২০১৬-র বিধানসভা ভোটে আলিপুরদুয়ার জেলার ৫টি বিধানসভার মধ্যে ৪টি তৃণমূলের দখলে ছিল। একটি দখলে ছিল বিজেপির। ২০১৯-এর লোকসভা ভোটের বিধানসভা ভিত্তিক ফলে আলিপুরদুয়ার লোকসভার ৭টি বিধানসভা কেন্দ্রেই বিজেপির কাছে পিছিয়ে তৃণমূল। তাই বিধানসভা ভোটের আগে তফসিলি জাতি-উপজাতি, রাজবংশী ও আদিবাসী প্রধান এই জেলাকে পাখির চোখ করেছে তৃণমূল। এই প্রেক্ষাপটে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলকে জেতানোর ডাক দিলেন রাজবংশী ডেভলপমেন্ট অ্যান্ড কালচারাল বোর্ডের চেয়ারম্যান বংশীবদন বর্মন। তিনি বলেছেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজবংশী জনজাতির জন্য ২০০ প্রাইমারি স্কুল করেছেন, নারায়ণী সেনা ঘোষণা করেছেন। এমনকী রায়সাহেব পঞ্চানন বর্মার জন্মদিনকে সরকারি ছুটি ঘোষণা করেছেন। ফলে মুখ্যমন্ত্রীকে সাধুবাদ জানিয়ে তাঁর হাত শক্ত করতে হবে।’
আলিপুরদুয়ারের তৃণমূল কংগ্রেস মুখপাত্র সৌরভ চক্রবর্তী বলেছেন, ‘বংশীবদনের মাধ্যমেই রাজবংশী মানুষের কাছে সরকারি উন্নয়ন পৌঁছচ্ছে। একদিকে যেমন রাজবংশী ভোট, অপরদিকে চা শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধিতে উত্তরবঙ্গের সব আসনে এগিয়ে যাবে তৃণমূল।’
তৃণমূলের বিরুদ্ধে পাল্টা ভোটের আগে পাইয়ে দেওয়ার রাজনীতি করার অভিযোগ তুলেছে বিজেপি। আলিপুরদুয়ারের বিজেপি সাধারণ সম্পাদক সুমন কাঞ্জিলাল বলেছেন, ‘তৃণমূল রাজবংশী মানুষদের ভুল বুঝিয়েছে। বিধানসভা ভোটের মুখে প্রলোভন দেখিয়ে ভাবাবেগকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছেন। তবে এতে লাভ হবে না।’
আলিপুরদুয়ারে প্রায় পাঁচিশ শতাংশ রাজবংশী ভোট। জেলার ৫টি বিধানসভা আসনে এই ভোট বড় ফ্যাক্টর। তাই রাজবংশী ভোটকেই পাখির চোখ করছে তৃণমূল-বিজেপি দু’দলই। এমনই মত পর্যবেক্ষকদের।
চা বাগানের মালিকদের সঙ্গে তৃণমূল নেতাদের কাটমানির সম্পর্ক রয়েছে। সম্প্রতি এমনই অভিযোগ করেছেন বিজেপি নেতা সায়ন্তন বসু। পাল্টা আলিপুরদুয়ারের তৃণমূল বিধায়ক সৌরভ চক্রবর্তী বলেছেন, ‘সায়ন্তন বসু চা বাগানের আইন সম্পর্কে জানেন না। চা বাগানের পুরো দায়িত্ব কেন্দ্রের। বাগানের লাইসেন্স দেয় কেন্দ্র, ফলে কাটমানি তারাই খায় ৷’ তিনি আরও বলেন, ‘ন্যূনতম মজুরি অনেক বাড়ানো হয়েছে, যা অসমেও নেই। সায়ন্তনদের বুকের পাটা থাকলে কেন্দ্রীয় সরকারের বেতনের হারে মজুরি দিক ৷’
চা বাগান শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবিদাওয়া নিয়ে ইতিমধ্যেই আলিপুরদুয়ারে জেলাশাসকের দফতরে অভিযান করেছে গেরুয়া শিবির। তাদের অভিযোগ, রাজ্য সরকারের উদাসীনতার কারণে বিভিন্ন সুযোগ থেকে বঞ্চিত শ্রমিকরা। সামনেই বিধানসভা ভোট। আর ভোট এলেই চা বাগান শ্রমিকদের নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে শুরু হয়ে যায় দড়ি টানাটানি। অন্যথা হল না এবারও।