করুণাময় সিংহ, মালদা: কোথাও দেদার ছাপ্পা ভোট (Rigging), কোথাও ব্যালট বাক্স তুলে ফেলে দেওয়া, কোথাও আবার নির্বিচারে হামলা। দিকে দিকে অশান্তির খবর আসছিল সকাল থেকেই। তার মধ্যে হঠাৎ গুলি ও বোমাবাজির খবর মালদার (Malda) রতুয়ার (Ratua) দেবীপুর অঞ্চলে। সেখানকার ৪৬ নম্বর বুথে অশান্তিতে ১ জন গুলিবিদ্ধ হন, জখম ৫। বুথ দখল করে সাধারণ ভোটারদের (Panchayat Election 2023) মারধরের অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। যদিও যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছে শাসকদল।
কী অভিযোগ?
এদিন বুথের ভিতরের সিসি ক্যামেরা ভেঙে ফেলা হয় বলেও অভিযোগ উঠেছে। সবেতেই সন্দেহের তির তৃণমূলের বিরুদ্ধে। এই অশান্তির জেরে সকালেই বন্ধ হয়ে যায় ভোটগ্রহণ। পরে পুলিশ এসে ব্যালট বাক্স ও ৩ কংগ্রেস প্রার্থীকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়। জখমদের মালদা মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করা হয়েছে। পঞ্চায়েত ভোটের বিজ্ঞপ্তি জারি হওয়ার পর থেকে, আজ ভোটের দিন পর্যন্ত মোট ৩২ জনের রক্ত ঝরেছে। শুধুমাত্র ভোটের দিনই ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু ভোটের দিন তো কেন্দ্রীয় বাহিনী ও রাজ্য পুলিশের নজরদারির কথা ছিল, তাঁরা কোথায়? এই নিয়ে রাজ্য নির্বাচন কমিশনার প্রথমে রাজীব সিনহা কার্যত নীরব থাকলেও পরের দিকে বলেন, "অপরাধ ঘটলে প্রথমে মামলা দায়ের হয়। তার পর তদন্ত এবং গ্রেফতারি। আশাকরি পুলিশ ব্যবস্থা নেবে।" জায়গায় জায়গায় যে অশান্তির খবর সামনে আসছে, তা কি কমিশনের কাছে পৌঁছচ্ছে? প্রশ্নের উত্তরে রাজীব বলেন, "ঘন ঘন অভিযোগ আসছে। এ নিয়ে নির্দিষ্ট পরিসংখ্যান দেওয়া সম্ভব নয়। তবে ৬০০-র মতো অভিযোগ সামনে এসেছে। কমিশন সমাধানও করছে।" আগামী দিনেও অভিযোগ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি। কিন্তু পঞ্চায়েত নির্বাচন শান্তিপূর্ণ করানোর ভূরি ভূরি প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও, ছবিটা পাাল্টাল না। একের পর এক মায়ের কোল খালি হয়ে গিয়েছে। ভোট দিতে বেরোতেই ভয় পাচ্ছিলেন সাধারণ মানুষের। তাই শান্তিপূর্ণ নির্বাচন কি বলা সম্ভব এই নির্বাচনকে? প্রশ্নের উত্তরে রাজীব বলেন, "গন্ডগোল, অশান্তির খবর এসেছে। মানুষ নিজের মতামতের নিরিখে অভিযোগ জানান। সেগুলি খতিয়ে দেখতে হবে। সবকিছু শান্তিপূর্ণ হয়েছে বলা সম্ভব নয়। আবার শুধু অশান্তিই হয়েছে, এমনই বলা যায় না।" যেমন যেমন অভিযোগ আসবে, তেমন তেমন ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান রাজীব। প্রসঙ্গত, এদিনও রাস্তায় নেমেছিলেন রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস (Governor C V Ananda Bose)। তিনি বলেন,' শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আশা করেছিলাম। কিন্তু চতুর্দিকে খুন হচ্ছে। মানুষ জানিয়েছে গুন্ডারা ভোট দিতে যেতে বাধা দিচ্ছে। প্রিসাডিং অফিসারও কোনও কোনও সময় সহায়তা করছেন না। এটা বন্ধ হওয়া দরকার। ভোট ব্যালটে হওয়া উচিত, বুলেটে নয়। সকলকে বলব গণতন্ত্রের নিয়ম মেনেই ভোট দিন।'
যদিও তাতে কাজের কাজ কত হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।