কৃষ্ণনগর: লোকসভা নির্বাচনের প্রচার শুরু করে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। রবিবার মহুয়া মৈত্রের (Mahua Moitra) হয়ে প্রচারে কৃষ্ণনগরে প্রচারে গিয়েছেন তিনি। সেখানে মহুয়ার হয়ে জনসমর্থন চাওয়ার পাশাপাশি, জাতীয় স্তরে বিজেপি বিরোধী I.N.D.I.A জোট নিয়েও মুখ খুললেন মমতা। জানালেন, I.N.D.I.A জোটের নামটাও তাঁর দেওয়া। নির্বাচন মিটলে বাকিটাও দেখে নেবেন তিনি।  (I.N.D.I.A Alliance)


মার্চের মাঝামাঝি বাড়িতে পড়ে গিয়ে কপালে আঘাত পান মমতা। তার পর থেকে জনসমক্ষে সেভাবে দেখা যায়নি তাঁকে। লোকসভা নির্বাচনের প্রচারকাজে এযাবৎ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কেই দেখা যাচ্ছিল। কিন্তু রবিবার কৃষ্ণনগর থেকে প্রচার শুরু করলেন মমতা। আর সেখানে দাঁড়িয়েই I.N.D.I.A জোট নিয়ে মুখ খুললেন। (Lok Sabha Elections 2024)


এদিন মমতা বলেন, "কেন তৃণমূলকে ভোট দেবেন, আর কেন বিজেপি-কে দেবেন না, কেন সিপিএম-কংগ্রেসকে ভোট দেবেন না, সেই কথাই বলব আমি। I.N.D.I.A জোট আমি তৈরি করেছি। নামটাও আমার দেওয়া। ভোটের পর আমি দেখে নেব। কিন্তু বাংলায় সিপিএম, বিজেপি, কংগ্রেস আমাদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। সিপিএম-কংগ্রেস আর একটা যে লেজুড় পার্টি হয়েছে, তাদের ভোট দেওয়ার অর্থ বিজেপি-কে ভোট দেওয়া। আর বিজেপি-কে ভোট দিলে তো বিজেপি-কেই দেওয়া। লড়ছি আমরা একলা। যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে, একলা চলো রে।"


আরও পড়ুন: Lok Sabha Election 2024: অষ্টম প্রার্থীতালিকা প্রকাশ, সানি দেওলের আসনে কাকে টিকিট বিজেপির ?


মমতা আরও বলেন, "শুনলাম সিপিএম-কংগ্রেস এখানে I.N.D.I.A জোটের হয়ে লড়ছে বলছে। এখানে তো জোটই হয়নি! এখানে ঘোঁট হয়েছে। সিপিএম, কংগ্রেস, বিজেপি একদিকে, আর তৃণমূল একদিকে।" মমতার এই মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় সিপিএম-এর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, "মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়র কথার উত্তর দেওয়া আমার পক্ষে কঠিন। উনি এত অসত্য বলেন...বিজেপি নেতারা তৃণমূলের সাংসদ প্রার্থী। এঁদের কালো কাপড়ে মুখ ঢাকা উচিত। আজ দিল্লিতে সকলে মিলে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের গ্রেফতারির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। সেখানে যাওয়ার সাহস পাননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।"


কংগ্রেস নেতা সৌম্য আইচ রায়ের কথায়, "মুখ্যমন্ত্রী যা বলছেন, তা রাজভবনের এফেক্ট। কেজরিওয়ালের জন্য সকলে একজোট হয়ে লড়ছেন। অসুস্থ সনিয়া গাঁধীও গিয়েছেন। কিন্তু পিসিমণি এবং ভাইপো যাননি। বিজেপি-র বিরুদ্ধে কতটা বলা যাবে, আর কতটা না, তা আগে থেকে ঠিক হয়ে রয়েছে।" যদিও বিজেপি নেতা রাহুল সিনহার কথায়, "আসলে কংগ্রেস এবং সিপিএম-এর সঙ্গে একজোট হতে লজ্জা পাচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই আলা থেকে লড়াই করছেন। আসলে কিন্তু ওরা তৃণমূলের হয়েই লড়ছে। বলছে, বিজেপি-কে হারাতে হবে। নজর ঘোরাতে এখন ওই পাপ বিজেপি-র ঘাড়ে চাপাতে চাইছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।"


এদিন মমতা আরও বলেন, "তৃণমূলকে কেন ভোট দেবেন? লক্ষ্মীর ভাণ্ডার পান তো। মাসে মাসে পেয়ে যাবেন। সারাজীবন পাবেন। মোদিকে এখন ঝুটা কথা বলতে হচ্ছে। জুমলা পার্টি বিজেপি। দেওয়াললিখন দিচ্ছে ৩০০০ দেবে। আমি বলি আগে ১০০ টাকা দিয়ে দেখা। এতদিন কেন দিসনি? এটা আমাদের করা। তোমাদের নয়। আজ পর্যন্ত না মেয়ে, না ছেলে, না কৃষক, না হিন্দু, না মুসলিম, না শিখ, না মতুয়াদের জন্য, কারও জন্য কিছু করোনি।"


লোকসভা নির্বাচনের আগে সিবিআই, ইডি দিয়ে তৃণমূলকে হেনস্থা করা হচ্ছে বলেও এদিন অভিযোগ তোলেন মমতা। তিনি বলেন, "রোজ NIA চলে যাচ্ছে আমাদের যারা ভোট করে তাদের বাড়িতে। সিবিআই, ইডি চলে যাচ্ছে। একজনের বাড়িতে আয়কর হানা দিয়েছিল। জিজ্ঞেস করলাম, তিনদিন ধরে কী করল। জানাল, তিন  দিন ধরে শৌচাগারে যেতে পারেনি কেউ, রান্না হয়নি। নিজেরা খাবার বিল আনছে ২০-২৫ হাজার টাকা করে। অথচ সেই বাড়ির বাচ্চাটা খেয়েছে কিনা, দেখার নাম নেই।"


এবারের লোকসভা আসনের আগে NDA জোটকে ৪০০ আসনের লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি। সেই নিয়েও এদিন আক্রমণ শানান মমতা। তাঁর প্রশ্ন, "বিজেপি বলছে ৪০০-র উপর আসন পাবে। তাহলে ইডি, সিবিআই, আয়করকে দরকার পড়ছে? রাজ্যের অফিসারদের কেন বদলি করা হয়? যিনি বিয়ে করবেন, তিনিই পুরোহিত এখানে। নির্বাচন করছে বিজেপি। এটা কেন্দ্রের নির্বাচন। যাদের নির্বাচন, নিজেদের জেতার জন্য তারাই সব করাচ্ছে। জিতবে না। বাংলায় গোহারা হারবে লিখে নিন। আমি চ্যালেঞ্জ করছি, ২০০ আসন পার করে দেখাক আগে। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনেও ২০০ পার করবে বলেছিল, কিন্তু ৭৭-এ আটকে গিয়েছিল। আপনাদের হারাতে হবে ওকে। ওরা এলে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, বিনা পয়সার রেশন, কন্যাশ্রী সব বন্ধ হয়ে যাবে। আমরা থাকলে সব থাকবে।" মমতার কথায়, "মোদির গ্যারান্টি জিরো, আমাদের গ্যারান্টি মানুষই হিরো।"