঘিরে তৃণমূলের অন্দরে বেনজির ক্ষোভ। একই জেলার শাসকদলের চার বিধায়ক পাশাপাশি বসে কার্যত নিশানা করলেন শীর্ষ নেতৃত্বকে। প্রয়োজনে দলের ঘোষিত প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্দল কাঁটা বিছিয়ে দেওয়ারও প্রচ্ছন্ন হুঁশিয়ারি শোনা গেছে হুমায়ুন কবীর, রবিউল আলম চৌধুরী, সাহিনা মমতাজ এবং আব্দুর রাজ্জাকের মতো তৃণমূল বিধায়কদের গলায়।


রাজ্য রাজনীতিতে একসময় যুযুধান দুই পক্ষ ছিলেন হুমায়ুন এবং রবিউল। বৃহস্পতিবার এক টেবিলে দেখা গেল তাঁদেরই। দলীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে একযোগে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন তাঁরা। ভরতপুরের তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন বলেন, "আমি প্রার্থী দিয়ে দিয়েছি। যদি দলের প্রতীক না পাই, তাহলে নির্দল হিসেবে লড়বেন তাঁরা।" আরও বলেন হুমায়ুন, "৯০ শতাংশ প্রার্থী নিয়েছে জেলা চেয়ারম্যান। আমি ১০ শতাংশ। আমি কি ভিখারি নাকি?" বহরমপুর-মুর্শিদাবাদে তৃণমূলের সাংগঠনিক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অপূর্ব সরকার যদিও বলেন, "শতাংশ আবার কী?"


অন্য় দিকে রেজিনগরের তৃণমূল বিধায়ক রবিউল বলেন, "আমিই প্রথম মুর্শিদাবাদে তৃণমূল বিধায়ক হিসেবে যোগ দিয়েছিলাম। আমাকে সংগঠন দেখতে বলেছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সংগঠন দেখেছি। আজ সেই আমিই ব্রাত্য হয়ে গেলাম!" 


আরও পড়ুন: Rajiv Sinha: মনোনয়ন ঘিরে অবাধ সন্ত্রাস, 'বন্ধ না হলে স্থগিত হোক নির্বাচন', SC কমিশনের রোষে রাজীব সিনহা


মুর্শিদাবাদ সেই জেলা, অতীতে যেখানকার ভোটে গোঁজ-শামুকে পা কেটেছে বিভিন্ন দলের প্রার্থীর। ২০০১ সালেই নওদায় কংগ্রেস এবং তৃণমূলের জোট প্রার্থী তথা শাহিনা মমতাজের শ্বশুর নাসিরুদ্দিন খানের বিরুদ্ধে নির্দল প্রার্থী হিসেবে আবু তাহের খান, হরিহরপাড়ায় জোট প্রার্থী মহফুজ আলম ডালিমের বিরুদ্ধে নির্দল প্রার্থী হিসাবে নিয়ামত শেখকে জিতিয়ে এনেছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। 

আবার ২০০৬-এ কান্দিতে কংগ্রেসের অফিসিয়াল প্রার্থী অতীশ সিন্হার বিরুদ্ধে অপূর্ব সরকার, বহরমপুরে কংগ্রেস প্রার্থী মায়ারানি পালের বিরুদ্ধে মনোজ চক্রবর্তীকে জিতিয়ে এনেছিলেন সেই অধীরই। এখন রাজনীতির ফেরে মনোজ চক্রবর্তী বাদে, বাকি সবাই কেউ তৃণমূলের বিধায়ক, কেউ সাংসদ। হুমায়ুন কবীরও একসময় কংগ্রেসের বিধায়ক ছিলেন। পরে যোগ দেন তৃণমূলে। একদা কংগ্রেসের বিধায়ক হিসাবে জয়ী রবিউল আলম চৌধুরীও পরে শিবির বদলে তৃণমূলে চলে যান। আব্দুর রাজ্জাকও জলঙ্গি থেকে দুই বারের সিপিএম বিধায়ক। পরে যোগ দেন তৃণমূলে।


২০১৬-র বিধানসভা ভোটের পরে, শুভেন্দু অধিকারী যখন তৃণমূলের পর্যবেক্ষক হিসাবে মুর্শিদাবাদের দায়িত্বে, তখনই এদের প্রত্যেককে দলে টেনে, নবাবের জেলায় কংগ্রেসের কেল্লা নাড়িয়ে দিয়েছিল তৃণমূল। আর এখন এই ৪ বিধায়কই, প্রার্থিপদ নিয়ে বিবাদের জেরে একসুরে নিজেদের দলেরই নেতৃত্বের দিকে আঙুল তুলছেন।


রবিউল এদিন বলেন, "আমরা স্বচ্ছ ভাবে রাজনীতি করতে চাই। কিন্তু এভাবে রাজনীতি হলে...মুর্শিদাবাদে খুব বাজে জায়গায় যাচ্ছে তৃণমূল। খারাপ রেজাল্ট হলে কিন্তু মমতা-অভিষেক ব্লক সভাপতিদের ধরবেন না, আমাদের ধরবেন। তখন ব্লক সভাপতি বা জেলা সভাপতি উত্তর দেবেন না।"


শাসকদলের অন্দরে এমন ক্ষোভ নিয়ে কটাক্ষ ছুড়ে দিয়েছেন অধীর। তাঁর বক্তব্য, "নবজোয়ারের নামে সরকারি কোষাগারের টাকায় পিকনিক হয়েছে। তৃণমূল অন্তর্দ্বন্দ্বে বিদ্ধ। তৃণমীল নেতাদের যা দেখছেন, এখন যা চলছে তাঁদের মধ্যে, কুকুর ক্যাঞ্জাল লেগেছে বলা যায়। ক্ষমতার পিঠে ভাগ করার জন্য। যেখানে পিঠের ভাগে কম-বেশি হচ্ছে, ঝামেলা শুরু হচ্ছে সেখানেই।"


এই মুর্শিদাবাদে তাদের দলই ক্ষমতায় আছে। জেলায় তাদেরই আধিপত্য। তা সত্বেও কেন এই অবস্থা তৃণমূলের? উঠছে প্রশ্ন। বিষয়টি নিয়ে রীতিমতো অস্বস্তিতে বহরমপুর-মুর্শিদাবাদ সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের নেতৃত্ব। মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন এখনও বাকি। সেদিন যদি নির্দল ও বিক্ষুব্ধরা প্রার্থিপদ প্রত্যাহার না করেন, তবে সাগরদিঘির জেলা মুর্শিদাবাদে, পঞ্চায়েত নির্বাচনে অন্য খেলা দেখা যেতে পারে বলেই মত রাজনৈতিক মহলের একাংশের।