দক্ষিণ ২৪ পরগনা: কাল একমঞ্চে রাহুল গাঁধী-বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। তার ঠিক আগের দিন, রাজ্যে এসে বাম-কংগ্রেস জোটের সুরটা বেঁধে দিলেন সনিয়া গাঁধী। আর্জি জানালেন, কংগ্রেসের পাশাপাশি বাম প্রার্থীদের ভোট দেওয়ার। অন্যদিকে, তৃণমূলকে আক্রমণ করতে মমতা-মোদী আঁতাঁতের অভিযোগকেই বার বার হাতিয়ার করলেন কংগ্রেস সভানেত্রী। তাঁর প্রশ্ন, দু’জনের মধ্যে আঁতাঁত না হলে, বেআইনি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে তদন্তের এমন গতি কেন?
ভোট প্রচারে রাজ্যে এসে সনিয়া গাঁধীর গলায় বাম প্রার্থীদেরও জেতানোর আবেদন। রামপুরের সভা থেকে তিনি বলেন, কংগ্রেস এবং লাল ঝাণ্ডা ওয়ালা পার্টির প্রার্থীদের ভোট দিয়ে জেতান। এদিন কপ্টার থেকে নেমে হেঁটেই সভামঞ্চে গেলেন যান সনিয়া। সভা শেষেও কংগ্রেস সভানেত্রী একেবারে অন্য মেজাজে। ব্যারিকেডে উঠে উপস্থিত জনতার সঙ্গে হাতও মেলাতে দেখা যায় তাঁকে। শ্রীরামপুরের আগে ক্যানিংয়ের সভাতেও সনিয়ার গলায় ছিল জোরাল জোট-বার্তা। বলেন, তৃণমূল-বিজেপির জালে ফাঁসবেন না। কংগ্রেস ও বাম প্রার্থীদের জেতান।
পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, রাহুল গাঁধীর সভার ঠিক আগের দিন বাংলায় এসে জোটের সুরটা সপ্তমে বেঁধে দিলেন সনিয়া গাঁধী। তাঁর এ দিনের দুটি সভাতেও জোরাল ভাবে জোটের ছবি ধরা পড়ল। দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিংয়ে সনিয়া গাঁধীর সভায় ছিলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তথা যাদবপুরের বাম প্রার্থী সুজন চক্রবর্তী। আর শ্রীরামপুরে সনিয়া গাঁধীর সভামঞ্চে সিপিএমের আরেক রাজ্য সম্পাদকণ্ডলীর সদস্য রবীন দেব, যিনি আবার সিঙ্গুরের বাম প্রার্থী। এছাড়াও, ছিলেন হুগলির সিপিএমের জেলা সম্পাদক সুদর্শন রায়চৌধুরীও।
পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, এ সবই জোট-ছবি। কিন্তু, বাম-কংগ্রেস জোটের সেরা বিজ্ঞাপন দেখা যাবে বুধবার। পার্ক সার্কাস ময়দানে। যেখানে উপস্থিত থাকবেন দুই শিবিরের দুই মুখ। কংগ্রেস সহ-সভাপতি রাহুল গাঁধী এবং প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। একসভায়। একমঞ্চে। যা দুই শিবিরের কর্মীদের উৎ‍সাহ তুঙ্গে নিয়ে যাবে বলেই ধারণা রাজনৈতিক মহলের একাংশের।


তবে, শুধু জোট-বার্তা দেওয়াই নয়, এদিন পুরোদমে তৃণমূল ও বিজেপিকে সমানতালে আক্রমণ করেন সনিয়া। বার বার মমতা-মোদী আঁতাঁতের অভিযোগে সরব হলেন কংগ্রেস সভানেত্রী। যেমন শ্রীরামপুরের সভায় বলেন, তৃণমূল-বিজেপি একই মুদ্রার দুই পীঠ। তাঁর প্রশ্ন, মোদী-মমতা এক না হলে চিটফান্ডের তদন্ত কেন বন্ধ হয়ে গেল?
এর আগে ক্যানিংয়ের সভা থেকেও মোদী-মমতা আঁতাঁত নিয়ে সোচ্চার হন সনিয়া। বলেন, মোদী-মমতার আঁতাঁত বাংলার জন্য বিপদ। মোদী-মমতার অহঙ্কারী শক্তি গণতন্ত্রের জন্য বিপদ। এখানেই থেমে না থেকে তিনি আরও বলেন, মোদী বলেন, যা করেছেন তিনি করেছে, কংগ্রেসের ষাট বছরের রাজত্বে কিছু হয়নি। মমতাও বলেন তিনি সব করেছেন, আগে কিছু হয়নি। তৃণমূল-বিজেপির জালে ফাঁসবেন না।
পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, বাম-কংগ্রেসের সঙ্গে বিজেপির আঁতাঁতের অভিযোগ করতে গিয়ে ছবি বিতর্কে অস্বস্তিতে তৃণমূল। এই পরিস্থিতিতে, শেষ দুই দফা ভোটের আগে মোদী-মমতা আঁতাঁতের অভিযোগকে হাতিয়ার করে তৃণমূলের উপর আরও চাপ বাড়ালেন সনিয়া গাঁধী।
পাশাপাশি, ষষ্ঠ দফায় যে দক্ষিণ ২৪ পরগনায় নির্বাচন, সেখানে একটা বড় অংশ সংখ্যালঘু ভোট। তার আগে, মোদী-মমতার আঁতাঁতের অভিযোগে যে ভাবে এ দিন সরব হলেন সনিয়া, তা যথেষ্ট তাৎ‍পর্যপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ।