কলকাতা: লোকসভা নির্বাচনের মুখে নির্বাচনী বন্ড নিয়ে সরগরম রাজনীতি। ১ হাজার ৬০৯ কোটি টাকা চাঁদা পাওয়া তৃণমূলকেও সেই নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে। বিজেপি-র পরই সর্বোচ্চ চাঁদাপ্রাপক হিসেবে তালিকায় নাম রয়েছে জোড়াফুল শিবিরের। সেই নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়ে তৃণমূল জানাল, তৃণমূল ভবনে ড্রপ বক্স রাখা থাকত। যিনি যা টাকা দিতেন, সব ওই ড্রপ বক্সে জমা পড়ত। নির্বাচনী বন্ড দাতার নাম জানত না দল। (TMC Electoral Bonds)


নির্বাচনী বন্ড নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়ে বৃহস্পতিবার সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন কুণাল ঘোষ। তিনি বলেন, "তৃণমূল ভবনে ড্রপ বক্স থাকত। যিনি যা দিতেন, ড্রপ বক্সে জমা পড়ত। যাঁরা দিতে চেয়েছেন, তাঁরা দিয়ে গিয়েছেন। কোড ছাড়া কারও নাম ছিল না।বন্ড নিয়ে আইন এনেছেিলবিজেপি। সেই আইন আমরা মেনেছি মাত্র।" (Electoral Bonds) কারও ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে নয়, নিয়ম মেনেই দলের অ্যাকাউন্টে ওই টাকা জমা পড়ে বলে জানান কুণাল।


সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে সম্প্রতি নির্বাচনী বন্ড সংক্রান্ত বিশদ তথ্য জমা দেয় স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া। সেই তথ্য নিজেদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন, যাতে নির্বাচনী বন্ডের নম্বর মিলিয়ে দাতা এবং প্রাপকের পরিচয় পাওয়া গিয়েছে। ওই তথ্য মিলিয়ে দেখা গিয়েছে, নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা চাঁদা পেয়েছে বিজেপি। তালিকায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ চাঁদাপ্রাপক তৃণমূল। তারা ১ হাজার ৬০৯ কোটি টাকা চাঁদা পেয়েছে। 


আরও পড়ুন: India Summons German Envoy: কেজরিওয়ালের গ্রেফতারিতে গণতান্ত্রিক নীতির উল্লেখ জার্মানির, ‘অযাচিত হস্তক্ষেপ’ বলছে দিল্লি


তৃণমূলকে যে সমস্ত ব্যক্তি এবং কর্পোরেট সংস্থা চাঁদা দিয়েছে, তার মধ্যে 'লটারি কিং' সান্টিয়াগো মার্টিনের সংস্থার ফিউচার গেমিং অ্য়ান্ড হোটেল সার্ভিসেস সবচেয়ে এগিয়ে। তৃণমূলকে মোট ৫৪২ কোটি টাকা চাঁদা দিয়েছে তারা। বাংলায় জনপ্রিয় 'ডিয়ার লটারি'র মালিকও সান্টিয়াগোই। তাঁর সংস্থা থেকে চাঁদা গিয়েছে DMK, YSR কংগ্রেস এবং বিজেপি-র কাছেও। তবে মোট চাঁদার ৪০ শতাংশ তৃণমূল একাই পেয়েছে।


কিন্তু কোয়েম্বাত্তূরের সংস্থা কেন বাংলার শাসকদলকে এত টাকা চাঁদা দিল, সেই নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। জবাব দিতে গিয়ে কুণাল বলেন, "নিয়ম মেনেই ড্রপ বক্স রাখা ছিল। সেখান থেকে যা পাওয়া গিয়েছে, ব্যাঙ্কে জমা দিয়ে টাকা ভাঙানো হয়েছে। যা হয়েছে, নিয়ম মেনেই হয়েছে। হতে পারে তৃণমূলের কাজ ভাল লেগেছে বলেই চাঁদা দিয়েছেন কেউ। আরও নানা কারণ থাকতে পারে।"


বিজেপি-র আনা আইনের উল্লেখ করেছে তৃণমূল। তবে বিজেপি নেতা রাহুল সিনহার কথায়, "চোরের কাছে যখন রাস্তা না থাকে, কিছু একটাকে সম্বল করে বাঁচতে চায় দুর্নীতিগ্রস্তরা। এমন অদ্ভুত যুক্তি, অদ্ভুত কথা...ওদের ওই অফিসে কম লোক যায়। কত টাকা করে দিলে তবে এই বিপুল টাকা হয়, সেই অঙ্ক গুলিয়ে ফেলেছে। এমন ধাক্কা খেয়েছে অসত্য দিয়ে সত্যকে ঢাকতে চাইছে।"


সিপিএম সাংসদ বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, "ওদের সবাই নাকি সৎ! টাকাটা ফেরত দিয়ে দিন না! সুপ্রিম কোর্ট যেখানে অসংবিধানিক বলেছে, তার মানে আইনটা খারাপ। বেআইনি টাকা না নিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে তো তৃণমূল! সেই সাহস নেই। ওই টাকা দিয়ে দুর্নীতিমূলক কাজ করেছে, বিরোধীদের কণ্ঠস্বর রোধ করেছে। এখন আর কিছু জানে না। স্কুলের মতো ড্রপ বক্সে ফেলে গিয়েছে। কারা দিয়েছে টাকা? যারা সুবিধা পেয়েছে।"


শুধু ফিউচার গেমিংই নয়, তৃণমূলকে মোটা টাকা চাঁদা দিয়েছে শিল্পপতি সঞ্জীব গোয়েঙ্কার সংস্থাও। তারা ৪৫৯ কোটি টাকা দিয়েছে তৃণমূলকে। কেভেন্টার দিয়েছে ৬৬ কোটি, ধারিওয়াল ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড থেকে ৯০ কোটি টাকা প্রাপ্তি তৃণমূলের, এমকেডি এন্টারপ্রাইজেস ৪৫ কোটি ৯ লক্ষ, অ্যাভিস ট্রেডিং ট্রেডিং থেকে সাড়ে ৪৫ কোটি, আইএফবি অ্যাগ্রো ৪২ কোটি, চেন্নাই গ্রিন উডস ৪০ কোটি, পিসিবিএল লিমিটেড থেকে ৪০ কোটি, প্রারম্ভ সিকিওরিটিজ থেকে ৩৮ কোটি ৭৫ লক্ষ, ক্রিসেন্ট পাওয়ার থেকে ৩৩ কোটি টাকা চাঁদা পেয়েছে তৃণমূল।