কলকাতা: একদিন যে মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়তকে ‘মা’ বলেছিলেন, শুক্রবার প্রকাশ্য়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে তাঁর প্রতি ক্ষোভ, অভিমান উগরে মন্ত্রিত্ব ছাড়লেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। কাঁদতে কাঁদতে বললেন, এমন কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে ভাবিনি।


শুভেন্দু অধিকারী, লক্ষ্মীরতন শুক্লার পর এবার রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। বিধানসভা ভোটের আগে তৃণমূলের পরপর ধাক্কা। দু’মাসে মন্ত্রিত্ব ছাড়লেন তিনজন।
এর মধ্যে শুভেন্দু মন্ত্রিত্বের সঙ্গে বিধায়ক পদ এবং দল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। ৫ জানুয়ারি ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীর পদ ছেড়েছেন হাওড়া উত্তরের তৃণমূল বিধায়ক লক্ষ্মীরতন। এবার সেই পথে হাঁটলেন হাওড়ারই ডোমজুড়ের বিধায়ক রাজীব। শুক্রবার বনমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিলেন তিনি। তাঁর ক্ষোভের যে একটা বড় অংশ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে, তা-ও এদিন কার্যত স্পষ্টই বুঝিয়ে দিয়েছেন রাজীব। বললেন, আড়াই বছর আগে আমার দফতর বদল হয়। একটা জিনিস তখন আমার খারাপ লেগেছিল। ন্যূনতম সৌজন্য তখন আমি পাইনি। মন্ত্রী হিসেবে সেদিনও সব বৈঠক করেছি। আমাকে টিভিতে দেখতে হয়েছে যে আমাকে সরানো হয়েছে। আমি সেদিন অত্যন্ত অপ্রস্তুত হয়েছিলাম। তারপর দিনই আমি মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দিতে চেয়েছিলাম। সেদিন আমাকে উনি নিরস্ত করেছিলেন। অথচ ফ্ল্যাশব্যাকে ফিরে চলুন সেই দিনটায়। ২০১৬ সালের জুলাই। তৎকালীন সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বিধানসভায় তাঁর দফতরের বাজেটের ওপর জবাবি ভাষণে বলেন, বাংলার মায়ের নাম যদি কিছু থাকে, আমার মায়ের নাম যদি কিছু হয়, তা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রতি মুহূর্তে তিনি খবর রাখেন। রাতে যদি কেউ এক জনও ফোন করেন, তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
কিন্তু সেই বন্ধনের সুখস্মৃতি, অনুভূতি যে আজ অতীত, তা আর গোপন রইল না।
মন্ত্রী হলেও মন্ত্রিসভার শেষ পাঁচটি বৈঠকে আসেননি রাজীব। দু’দফায় তাঁর সঙ্গে বৈঠক করে, মানভঞ্জনের চেষ্টা করেছেন তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু, তাতে কাজ হয়নি। শুক্রবার রাজীব মন্ত্রিত্ব ছেড়ে ক্ষোভ উগরে দিলেও তাতে আর গুরুত্ব দিচ্ছে না তৃণমূল। পার্থ বলেন, যাঁরা দল ছেড়ে যান, কী কারণে যান, তাঁরাই বলতে পারবেন। জনসমুদ্রের সমর্থনে তৃণমূল আজ এই জায়গায়। সমুদ্র থেকে দু’-ঘটি জল তুলে নিলে সমুদ্রের কিছু যায় আসে না। ঠিক যেমন দুটো পাতা ঝরে গেলে বটগাছের কিছু যায় আসে না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তো নিজেই একটা ইঞ্জিন। তিনিই সকলকে টেনে নিয়ে যান। কোন স্টেশনে কে নেমে গেলেন, তাতে কিছু যায় আসে না।

শুক্রবার পদত্যাগের পর রাজীব শুধু দলনেত্রীর বিরুদ্ধে ক্ষোভের কথা জানিয়ে থামেননি। দলের নেতাদের একাংশের বিরুদ্ধেও খোলাখুলি ক্ষোভ উগরে দিয়ে বলেন, আড়াই বছর ধরে আমার ভিতরে অনেক ক্ষোভ ছিল। নেত্রীকে বলেছি, নেতাদের বারংবার বলেছি। গত এক মাসে আমার সতীর্থদের কথা আমায় আহত করেছে। এমন আহত না হলে আমি এই সিদ্ধান্ত নিতাম না। এর পাল্টা হাওড়া তৃণমূলের চেয়ারম্যান অরূপ রায়ের বক্তব্য়, আমিও অনেকদিন প্রেসিডেন্ট ছিলাম, আমি তো ক্ষোভ বিক্ষোভ দেখাইনি। এই সমস্ত ব্যাপার হচ্ছে বাহানা তৈরি করা, দলকে বিপদে ফেলে ব্ল্যাকমেল করার অর্থ নেই।

রাজীবের মন্ত্রিত্ব ত্যাগ নিঃসন্দেহে ভোটের আগে তৃণমূলের কাছে বড় ধাক্কা! কিন্তু, কৌশলী তৃণমূল আর কারও দলত্যাগকে গুরুত্ব দিচ্ছে না। দলীয় সাংসদ সৌগত রায় যেমন বলেন, গেছেন ভালই হয়েছে।

বৃহস্পতিবার ব্যাঙ্গমিশ্রিত সুরে রাজীবের প্রশংসা করেছিলেন যে দিলীপ ঘোষ, তিনিই আজ রাজীব মন্ত্রিত্ব ছাড়তেই জানিয়ে দিয়েছেন দরজা খোলা!
কালীঘাটে ইস্তফাপত্র দেওয়ার পর সোজা রাজভবনে যান রাজীব। দীর্ঘক্ষণ রাজ্যপালের সঙ্গে কথা হয় তাঁর। বেরিয়ে এসে দলের একাংশের বিরুদ্ধে কাঁদতে কাঁদতে ক্ষোভ প্রকাশের পাশাপাশি দলনেত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেও বলেন, আমি সারা জীবন মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকব। আজ আজ যা, পুরোটাই ওনার জন্য।
তবে পাল্টা তৃণমূলে একমাত্র পিসি-ভাইপো অপরিহার্য মন্তব্য করে খোঁচা দিয়েছেন সিপিএম কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী।

শুক্রবার শহরে আসছেন নরেন্দ্র মোদি। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কি সাক্ষাৎ‍ হতে পারে পদত্যাগী বনমন্ত্রীর? ভোটের আগে বঙ্গ রাজনীতিতে কোনওকিছুই অসম্ভব নয়।