নয়াদিল্লি: শনিবারই শেষ দফায় ভোটগ্রহণ। লোকসভা নির্বাচনের ফলঘোষণা মঙ্গলবার। ফলাফল হাতে আসার আগে শনিবার ঘরোয়া বৈঠকে রয়েছে I.N.D.I.A জোটের। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গের বাড়িতে বৈঠকে বসবেন শরিক দলের প্রতিনিধিরা। ফলাফল ঘোষণার পর কী পদক্ষেপ করা হবে, সেই নিয়ে এদিন বৈঠকে বসছে শরিক দলগুলি। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে এই বৈঠকে শামিল হচ্ছেন না তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়। সেই আবহেই রাহুল গাঁধীর একটি ভিডিও-য় নিয়েও চর্চা শুরু হয়েছে। বাকি শরিক দলের প্রতিনিধিদের দেখানো হলেও, ভিডিও-য় তৃণমূল এবং বামেদের কাউকে দেখা যায়নি। (I.N.D.I.A Alliance)


শনিবার সপ্তম দফায় ভোটগ্রহণ চলছে গোটা দেশে। আর এদিন সকালেই সোশ্যাল মিডিয়ায় 'জুড়েগা ভারত, জিতেগা ইন্ডিয়া' শীর্ষক একটি ভিডিও পোস্ট করেন রাহুল। 'ভারত জোড়ো যাত্রা', কংগ্রেসের ইস্তেহার প্রকাশ থেকে বিরোধী ঐক্য প্রদর্শনের বিভিন্ন মুহূর্তকে এক সুতোয় বেঁধে ১ মিনিট ২৯ সেকেন্ডের ভিডিও-টি তৈরি করা হয়। ভিডিও-য় কংগ্রেস, সমাজবাদী পার্টি, শিবসেনা (উদ্ধব ঠাকরে), রাষ্ট্রীয় জনতা দল, DMK-সহ  কংগ্রেসেরে সব সহযোগী দলের নেতৃত্বকেই দেখা যায়। শুধু দেখা যায়নি তৃণমূল এবং বামেদের কাউকে। (Rahul Gandhi)


ভিডিওটি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে রাহুল লেখেন, 'আজ সপ্তম তথা শেষ দফার ভোটগ্রহণ। এখনও পর্যন্ত হাওয়ার যা মতিগতি, তাতে বোঝা যাচ্ছে দেশে I.N.D.I.A-র সরকার গঠিত হতে চলেছে। এই ঝলসানো গরমে যেভাবে আপনারা গণতন্ত্র এবং সংবিধাননকে রক্ষা করতে ভোট দিতে যাচ্ছেন, তাতে গর্ববোধ করছি। আজও দলে দলে বেরিয়ে আসতে হবে, ভোট দিয়ে অহঙ্কার এবং অত্য়াচারের প্রতীক এই সরকারের উপর শেষ প্রহার করুন। ৪ জুন দেশে নতুন সূর্য উঠবে, নয়া ভোরের সূচনা হবে'। ৪ জুনের পর কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকার আর থাকবে না বলেও দাবি করেন রাহুল।



আরও পড়ুন: Arvind Kejriwal: 'যদি নিজের জীবনও বিসর্জন দিতে হয়...' রবিবার তিহাড়ে আত্মসমর্পণ করছেন কেজরিওয়াল


I.N.D.I.A জোট ক্ষমতায় আসার পর দ্রুতগতিতে শূন্যপদে নিয়োগ, জাতিগণনা, দারিদ্র দূরীকরণ প্রকল্পে কাজ শুরু হবে বলে ভিডিও-য় বলতে শোনা যায় রাহুলকে।  একে একে ভাষণ দিতে দেখা যায় I.N.D.I.A জোটে কংগ্রেসের শরিক, অরবিন্দ কেজরিওয়ালের স্ত্রী সুনীতা কেজরিওয়াল, ঝাড়খণ্ডের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনের স্ত্রী কল্পনা সোরেন, জম্মু ও কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ফারুখ আবদুল্লা, সমাজবাদী পার্টির অখিলেশ যাদব, রাষ্ট্রীয় জনতা দলের তেজস্বী যাদব, ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেসের শরদ পওয়ার, শিবসেনা (UT)-র নেতা উদ্ধব ঠাকরে, DMK নেতা এমকে স্ট্যালিনদের।


কিন্তু ওই ভিডিও-র কোনও অংশে তৃণমূল এবং বামেদের কাউকে দেখা যায়নি। ভিডিও-য় যদিও রাহুলের নেতৃত্বাধীন 'ভারত জোড়ো যাত্রা' এবং 'ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা'র বিভিন্ন মুহূর্ত তুলে ধরা হয়েছে, যাতে যোগ দেয়নি তৃণমূল। বাংলায় রাহুলের 'ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা' প্রবেশ করলে, আনুষ্ঠানিক ভাবে তাঁদের কিছু জানানো হয়নি বলে জানানো হয় তৃণমূল নেতৃত্বের তরফে। পাল্টা কংগ্রেস জানায়, আলাদা করে কাউকেই আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। জোটের শরিকরা স্বতঃস্ফূর্ত ভাবেই এগিয়ে এসেছেন। সেই নিয়ে টানাপোড়েনের পর বাংলায় আসন সমঝোতা নিয়েও তৃণমূল এবং কংগ্রেসেরে মধ্যে ঝামেলা বাধে, যার দরুণ 'একলা চলো' নীতি নেন মমতা। 


একই ভাবে, রাহুলের পদযাত্রায় অংশ নিতে অনীহা ছিল বামেদের। তাঁকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি বলে জানিয়েছিলেন সীতারাম ইয়েচুরিও। বিশেষ করে কেরলে সিপিএম-কে জয়রাম রমেশ বিজেপি-র 'বি টিম' বলে উল্লেখ করলে, সেই নিয়েও কটাক্ষ করেন ইয়েচুরি। বাংলায় রাহুলের 'ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা' প্রবেশ করলে মহম্মদ সেলিম, শতরূপ ঘোষদের রাহুলের পাশে দেখা যায় যদিও। তবে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব সাবধানী দূরত্ব বজায় রাখেন। এমনকি জোটে পরস্পরের সঙ্গে সহাবস্থান নিয়ে সংশয় প্রকাশ করতে দেখা যায় তৃণমূল, সিপিএম দুই শিবিরকেই। মমতার অভিসন্ধি নিয়েও প্রশ্ন তোলেন বামেরা। তৃণমূলনেত্রী যদিও জানান, রাজ্যে সিপিএম-এর হাত ধরার প্রশ্নই নেই। তবে জাতীয় স্তরে I.N.D.I.A জোটের সরকার গড়তে সমর্থন দেবেন তিনি। তাই শেষ দফার নির্বাচন চলাকালীন রাহুলের ভিডিও-য় তৃণমূল এবং সিপিএ, এই দুই দলের অনুপস্থিতি ভাবাচ্ছে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।