আবির দত্ত, কোচবিহার: আতঙ্কের মধ্যে গণতন্ত্রের উৎসব (Panchayat Elections 2023)? সম্ভব কি? পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিন নানা ছবিতে ফের জোরাল এই প্রশ্ন। রাজ্যের নানা প্রান্তের মতো এদিন সকাল থেকেই অশান্তির খবর আসছিল কোচবিহারের (Coochbehar) দিনহাটা থেকে। অভিযোগ, বিজেপি কর্মীরা (BJP) তৃণমূল কর্মীদের (TMC) এমন তাড়া করেন যে প্রাণভয়ে সন্তানকে নিয়ে খাটের (Shelter Under Bed) নিচে লুকোতে বাধ্য হন এক তৃণমূলকর্মী।
কী দেখা গেল?
মুখে রুমাল বাঁধা, হাতে লাঠি। চোখেমুখে উত্তেজনার ছবি। কী যেন খুঁজছেন ওঁরা! টিনের তৈরি একটি দোকানে ব্যাপক ভাঙচুর চলেছে। তারই ভিতরে, একটি খাটের নিচে প্রাণভয়ে লুকিয়ে রয়েছেন এক ব্যক্তি। অভিযোগ, দিনহাটার অচিনতলায় ১৮০ ও ১৮১ নম্বর বুথে ছাপ্পা ভোট দিয়েছে তৃণমূল। তাই বুথ ভাঙচুর করে, ব্যালট বাক্সে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। আর তার পরই পাল্টা তৃণমূল কর্মীদের তাড়া করেন বিজেপি কর্মীরা। সেই সময়ই প্রাণভয়ে সন্তানকে নিয়ে খাটের নিচে লুকোন তৃণমূল কর্মী। বিষয়টি নিয়ে উত্তেজিত বিজেপি কর্মীদের প্রশ্ন করা হলে, তাঁদের পাল্টা দাবি, অস্ত্র হাতে তাঁদের আক্রমণ করার চেষ্টা হয়েছে। তাই পাল্টা লাঠি হাতে রাস্তায় নামতে হল বিজেপিকে, এমনই দাবি গেরুয়া শিবিরের। এমন পরিস্থিতিতে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আদৌ কি সম্ভব? তৃণমূল কর্মীকে যখন শিশুকে প্রাণভয়ে আঁকড়ে খাটের তলায় লুকোতে হয়, এমন পরিবেশে গণতন্ত্রের উৎসব কতটা সম্ভব?
মৃত্যুমিছিল...
এদিন সকাল থেকে দুপুরের মধ্যে ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে রাজ্যের নানা প্রান্তে। নিহতদের মধ্যে এক প্রার্থী-সহ ৭ তৃণমূল কর্মী রয়েছেন। খড়গ্রাম, রেজিনগর, মানিকচক, চাপড়া, বাসন্তী, কাটোয়া, চাকুলিয়ায় খুন হন ৭ তৃণমূল নেতা-কর্মী। লালগোলা এবং আউশগ্রামে দু'জন ২ সিপিএম কর্মীর মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। আর নওদায় এক কংগ্রেস কর্মীর প্রাণহানি হয়েছে বলে খবর। এর মধ্যে কোচবিহারের মাথাভাঙায় ফের গুলি চলার খবর আসে। গুলিবিদ্ধ হন এক তৃণমূলকর্মী। হামলার অভিযোগ ওঠে বিজেপির বিরুদ্ধে। কংগ্রেস-তৃণমূলের সংঘর্ষে ভোট বন্ধ রাখতে হয় ধূপগুড়িতে।
ভোট শুরুর দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন তৃণমূলের মহিলা কর্মীরা। ভোট-সন্ত্রাসের খবর এসেছে উত্তর ২৪ পরগনার বাগদা থেকেও। তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে সিপিএম ও নির্দল সমর্থকদের সংঘর্ষের খবর আসে সেখান থেকে। তৃণমূলের বিরুদ্ধে ভোট লুঠের অভিযোগে তেতে ওঠে বাগদা। বস্তুত, ভোটের দিনও পরিস্থিতি সরেজমিন দেখতে বেরিয়েছিলেন রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস। বলেন,' শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আশা করেছিলাম। কিন্তু চতুর্দিকে খুন হচ্ছে। মানুষ জানিয়েছে গুন্ডারা ভোট দিতে যেতে বাধা দিচ্ছে। প্রিসাডিং অফিসারও কোনও কোনও সময় সহায়তা করছেন না। এটা বন্ধ হওয়া দরকার। ভোট ব্যালটে হওয়া উচিত, বুলেটে নয়। সকলকে বলব গণতন্ত্রের নিয়ম মেনেই ভোট দিন।'