বিষ্ণুপুর: একসঙ্গে সারাজীবন পথ চলতে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছিলেন। আজ দু'জনের পথ আলাদাই হয়ে যায়নি শুধু, রাজনীতির ময়দানে পরস্পরের প্রতিপক্ষও তাঁরা। ষষ্ঠ দফায় বিষ্ণুপুর লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপি-র প্রার্থী সেখানকার দু'দফার সাংসদ সৌমিত্র খাঁ। আর তাঁর বিপরীতে তৃণমূল প্রার্থী করেছে প্রাক্তন স্ত্রী সুজাতা মণ্ডলকে। ভোটের দিনও সৌমিত্রকে কটাক্ষ করলেন সুজাতা। (Sujata Mondal)


লোকসভা নির্বাচনে এবার বিষ্ণুপুর প্রাক্তন দম্পতির লড়াই দেখছে। শনিবার সকালে ভোটগ্রহণ শুরু হতে, রাস্তায় বেরোন সুজাতা। ভোটকেন্দ্র এবং বুথগুলির পর্যবেক্ষণ করে দেখেন তিনি। সৌমিত্র যদিও সকালের দিকে বেরোননি। বরং হোটেলের ঘরেই ছিলেন তিনি। ফোনে যোগাযোগ রেখেছিলেন দলীয় কর্মীদের সঙ্গে। শুধু তাই নয়, জিতে গিয়েছেন এমন ভাবও লক্ষ্য করা যায় সৌমিত্রের আচরণে। (Saumitra Khan)


এদিন সকালে বিষ্ণুপুরে নিজের হোটেলের ব্যালকনি থেকে সংবাদমাধ্যমকে হাত নাড়েন সৌমিত্র। সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরার উদ্দেশে দুই আঙুলে 'ভিকট্রি সাইন'ও দেখান তিনি। বিষ্ণুপুরে জয়ী হওয়া নিয়ে কি তাহলে আত্মবিশ্বাসী সৌমিত্র, ভোটগ্রহণের আগে তাই কি নিজেকে বিজয়ী হিসেবে তুলে ধরছেন তিনি? এই প্রশ্ন করা হয়েছিল তাঁর প্রাক্তন স্ত্রীকে। 


আরও পড়ুন: Abhijit Gangopadhyay : এজেন্টকে বুথে বসালেন প্রার্থী নিজেই, কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভূমিকায় অসন্তুষ্ট অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ও


যদিও বিষয়টিকে ধর্তব্যের মধ্যেই আনতে চাননি সুজাতা। বরং তিনি বলেন, "বিষ্ণুপুরের মানুষকে নিয়ে, নিজের কাজ নিয়ে আগ্রহী আমি। তার বাইরে কোনও পাগল...কে নিয়ে নয়। ওঁকে নিয়ে কোনও প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার প্রবৃত্তি আমার নেই।" সুজাতা জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত বিষ্ণুপুরে কোনও অভিযোগ পাননি তিনি। শান্তিপূর্ণ ভাবেই ভোট হচ্ছে সেখানে। দু'একটি মেশিন খারপ হয়েছে। সেগুলি বদলে দেওয়ার ব্যবস্থা চলছে। 


নির্বাচনের প্রাক্কালে সম্প্রতি সৌমিত্রের বিরুদ্ধে কিছু পোস্টার চোখে পড়ে এলাকায়। 'সৌমিত্র খাঁ-এর চার্জশিট' শীর্ষক পোস্টারে লেখা হয়, 'রাজনৈতিক স্বার্থের জন্য আপনি সরেশ্বর মন্দিরকেও ছাড়লেন না? নিজের স্ত্রীকে তো ছাড়লেনই! উপরন্তু, অন্যের স্ত্রীকে ভোগ কররা জন্য একটি নিরীহ মানুষকেও খুন করলেন? আপনার চেয়ে বড় বালি মাফিয়া কি কেউ আছে গোটা পশ্চিম বাংলায়? এই লম্পটটিকে কি ভোট দেবেন আপনারা'?


সেই প্রসঙ্গ তুললে সুজাতা বলেন, "ওঁর যা চরিত্র, অতীতের রেকর্ড, যা ব্যবহার এবং যা কর্মকাণ্ড, সেই নিয়ে দলীয় কর্মীরাই ক্ষুব্ধ। আমি যা দেখেছি, শুনেছি, সবটাই সত্য। একটাও মিথ্যে লেখা হয়নি। আমি ওঁকে নিজের প্রতিদ্বন্দ্বীই মনে করি না। ১০ বছর সাংসদ থেকেও বিষ্ণুপুরের জন্য কোনও উন্নয়ন করেননি, মানুষের পাশে দাঁড়াননি। আমি বলেছিলাম, দিল্লিতে পড়ে না থেকে বিষ্ণুপুরের মানুষের পাশে থাকার কথা। তাতে আমাকে বলেছিলেন, 'আমি যাব না। আমি কি চাইব আমার করোনা হোক?' উনি কর্মীদের ফোন ধরেন না, প্রয়োজনে পাশে থাকেন না।" বিষ্ণুপুরের মানুষ ভোটবাক্সেই জবাব দেবেন, বিষ্ণুপুর লোকসভা কেন্দ্র এবং রাজনৈতিক মঞ্চ থেকে সৌমিত্রকে গোহারা হারিয়ে বিদায় জানাবেন বলে দাবি সুজাতার।