কৃষ্ণনগর:  সংসদে আদানিদের নিয়ে প্রশ্ন করার বিনিময়ে টাকা নিয়েছিলেন বলে অভিযোগ, তার জেরে সাংসদ পদ চলে গিয়েছে আগেই। নতুন করে তৃণমূল টিকিট দিলেও, এখনও সেই নিয়ে তরজা জারি। নির্বাচনী প্রচারে ব্যস্ত থাকাকালীনই মহুয়া মৈত্রের (Mahua Moitra) বাড়ি-দফতরে হানা দেয় কেন্দ্রীয় সংস্থা। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠানো হয় দিল্লিতে। প্রচারে ব্যস্ত থাকার দরুণ যদিও তদন্তকারীদের সামনে হাজিরা দেননি মহুয়া। সেই নিয়েও শুরু হয়েছে তরজা। এসবের মধ্যেই এবিপি আনন্দের মুখোমুখি হলেন মহুয়া। বিতর্ক থেকে রাজনৈতিক অবস্থান, সবকিছু নিয়ে খোলামেলা জবাব দিলেন। (Lok Sabha Elections 2024)


মহুয়া মৈত্র মানেই যেন বিতর্ক। বিতর্ক শেষই হচ্ছে না। আপনাকে ঘিরে এই যে এত বিতর্ক, ব্যক্তিগত ভাবে কী অনুভূতি আপনার?


আমাকে নিয়ে বিতর্ক কেন তৈরি করে লোকে, আমি আর চিন্তা করি না। বিতর্ক যখন তৈরি করে, আমাকে সেটা নিয়েই থাকতে হবে। আমি চেষ্টা করি, আমার কাজ করে যাওয়ার। লোক যদি আমার সম্পর্কে কথা বলতে ভালবাসে, সেখানে আমার কিছু করণীয় নেই।


রাজনৈতিক কারণেই কি এত বিতর্ক আপনাকে ঘিরে?


সন্দেশ যেমন ছাঁচে ফেলা যায়, রাজনীতিক হিসেবে আমি হয়ত চিরাচরিত গোত্রে পড়ি না। রাজনীতিতে এমন চরিত্র হয়ত অনেকের পছন্দ নয়। রাজনীতিকদের নিয়ে একটা ধারণা রয়েছে। আমার ক্ষেত্রে সেটা প্রযোজ্য নয় বলেই হয়ত বিতর্ক। আমি এই নিয়ে ভাবি না।


কৃষ্ণনগর লোকসভা নির্বাচন কেন্দ্রে ইতিমধ্যেই প্রচার করে গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। হয়ত আবার আসবেন। এখানে অমৃতা রায়কে প্রার্থী করেছে বিজেপি। ফোনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলছেন। আপনার উপর কি মানসিক চাপ তৈরি হচ্ছে?


না, আমার খুব ভাল লাগছে। একটা কেন্দ্রে প্রধানমন্ত্রী এসেছেন, আবার আসবেন। তিন বার আসবেন, তার পরও বিজেপি এই কেন্দ্রে হারবে।  গতবারও উনি এসেছিলেন। এবার তো আদর্শ আচরণ বিধি ঘোষণার আগেই এসেছিলেন। আচরণ বিধি ঘোষণার পরও আসবেন আশাকরি। আমি তো বলছি দু’বার-তিন বার আসুন। ২০২১ সালে তো ডেলি প্যাসেঞ্জারি করেছিল ওরা, তাতেও লাভ হয়নি। উনি আরও আসুন দু’-তিনবার। বিজেপি যখন হারবে, ভাল হবে।


রবিবার কৃষ্ণনগর থেকেই প্রচার শুরু করছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এতে কি আত্মবিশ্বাস বাড়ছে?


অবশ্যই আত্মবিশ্বাস বাড়ছে। দিদি আমাদের নেত্রী। উনি এখান থেকে প্রচার শুরু করছেন।



নির্বাচনের মুখে আপনার বাড়ি, দফতর মিলিয়ে চার জায়গায় তল্লাশি চালাল CBI? তলব করছে ED. আপনি কি ভয় পাচ্ছেন?


ভয় কী জিনিস, আমি সত্যিই জানি না। আমি তো বলছি, বিজেপি, প্রধানমন্ত্রী এবং যত তদন্তকারী সংস্থা আছে, তারা আমার প্রতি আকর্ষিত। তাই বার বার আমার কাছে আসে। CBI এসেছে, চারটি পর্যবেক্ষণও তুলে ধরেছে, তাতে লেখা হয়েছে, অপরাধমূলক কিছু পাওয়া যায়নি, কিছু বাজেয়াপ্ত হয়নি, কোনও নথি পাওয়া যায়নি। তাই বাইরে গিয়ে কিছু বলেনি, চুপচাপ পালিয়ে গিয়েছে। আমি তো বলছি, যত বার আসার আসুক। আমার কোনও সমস্যা নেই। আমার কাজ প্রচার করা, নির্বাচনে জেতা। আমি আমার কাজ করব। ED, CBI, বিজেপি-র কথায় কাজ করছে। তারা তাদের কাজ করছে, আমি আমার কাজ করব। মেরুদণ্ড সোজা যাদের, তাদেরই শেষ করতে চাইছে এরা।


আমার রাজনৈতিক জীবন শুরু হওয়ার আগে জরুরি অবস্থা ছিল বলে শুনেছি। সেটা কী ছিল জানি না, আমার মা-বাবার মুখে শুধু শুনেছি। কিন্তু আজ ভারতীয় গণতন্ত্রের টুঁটি চেপে ধরা হচ্ছে। আজ রাষ্ট্রপুঞ্জ, আমেরিকা, জার্মানি, সবাই প্রশ্ন তুলছে ভারতে কী হচ্ছে বলে। নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রীকে বাড়ি থেকে তুলে গ্রেফতার করছেন আপনি, ED-র ৮৫ শতাংশ মামলা বিরোধীদের বিরুদ্ধে, ১৪২ সাংসদকে সাসপেন্ড করলেন আপনি, প্রধান বিরোধী দলের উপর ১৭০০ কোটির আয়কর চাপাচ্ছেন, রোজ রোজ এগুলো করছেন। মানুষ কি দেখছেন না? আসলে আমাদের যেমন মহিলা শাখা, ছাত্রযুব সংগঠন রয়েছে, এখন ED, CBI, NIA, IT এখন বিজেপি-র সংগঠন হয়ে গিয়েছে। নির্বাচন কমিশনেরও ঠিক সেই অবস্থা। আগে ভাবতাম কমিশন নিরপেক্ষ। এখন কমিশনার নিয়োগের পদ্ধতিতে, একদিকে অধীরদা, আর একদিকে নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহ। বিজেপি যাঁকে চাইবে, তিনিই নিযুক্ত হবেন। ভারতে নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান বলে আর কিছু নেই। এখনও মাথা তুলে দাঁড়িয়ে এর বিরোধিতা করছি বলেই আমাদের হেনস্থা করা হচ্ছে।


শুভেন্দু অধিকারী একধাপ এগিয়ে বলছেন মহুয়া মৈত্রকে গ্রেফতার করা উচিত। আপনি কি গ্রেফতারির আশঙ্কা করছেন?


আমার জীবনে এত অবনতি হয়নি যে শুভেন্দু অধিকারীর কথার উত্তর দিতে হবে। এই জমানায় বিজেপি কী জিনিস তা দেখানোর জন্য যদি আমাদের গ্রেফতারও হতে হয়, তাতে আমরা সবাই রাজি। কৃষ্ণনগর আসন তৃণমূলের, আগামী দিনে তৃণমূলেরই থাকবে। ব্যবধান আরও বাড়িয়ে ঝামা ঘষে দিতে হবে বিজেপি-র মুখে।


আপনার বিরুদ্ধে যিনি প্রার্থী, তিনি রাজপরিবারের বধূ। রাজনীতিতে নবাগতা। আপনি পোড় খাওয়া রাজনীতিক। আপনার লড়াইটায় তাহলে কি সুবিধা হয়ে গেল, নাকি রাজবাড়ির বধূর জন্য চাপ হয়ে গেল?


সাংবিধানিক গণতন্ত্রে রাজা একজনই, রাজা রামমোহন রায়, রানি শুধু রানি রাসমণি। আর কোনও রাজা-রানির গুরুত্ব জানি না। আর যিনিই প্রার্থী হোন না কেন, ব্যক্তিগত ভাবে তাঁকে নিয়ে আলোচনার কোনও জায়গা নেই আমার কাছে। এখানে আমার বিরুদ্ধে প্রার্থী বিজেপি দলটি।


সন্দেশখালি কাণ্ড নিয়ে প্রচার করছে বিজেপি। আপনিও তো প্রচারে বেরোচ্ছেন। সন্দেশখালি নিয়ে কি প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে আপনাকে? বিশেষ করে মহিলা ভোটাররা কি প্রশ্ন তুলছেন?


না। সন্দেশখালির ঘটনা বিজেপি ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে তুলে ধরেছে। বাংলার মানুষ এটা জানেন। আমাকে এ নিয়ে কোনও প্রশ্নেরই মুখোমুখি হতে হয়নি।