কলকাতা : ভোটের ময়দানে হাজারো তরজা। 'তৃণমূলের বিরুদ্ধে তো আমি লড়াই করেছি', দিলীপ ঘোষের এই মন্তব্যের পরই, এবার তাঁকে তাঁর আসন বদল নিয়ে খোঁচা দিলেন তৃণমূলের সোশাল মিডিয়া সেলের ইনচার্জ তথা তমলুকের তৃণমূল প্রার্থী দেবাংশু ভট্টাচার্য। বিজেপির প্রাক্তন সভাপতিকে 'সহানুভূতি' জানিয়ে আরএসএসে ফিরে যাওয়ার পরামর্শ দিলেন তৃণমূলের তরুণ এই মুখ। 


পাল্টে গেছে দিলীপ ঘোষের আসন। প্রাক্তন রাজ্য সভাপতিকে গতবারের জেতা মেদিনীপুর থেকে সরিয়ে বর্ধমান-দুর্গাপুরে প্রার্থী করেছে বিজেপি। তৃণমূল প্রার্থী কীর্তি আজাদের বিরুদ্ধে তাঁকে ময়দান নামিয়েছে গেরুয়া শিবির।  আসন পরিবর্তনের ফলে অসন্তোষের স্পষ্ট ইঙ্গিত দিলেও, নতুন কেন্দ্রেও নতুন উদ্য়মে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন দিলীপ। এই আবহে এদিন তিনি মন্তব্য করেন, 'তৃণমূলের বিরুদ্ধে তো আমি লড়াই করেছি। আর কে পশ্চিমবঙ্গে লড়াই করেছে ? সিপিএম-কংগ্রেস ছিল। এখন সেটিং বলছে। চিরদিন সেটিং করেছে। তাই দোকান উঠে গেল। দিলীপ ঘোষ লড়াই করেছে। দিলীপ ঘোষ লড়াই করেছেন বলে...যাঁদের দেখছেন এঁরা সবাই বিজেপির ছিল না। এঁরা তৃণমূলকে হারাতে দিলীপ ঘোষের সঙ্গে এসেছেন। আজ আমাদের লক্ষ লক্ষ কর্মী রয়েছেন। তাঁরা সিপিএম করেছেন, কংগ্রেস করেছেন। মার খেয়ে, দুর্নীতি দেখে আজ বিজেপির ঝান্ডার নীচে এসেছেন। এখানে পরিবর্তনের জন্য।'


তাঁর এই মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে খোঁচা দিতে ছাড়েনি তৃণমূল। দলের তরফে দেবাংশু ভট্টাচার্য বলেন, 'অন্যতম গুরুত্ব হারানো নেতার নাম দিলীপ ঘোষ। তাঁর সবথেকে বড় প্রমাণ হচ্ছে, নিজের সিট। সুকান্ত মজুমদার যদি নিজের আসন ধরে রাখতে পারেন...। এটা বিশ্বাস করেন, ২০২৬-এ যদি বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বলেন, শুভেন্দু অধিকারী নন্দীগ্রাম থেকে লড়বেন না, আপনাকে অন্য সিটে লড়তে হবে। শুভেন্দু অধিকারী সেটা মেনে নেবেন ? যদি এঁদের ক্ষেত্রে এই বিষয় চলতে পারে। তাহলে দিলীপ ঘোষের ক্ষেত্রে কেন নয় ? কেন তাঁকে তাঁর নিজের আসন দেওয়া হল না মেদিনীপুরে ? তাঁকে বর্ধমান-দুর্গাপুরে টেনে নিয়ে আসা হল, একটা কঠিন লড়াইয়ে। যেখানে তিনি হারবেন। সেটা তিনি নিজেও জানেন। ফলে, তাঁর অভিমান হওয়াটা স্বাভাবিক। দিলীপ ঘোষের জন্য আমাদের সহানুভূতি রইল। আমরা দিলীপবাবুকে সাজেস্ট করতে চাই, এই দল আপনি করবেন না। আপনি আরএসএসে ফিরে যান। এটাই আপনার জন্য সম্মানের। '   


বিজেপির প্রথম তালিকায় দিলীপ ঘোষের নাম না থাকায় জল্পনা শুরু হয়েছিল, তাঁকে তাঁর পুরনো কেন্দ্র মেদিনীপুর থেকেই প্রার্থী করা হবে তো! প্রথম তালিকায় নাম না থাকলেও নিজের কেন্দ্রেই পড়ে ছিলেন দিলীপ ঘোষ। যদিও শেষমেশ তাঁকে সেই আসন থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।


২০১৬ সালে প্রথমবার ভোটে লড়েই, খড়গপুর সদরে কংগ্রেসের ১০ বারের বিধায়ক জ্ঞান সিং সোহনপালকে হারিয়ে 'জায়েন্ট কিলার' হয়েছিলেন দিলীপ ঘোষ! তারপর মেদিনীপুর কেন্দ্র থেকেই প্রথমবার পা রেখেছিলেন লোকসভায়। দিলীপ ঘোষের হাত ধরেই পশ্চিমবঙ্গ থেকে ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে রেকর্ড ১৮টি আসন জিতেছিল বিজেপি। তারপর অবশ্য় একে একে রাজ্য় সভাপতি, তারপর সর্বভারতীয় সহ সভাপতির পদও হারিয়েছেন তিনি। 


দীর্ঘদিন ধরেই জোর জল্পনা যে বঙ্গ বিজেপিতে দিলীপ ঘোষ এখন কিছুটা কোণঠাসা। এবার তাঁকেই জেতা আসন থেকে সরিয়ে অন্য় জেলায় পাঠিয়ে দিয়েছে বিজেপি। তাঁর জায়গায় মেদিনীপুর কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী করেছে শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করা অগ্নিমিত্রা পালকে।