নয়াদিল্লি: গত ১০ বছর ধরে লাগাতার পতন ঘটছিল। কিন্তু ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে অক্সিজেন ফিরে পেল কংগ্রেস। ১০০-র থেকে যদিও একটি আসন কম রয়েছে, কিন্তু ২০১৯ সালের চেয়ে আসন বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। সেবছর ৫২টি আসন পেয়েছিল হাতশিবির। হিন্দি বলয়ে যেমন আসন বেড়েছে কংগ্রেসের, তেমনই উত্তর-পূর্ব ভারতেও হৃত জমির বেশ খানিকটা উদ্ধার করতে পেরেছে তারা। কংগ্রেসের এই আসনবৃদ্ধিকে জাতীয় রাজনীতিতে তাদের প্রত্যাবর্তন হিসেবেই দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। (Congress Election Result 2024)


উত্তর-পূর্বের ২৫টি আসনের মধ্যে এবারের লোকসভা নির্বাচনে ১৩টি আসনে জয়ী হয়েছে বিজেপি। কংগ্রেস জয়ী হয়েছে সাতটি আসনে। অসমের ১৪টি লোকসভা আসনের মধ্যে সাতটিতে জয়ী হয়েছে বিজেপি। অরুণাচল এবং ত্রিপুরার দু'টি করে চারটি আসনেই জয়ী হয়েছে তারা। কংগ্রেস অসমের তিনটি আসনে জয়ী হয়েছে। মণিপুরের দু'টি আসনই গিয়েছে তাদের দখলে। মেঘালয় এবং নাগাল্যান্ডেও একটি করে আসন পেয়েছে তারা। (Lok Sabha Elections 2024 Result)


অসম প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি গৌরব গগৈ জোরহাটে বিজয়ী হয়েছেন। বিজেপি-র তপনকুমার গগৈকে হারিয়েছেন তিনি। এর পাশাপাশি, ধুবরি, এবং নগাঁও আসনটিও কংগ্রেসের দখলে গিয়েছে। ইনার এবং আউটার মণিপুর, দু'টি আসনেই জয়া হয়েছে তারা। মেঘালয়ের তুরা আসনে জয়ী হয়েছেন কংগ্রেস প্রার্থী। নাগাল্যান্ড আসনেও জয়ী হয়েছে তারা।  সবমিলিয়ে উত্তর-পূর্বের চার রাজ্যের সাতটি আসনে জয়ী হয়েছে কংগ্রেস। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের তুলনায় এবার তাদের আসন বেড়েছে তিনটি। 


আরও পড়ুন: Prashant Kishor: মেলাতে পারলেন না PK, ভবিষ্যদ্বাণী ছিল, 'বাংলায় প্রথম হবে BJP, আগের চেয়েও ভাল ফল'


উত্তর-পূর্ব ভারতে একসময় কংগ্রেসের একচেটিয়া আধিপত্য ছিল। কিন্তু ২০১৮ সাল থেকে উত্তর-পূর্বের আটটি রাজ্যের একটিতেও ক্ষমতায় নেই তারা। ২০১৮ সালে মেঘালয়ে ন্যাশনাল পিপলস পার্টি এবং মিজোরামে মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্টের কাছে পরাজিত হয় কংগ্রেস। ২০২৪ সালে আবারও উত্তর-পূর্ব ভারতে তাদের প্রত্যাবর্তন ঘটল। 


এর মধ্যে মণিপুরের দু'টি আসনে কংগ্রেসের জয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ২০২৩ সালের মের মাস থেকে দফায় দফায় হিংসা, দাঙ্গার সাক্ষী থেকেছে মণিপুর। সংসদে সেই নিয়ে সরব হওয়ার পাশাপাশি, 'ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা' নিয়ে সেখানে পৌঁছন রাহুল গাঁধী খোদ। ভোটবাক্সে তার প্রভাবও পড়েছে। মেইতেই অধ্যুষিত ইনার মণিপুর লোকসভা কেন্দ্রে জয়ী হয়েছেন কংগ্রেস প্রার্থী অঙ্গোমচা বিমল আকোইজম। হিংসাদীর্ণ মণিপুরে ক্ষমতাসীন এন বীরেন সিংহ সরকারের ভূমিকা নিয়ে কম সমালোচনা হয়নি। বীরেন সরকারের বিরুদ্ধে রাজ্যবাসীর মনে যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে, তাতে কংগ্রেসের ভোট বেড়েছে।


বিজেপি-র শরিকদল মেঘালয়ের NPP, মণিপুরে NPF এবং নাগাল্যান্ডের  NDPP-ও লড়াইয়ে এঁটে উঠতে পারেনি। ফলে তুরা, আউটার মণিপুর, নাগাল্যান্ড আসনটিও কংগ্রেসের ঝুলিতে গিয়েছে। ২৫ বছর পর তুরায় জিতল কংগ্রেস, ২০ বছর পর নাগাল্যান্ডে, ১৫ বছর পর ধুবরিতে। ইনার এবং আউটার মণিপুরে পাঁচ বছর পর জয়ী হল কংগ্রেস। ২০০৩ সালে নাগাল্যান্ড থেকে মুছে যায় তারা, এতদিন পর প্রত্যাবর্তন ঘটল। 


হৃত জমি উদ্ধার করা নিয়ে তাই নাগাল্যান্ডের বিজয়ী কংগ্রেস প্রার্থী এস সুপংমেরেং বলেন,"দুর্বল বিরোধীপক্ষ যে গণতন্ত্রের জন্য শুভ নয়, তা বুঝতে পেরেছেন দেশের মানুষ। গণতন্ত্রকে বাঁচাতে, সামাজিক বিভাজন রুখতে, সংখ্যালঘুদের জীবন রক্ষার্থেই ভোট দিয়েছেন তাঁরা।"


উত্তর-পূর্ব যদি এত বছর পর কংগ্রেসকে অক্সিজেন জুগিয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে কংগ্রেসের হাত শক্ত করার কাজ করেছে উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু, কর্নাটক, তেলঙ্গানা এবং সর্বোপরি কেরল। উত্তরপ্রদেশে সাতটি আসনে জয়ী হয়েছে কংগ্রেস। অমেঠী, রায়বরেলী-সহ সেখানে ১৭টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল তারা। এর মধ্যে ছয়টি আসনে জয়ী হয়েছে তারা, এলাহাবাদ, অমেঠী, রায়বরেলী, বরাবাঁকি, সাহরানপুর, সীতাপুরে। ২০১৯ সালে উত্তরপ্রদেশে মাত্র একটি আসন পেয়েছিল কংগ্রেস।


তামিলনাড়ুর নয়টি আসনে জয়ী হয়েছে কংগ্রেস। বিহারে তিনটি আসন পেয়েছে, বাংলায় একটি। গুজরাতে একটি আসন মিলেছে।  কর্নাটকে নয়টি আসন, তেলঙ্গানায় আটটি আসন, কেরলে ১৪টি আসনে জয়ী হয়েছে কংগ্রেস। ওড়িশায় মিলেছে একটি আসন। মহারাষ্ট্রে কংগ্রেস ১২টি আসনে জয়ী হয়েছে। এবারের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির প্রাপ্ত ভোটের হার ৩৬.৫৭ শতাংশ। কংগ্রেস এবার ২২.৩৪ শতাংশ ভোট পেয়েছে, যা ২০১৯-এর তুলনায় ৩ শতাংশ বেশি। ২০১৯ সালে তাদের প্রাপ্ত ভোটের হার ছিল ১৯.৪৯ শতাংশ।