কলকাতা: মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি লিখে বনমন্ত্রীর পদ ছাড়লেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। ঠিক ভোটের আগে এমন আঘাতের পর তৃণমূলের কুণাল ঘোষ মন্তব্য করেছেন, রাজীবের এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাশিতই ছিল। ডোমজুড়ে দল ১০,০০০ ভোটে জিতবে, রাজীব কিচ্ছু করতে পারবেন না। আবার বৈশালী ডালমিয়া বলেছেন, রাজীব দক্ষ প্রশাসক ছিলেন, একে একে হাওড়া জেলা ছেড়ে সবাই চলে গেল।

রাজীব সেচমন্ত্রীর পদ ফেরত পেতে চাইছিলেন। উনি যা চেয়েছিলেন তা দেওয়া সম্ভব ছিল না। প্রশাসনিক কোনও কাজ করছিলেন না, মন্ত্রিসভার বৈঠকেও আসছিলেন না। বললেন তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়। রাজীবের ক্ষোভ প্রশমনে তাঁর সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করে তৃণমূল। সৌগত বলেছেন, ওঁকে বোঝানোর অনেক চেষ্টা হয়েছে, তারপরেও ক্ষোভ প্রশমিত না হলে কী আর করা যাবে! উনি যে পদত্যাগ করবেন তা তো বোঝাই যাচ্ছিল, পুরোপুরি বসে গিয়েছিলেন। দলই হয়তো ওঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিত, তার আগে পদত্যাগ করেছেন ভাল হয়েছে। ফেসবুক লাইভে যা বলেছিলেন তা তো মন্ত্রিসভাতেই বলতে পারতেন। তা না করে ফেসবুক লাইভে মুখ খুলে শৃঙ্খলাভঙ্গ করেছেন, তারপরেও দল কোনও ব্যবস্থা নেয়নি।

আবার সৌগতের থেকেও রাজীবের প্রতি তীব্রতর আক্রমণ শানিয়েছেন তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। তিনি বলেছেন, রাজীবের কহি পে নিগাহে কহি পে নিশানা। ভোটের আগে মন্ত্রিসভা ছেড়েছেন, ভাল থাকুন। দল সাংগঠনিক ক্ষমতা দিয়েছে, নেতৃত্বের সুযোগ দিয়েছে, তারপরেও এখন এই পরিস্থিতিতে বিধানসভা ভোটের ঠিক আগে মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দিলেন তিনি। তাঁর কথায়, আমি কুণাল ঘোষ সব থেকে বেশি অত্যাচারিত হয়েছি, আমি মাথা উঁচু করে দলে ফিরেছি। অথচ সে সময় যারা মন্ত্রী ছিল তারা নাকি ক্ষুব্ধ। আমি যখন জেলে ছিলাম, তখন রাজীব কারামন্ত্রী, আমাকে দেখতে জেলেও গিয়েছিলেন। কই তখন তো আমার অবস্থা দেখে তাঁর দুঃখ হয়নি। তাঁর দাবি, ডোমজুড়ে তৃণমূল অন্তত ১০,০০০ ভোটে জিতবে। হাওড়ায় তৃণমূলের জয়রথ অব্যাহত থাকবে।

তিনি আরও বলেছেন, আশা করব, রাজীব সব সিদ্ধান্ত ভেবেচিন্তে নেবেন, তৃণমূলের মত ধর্মনিরপেক্ষ দল করে কোনও ধর্মান্ধ দলে তাঁর যোগ দেওয়া উচিত হবে না।

যদিও একেবারে উল্টো কথা বলেছেন বৈশালী ডালমিয়া। তিনি বলেছেন, রাজীবের পদত্যাগই প্রমাণ করে তৃণমূলে এখন ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি অবস্থা। রাজীবের মত দক্ষ প্রশাসক মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দিলেন, তা অত্যন্ত দুঃখের ব্যাপার, এতে আমরা মর্মাহত। বৈশালী আরও বলেছেন, লক্ষ্মীরতন শুক্ল মন্ত্রিত্ব ছাড়ার পরেও বলেছিলাম, দলে কিছু উইপোকা আছে। আমি অনেক দিন ধরে এদের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছি। এরা সবাইকে জ্বালাতন করছে, কাজ করতে দিচ্ছে না। অকারণে মানুষকে হেনস্থা করছে, সাধারণের কাছে পরিষেবা পৌঁছতে দিচ্ছে না। যে সব কাউন্সিলর- প্রাক্তন কাউন্সিলররা বেআইনি কাজ করছে, তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হলে সঙ্গে সঙ্গে তা বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। বৈশালীর আক্ষেপ, এই করে হাওড়া জেলাটা নষ্ট হয়ে গেল। মুখ্যমন্ত্রী এত খেটেছিলেন হাওড়ার পিছনে, একে একে সবাই চলে গেল।