নয়াদিল্লি : মঙ্গলবার সন্ধেয় জাতির উদ্দেশে করোনা নিয়ে ভাষণ দিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। ভাষণে তিনি বারবার বলেন, লকডাউন অন্তিম অস্ত্র। করোনা মোকাবিলায় তিনি যুব সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসার আবেদন জানান। পরিযয়ী শ্রমিকদের আশ্বস্ত করে বলেন, আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। গতবারের পরিস্থিতি আর এইবারের পরিস্থিতি অনেকটাই আলাদা। সকলকে তিনি যথাসম্ভব বাড়িতে থাকার পরামর্শ দেন। কিন্তু এই বিষয়টি নিয়েই সোচ্চার হয়েছে বিরোধী দলগুলির প্রতিনিধিরা। সিপিএম, কংগ্রেস থেকে তৃণমূল ... বিভিন্ন দলের নেতারা স্পষ্টতই বার্তা দিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী, ঘরে থাকার বার্তা দিচ্ছেন, কিন্তু তাঁর দলের লোকেরাই তা মানবে কি?
তৃণমূলের প্রবীণ নেতা সৌগত রায় বলেন, '' এতদিন পর পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক প্রচার সেরে নরেন্দ্র মোদি যে করোনা নিয়ে ভাবার সময় পেয়েছেন এটাই আনন্দের ! '' আজকের বার্তায় মোদি বলেছেন লকডাউন অন্তিম অস্ত্র। এ ব্যাপারে সৌগত রায় বলেন, '' মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তো নিজেই বলেছেন তিনি লকডাউন এর বিরুদ্ধে। আমরাও চাই না পরিযায়ী শ্রমিকদের দুর্দশার মুখে পড়তে হোক। আমরা চাই কেন্দ্রীয় সরকার আরও বেশি পরিমাণে ভ্যাকসিন সকলকে দিক । ভ্যাকসিন প্রোডাকশন বাড়ুক। অক্সিজেন ও করোনার ওষুধ সাপ্লাই বাড়ুক। কিন্ত প্রতিবারই মোদি দেরি করে ফেলেন। আগেরবার ট্রাম্প এসে ছিলেন বলে তিনি দেরি করলেন , আর এবার পশ্চিমবঙ্গে ভোটের প্রচার এর জন্য দেরি ! '' মোদিকে কটাক্ষ সৌগতর।
প্রধানমন্ত্রীর করোনা-ভাষণ নিয়ে সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বললেন, ' আমরা তো এক সপ্তাহ আগেই সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছি । আমরা মিটিং ছোট করেছি। আমরাই প্রথম বলেছি ইলেকশন কমিশন প্রয়োজনে সব মিটিং-মিছিল বন্ধ করে দিক । মানুষ আগে । জীবন আগে । প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন , তিনি এক বছর সময় পেলেন, তাতে উনি মন্দির বানিয়েছেন , ঘুরেছেন কিন্তু একটা হাসপাতালে ভিজিট করেছেন কি? এই অবস্থার জন্য দায় , যারা সরকার পরিচালনা করছে তাদের । বললেন সুজন ।
তিনি আরও বলেন, ' অমিত শাহর মিটিং এ চেয়ার ভরানোর লোক নেই । মানুষ বুঝে গেছে .... প্রধানমন্ত্রী নিজের দলকে নির্দেশ দিয়েছেন কি, যে তিনি মিটিং-মিছিল দলের অনুষ্ঠান, প্রচার করবেন না । প্রশ্ন তুললেন সুজন।
প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের পর কার্যত শাণিত আক্রমণ করলেন কংগ্রেস নেতা অধীররঞ্জন চৌধুরী। তিনি বলেন, 'প্রধানমন্ত্রীর এখন জ্ঞান দেওয়ার ইচ্ছে হয়েছে, তাই উনি দিয়েছেন। আগে প্রধানমন্ত্রী এবং তার পার্টি প্রচারের কাজে ইতি টানুক, মিটিং বাতিল করুক ! '
মোদি আজ তাঁর ভাষণে বলেন, যথাসম্ভব বাড়ি থেকে কম বের হতে। কিন্তু চারিদিকে বহাল তবিয়তেই চলছে নির্বাচনের প্রচার কর্মসূচি। এই প্রসঙ্গেই অধীর বলেন, ' আমরা আমাদের মিটিং-মিছিল-প্রচার, ঘোষণা করে কমিয়ে দিয়েছি । এখন একদিকে পিসি-ভাইপো, একদিকে মোদি, অমিত শাহ ঘুরে ঘুরে প্রচার করছেন ' আক্রমণ অধীরের।
অন্যদিকে পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বললেন, '' লকডাউন তো কেউ ফাজলামো করার জন্য ঘোষণা করে না , বাধ্য হয়ে করে । তিনি নিজেই যেটা বিশ্বাস করেন না , সেটাই লোককে করতে বলছেন। যতবারই নিজে আসছেন বড় বড় মিটিং করে যাচ্ছেন । যা করোনার কারণ হিসেবে কাজ করছে । কারণ যারা মিটিং শুনতে আসছেন তারা মাস্ক পরছেন না । দূরত্ব বিধি মানছেন না । '
প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের পর বিরোধীরা প্রায় এক যোগেই বললেন, ' আপনি আচরি ধর্মে পরেরে শিখাও। '