নয়াদিল্লি: লোকসভা নির্বাচনের আগে নির্বাচনী বন্ডকে ‘অসাংবিধানিক’ ঘোষণা করেছে সুপ্রিম কোর্ট। সেই নিয়ে কাটাছেঁড়ার মধ্যেই প্রশ্ন উঠছে স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া-র (SBI) ভূমিকা নিয়ে। ২২,২১৭টি নির্বাচনী বন্ড সংক্রান্ত তথ্য বুধবারের মধ্যে জমা দেওয়ার কথা ছিল তাদের। কিন্তু ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়তি সময় চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে তারা। নির্বাচনী বন্ড মারফত কোন দলে, কত টাকা গিয়েছে, সেই সংক্রান্ত তথ্য প্রদানে ইচ্ছাকৃত ভাবে SBI গড়িমসি করছে বলে অভিযোগ বিরোধীদের। (SBI Electoral Bonds)


সুপ্রিম কোর্টের বেঁধে দেওয়া বুধবার পেরিয়ে গেলেও নির্বাচনী বন্ড সংক্রান্ত তথ্য জমা দিতে পারেনি SBI.  সেই নিয়ে আদালত অবমাননার অভিযোগে ইতিমধ্যেই শীর্ষ আদালতে আবেদন জমা দিয়েছে দুই অলাভজনক সংস্থা। ইচ্ছাকৃত ভাবে তারা আদালতের নির্দেশ অমান্য করেছে, তাই কড়া পদক্ষেপ করা উচিত বলে আদালেত আবেদন জমা পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে SBI-এর ভূমিকা নিয়ে সরব হয়েছে বিরোধী দলগুলিও। (Supreme Court)


নির্বাচনী বন্ড থেকে কত টাকা চাঁদা জুটেছে, সেই নিয়ে যে হিসেব সামনে এসেছে, সেই অনুযায়ী, কর্পোরেট সংস্থা এবং শিল্পপতিদের কেনা নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি চাঁদা পেয়েছে BJP, ৬,৫৬৬.১২ কোটি টাকা। কংগ্রেস ১,১২৩.২৯ কোটি চাঁদা পেয়েছে কংগ্রেস। বাকি টাকা অন্যদের ঝুলিতে যায়। রাজনৈতিক দলগুলিকে কারা চাঁদা দিয়েছে, বুধবারের মধ্যে সেই তথ্য জমা দেওয়ার কথা ছিল SBI-এর। কিন্তু আরও ১৬ সপ্তাহ বাড়তি সময় চেয়েছে তারা।



আরও পড়ুন: Congress Candidates List: রাহুল-তারুর-সহ এবার ৩৯ জনের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা কংগ্রেসের


শুধু তাই নয়, বাড়তি সময় চাওয়া চাওয়ার যুক্তি দিতে গিয়ে আদালতে SBI জানিয়েছে, নির্বাচনী বন্ড বিক্রি এবং তা ভাঙিয়ে টাকা তোলার ডিজিটাল রেকর্ড নেই তাদের কাছে। সব জোগাড় করতে বেশ কিছুটা সময় লাগবে। যদিও বিশেষজ্ঞদের মতে, ব্যাঙ্কের গোটা পরিষেবা যেখানে ডিজিটাল মাধ্যম নির্ভর, সেখানে SBI-এর কাছে ডিজিটাল রেকর্ড না থাকাটা অস্বাভাবিক। আর যদি নাও থাকে, ২২,২১৭টি নির্বাচনী বন্ড বিক্রির নথি তৈরি করতে কয়েক দিন সময় লাগে। ১৬ সপ্তাহ চাওয়া হচ্ছে কেন, প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই।


লোকসভা নির্বাচনের আগে যাতে BJP-কে প্রশ্নের মুখেই পড়তে না হয়, তার জন্যই ইচ্ছাকৃত ভাবে SBI গড়িমসি করছে বলে অভিযোগ বিরোধীদের। কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশের বক্তব্য, ‘নতুন ভারতে লুকোচুরি খেলা চলছে: দেশ খুঁজছে, মোদি লুকোচ্ছেন। SBI -এর প্রধানমন্ত্রী চাঁদা লুকোও প্রকল্প মিথ্যের উপর দাঁড়িয়ে। তিন সপ্তাহের মধ্যে তথ্য জমা দিতে বলা হয়েছিল। তার পাল্টা ৩০ জুন পর্যন্ত সময় চেয়েছে SBI, যাতে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে বৈতরণী পার হয়ে যায় BJP-র’।


বিরোধীদের দাবি, প্রত্যেকটি নির্বাচনী বন্ড দু'টি শর্তি বিক্রি করা হচ্ছিল, ১) KYC নেওয়া হয়, যাতে ক্রেতার পরিচয় ব্যাঙ্কের হাতে থাকে, ২) বন্ডে গোপন সিরিয়াল নম্বরও ছিল, যাতে প্রত্যেকটির হিসেব থাকে। সেই নিরিখে সমস্ত তথ্য ব্যাঙ্কের হাতে মজুত থাকার কথা। জয়রামের বক্তব্য, "আসল কথা হল, প্রধানমন্ত্রী চাঁদা প্রদানকারী কর্পোরেটদের নাম প্রকাশ নিয়ে ভয়ে রয়েছেন। যিনি বলেছিলেন 'নিজেও খাব না, কাউকে খেতেও দেব না', আজ তাঁর মন্ত্র হল, 'না কোনও কথা বলব, না কোনও তথ্য দেখাব'।"



কংগ্রেস নেতা কার্তি চিদম্বরমও এ নিয়ে মুখ খুলেছেন। তাঁর মতে, স্বচ্ছতা বজায় রাখতে আদালতের নির্দেশ মেনে চলা উচিত SBI-এর।  নির্বাচনী বন্ড সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশিত হলে বেকায়দায় পড়ে যাবে BJP. তাই সব চেপে রাখা হচ্ছে। সংবাদ সংস্থা পিটিআই-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কার্তি বলেন, "নির্বাচনের আগে চাঁদা প্রদানকারীদের পরিচয় প্রকাশ পেলে লোকসভা নির্বাচনের আগে অস্বস্তিতে পড়বে BJP. কারণ কারা BJP-কে চাঁদা দিয়েছে এবং তার বিনিময়ে লাভবান হয়েছে, তা পরিষ্কার হয়ে যাবে সকলের সামনে। BJP-কে চাঁদা দিয়ে তদন্ত এড়িয়েছেন কারা, কাদের সুযোগ-সুবিধা করে দিয়েছে কেন্দ্র, পরিষ্কার হয়ে যাবে সকলের কাছে।"


শিবসেনা (UBT) নেতা উদ্ধব ঠাকরেও SBI-এর তীব্র নিন্দা করেন। তাঁর দাবি, কৃষকদের ঋণ শোধ করতে একটু দেরি হলে জ্বালাতন করে মারে SBI. অথচ নির্বাচনী বন্ড নিয়ে সময়সীমা পেরিয়ে গেলেও তথ্য দিচ্ছে না SBI. উদ্ধবের কথায়, "ঋণশোধে দেরি হলে কৃষকদের বাড়িতে নোটিস ঝুলিয়ে দিয়ে যায় SBI. কৃষকদের সব নথি হাতের কাছে রাখা থাকে। কিন্তু নির্বাচনী বন্ডের তথ্য থাকে না। তার জন্য বাড়তি সময় চাইতে হয়।" কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে এর আগে বলতে শোনা যায়, "১০ বছরে BJP যা করে দেখিয়েছে, গত ৪০ বছরেও কংগ্রেস তা পারেনি।" শাহের সেই মন্তব্য টেনে কটাক্ষের সুরে উদ্ধব বলেন, "১০ বছরে নির্বাচনী বন্ড থেকে ৭ হাজার কোটি টাকা পেয়েছে BJP, কংগ্রেস মাত্র ৬০০-৭০০ কোটি পেয়েছে।"


সিপিএম-এর পলিটব্যুরো তরফে বিবৃতি প্রকাশ করে SBI-এর তীব্র নিন্দা করা হয়। বলা হয়, 'SBI-এর সমস্ত পরিষেবা ডিজিটাল মাধ্যমে নির্ভর। তা সত্ত্বেও নির্বাচনী বন্ড নিয়ে কোনও তথ্য নেই, একথা আদৌ কি বিশ্বাসযোগ্য? এর নেপথ্যে গভীর ষড়যন্ত্র রয়েছে, যাতে লোকসভা নির্বাচনের আগে নির্বাচনী বন্ড সংক্রান্ত তথ্য সামনে না আসে’।


কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকারের চাপেই SBI বাড়তি সময় চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে বলেও দাবি করেছে CMP-এর পলিটব্যুরো। তাদের বক্তব্য, "মোদি সরকারের চাপেই এই পদক্ষেপ করতে হয়েছে SBI-কে। অবিলম্বে সমস্ত নথিপত্র জমা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে পারত সুপ্রিম কোর্ট।" এ নিয়ে আদালতে আবেদন জমা দিয়েছে দুই অলাভজনক সংস্থা। ১১ মার্চ SBI-এর সময়সীমা বৃদ্ধির আবেদনের শুনানি চলাকালীনই ওই দুই আবেদনের শুনানি করতে আর্জি জানিয়েছেন আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ।