নয়াদিল্লি: কয়েক বছর আগেও মুখ দেখাদেখি ছিল না। বৃহত্তর লক্ষ্য়ে পরবর্তীতে হাত মেলায় কংগ্রেস এবং আম আদমি পার্টি। কিন্তু মঙ্গলবার কংগ্রেস যেখানে আত্মবিশ্বাস ফিরে পেল, সেই তুলনায় উদ্বেগ বাড়ল আম আদমি পার্টির। দিল্লি এবং পঞ্জাব, দু'জায়গায় আম আদমি পার্টির সরকার রয়েছে, তাসত্ত্বেও দু'জায়গাতেই তাদের ধাক্কা খেতে হল। (Punjab Loksabha Elections 2024 Result)
মঙ্গলবার লোকসভা নির্বাচনের ফলঘোষণা হয়েছে, তাতে পঞ্জাবের ১৩টি লোকসভা আসনের মধ্য়ে সাতটিতেই জয়ী হয়েছে কংগ্রেস। মাত্র তিনটি আসন পেয়েছে আম আদমি পার্টি। শিরোমণি অকালি দল একটি এবং দুই নির্দল প্রার্থী দু'টি আসন পেয়েছে। বিজেপি পঞ্জাবে খাতাই খুলতে পারেনি। তবে বিজেপি-কে ঠেকানো গেলেও, কংগ্রেসের এই ফলাফল ভাবাচ্ছে আম আদমি পার্টিকে। (Loksabha Elections Result in Punjab)
লোকসভা নির্বাচনে পঞ্জাবের এই ফলাফল জাতীয় রাজনীতির জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ যে দুই নির্দল প্রার্থী এবারে জয়ী হয়েছেন সেখানে, তাঁদের মধ্যে একজন হলেন বিচ্ছিন্নতাকামী, খালিস্তানপন্থী নেতা, ওয়ারিস দে পঞ্জাবের প্রধান অমৃতপাল সিংহ। শিখদের জন্য পৃথক রাষ্ট্রের দাবি জানিয়ে জাতীয় নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার হন তিনি। বর্তমানে অসমের ডিব্রুগড়ের জেলে বন্দি রয়েছে অমৃতপাল। জেল থেকেই কংগ্রেসের প্রার্থী কুলবীর সিংহ জিরাকে প্রায় ১.৫০ লক্ষ ভোটে পরাজিত করেছেন তিনি। নির্দল প্রার্থী সর্বজিৎ সিংহ খালসাও জয়ী হয়েছেন পঞ্জাবে, যিনি ইন্দিরা গাঁধীর হত্যাকারী বিয়ন্ত সিংহের ছেলে। সর্বজিৎ প্রায় ৩ লক্ষ ভোট পেয়েছেন।
দিল্লির সাতটি লোকসভা আসনেই জয়ী হয়েছে বিজেপি। ফলে সেখানে হাত শূন্য রয়ে গিয়েছে আম আদমি পার্টির। দিল্লিতে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট ছিল তাদের। রাহুল নিজে জানিয়েছিলেন তিনি, আম আদমি পার্টিকেই ভোট দেবেন। কিন্তু পঞ্জাবে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট গড়েনি আম আদমি পার্টি। প্রত্যেক দলই আলাদা আলাদা লড়াই করে, তাতে রাজ্যে ক্ষমতাসীন আম আদমি পার্টিকে ছাপিয়ে গিয়েছে কংগ্রেস।
জাতীয় স্তরে মধ্যপন্থী, গণতান্ত্রিক রাজনীতির পাল্লা ধরে রাখতেই এবারের লোকসভা নির্বাচনে পঞ্জাব ভোটদান করেছে বলে মত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের। কৃষক আন্দোলন এর নেপথ্য়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে বলে মত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের। পাশাপাশি, খালিস্তানপন্থী, বিচ্ছিন্নতাকামী অমৃতপালের জয়ও ভাবিয়ে তুলেছে তাঁদের। অমৃতপালের জয়ে খালিস্তানপন্থী রাজনীতি মূলস্রোতে ঢুকে পড়ল বলে মনে করছেন তাঁরা।
এই আবহে ক্ষমতাসীন আম আদমি পার্টি ফাঁপরে পড়েছে। গত দু'বছর ধরে সেখানে সরকার চালাচ্ছেন ভগবন্ত সিংহ মান। নির্বাচনের এই ফলাফলকে তাঁর দু'বছরব্যাপী শাসনকালের রিপোর্ট কার্ড হিসেবে দেখছেন অনেকে। কারণ ২০২২ সালের বিধানসভা নির্বাচনে যেখানে পঞ্জাবে আম আদমি পার্টির প্রাপ্ত ভোটের হার ছিল ৪২ শতাংশ, এবারের লোকসভা নির্বাচনে তা কমে ২৬ শতাংশ হয়েছে।
এবছর লোকসভা নির্বাচনে পঞ্জাবে ৩০০ ইউনিট পর্যন্ত বিনামূল্যে বিদ্যুৎ, অর্থাৎ ৯০ শতাংশ বাড়িতে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ পরিষেবার প্রতিশ্রুতি দেয় আম আদমি পার্টি। দুর্নীতিমুক্ত সরকার চালানোর ভাবমূর্তি এবং কেন্দ্রীয় বঞ্চনার অভিযোগকে সামনে রেখে প্রচার চালায় তারা। কিন্তু বিধানসভা নির্বাচনের সময় দেওয়া প্রতিশ্রুতি থেকে তাতে খুব একটা বড় ফারাক খুঁজে পাননি পঞ্জাবের স্থানীয় মানুষজন। বরং আবগারি দুর্নীতি মামলায় অরবিন্দ কেজরিওয়ালের গ্রেফতার হওয়ার পর দলের দুর্নীতিমুক্ত ভাবমূর্তিই প্রশ্নের মুখে পড়ে।
সেই তুলনায় কংগ্রেসের প্রতিশ্রুতি অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠে পঞ্জাবের মানুষের কাছে। কৃষক আন্দোলনের সময় আম আদমি পার্টি যেখানে রক্ষণাত্মক অবস্থান নিয়েছিল, সেখানে কংগ্রেস কোনও রকম দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ছাড়াই কৃষকদের পাশে এসে দাঁড়ায়। কংগ্রেসের নির্বাচনী ইস্তেহারেও কৃষকদের ঋণমুক্তি, ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়, যা কৃষিনির্ভর পঞ্জাবকে আশা জোগায়। আসন্ন উপনির্বাচনেও এই ফলাফল প্রভাব ফেলবে বলে মনে করা হচ্ছে।